ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নির্বাচনি ডামাডোলে সচিবালয়ে স্বস্তি

পদোন্নতি হচ্ছে, হুটহাট বদলি বন্ধ
নির্বাচনি ডামাডোলে সচিবালয়ে স্বস্তি

জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসলেই প্রশাসনের ভেতরে টানাপড়েন তৈরি হয়। সেই টানাপড়েনের প্রভাব পড়ে মাঠপর্যায়ে। তবে আসন্ন দ্বাদশ সংসদ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র বাংলাদেশ সচিবালয়ে চাকরিজীবীদের মাঝে বইছে স্বস্তির হাওয়া। তারা দেশের উন্নয়ন প্রকল্প থেকে শুরু করে প্রশাসনিক সব কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নে এগিয়ে যাচ্ছেন।

প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজনীতি করার বিধান নেই এমন মন্তব্য করে কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে কর্মকর্তারা স্বস্তিতে আছেন। কারণ নির্বাচনকালীন সময়ে প্রশাসনের কর্মকর্তা নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে চলে যান। সেজন্য রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কমেছে। স্থানীয় রাজনীতিবিদের চাপে বদলিও বন্ধ হয়েছে। তবে নিয়মমাফিক প্রশাসনে পদোন্নতির ধারা অব্যাহত রয়েছে। এরইমধ্যে কয়েকজন কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত সচিব থেকে সচিব পদে পদোন্নতি এবং কিছু অধিদপ্তরে মহাপরিচালক পদে কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত অতিরিক্ত সচিব ড. মো. সহিদ উল্যাহকে সচিব পদে পদোন্নতি দিয়েছে সরকার। পরিকল্পনা বিভাগের সচিব সত্যজিত কর্মকারকে পদোন্নতি দিয়ে সিনিয়র সচিব করা হয়েছে। সর্বশেষ গতকাল সোমবার মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে যোগদান করেছেন মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন। এর আগে তিনি বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এছাড়াও গত ২৮ ডিসেম্বর মৎস্য অধিদপ্তরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (পরিকল্পনা ও জরিপ) পদোন্নতি পেয়ে মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দায়িত্ব পেয়েছেন সৈয়দ মো. আলমগীর।

জানা গেছে, ডিসি বা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা জনস্বার্থে নিয়োজিত। কিন্তু এরূপ জনস্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে কেউ কেউ প্রভাব বলয়ের রোষানলে পড়েন। তাদের প্রতি বিরূপ আচরণ করা হয়, নির্বাচনের সময়ে সেটি বন্ধ। কাজেই সব কিছু নিয়মের মধ্যেই করার চেষ্টা করছেন কর্মকর্তারা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার আগমুহূর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির ইস্যু নিয়ে কিছু কিছু কর্মকর্তা ভয়ের মধ্যে ছিলেন। তবে নির্বাচনি তপশিল ঘোষণার পর সেই ভয়ভীতি দূর হয়েছে। সরকারের চলমান উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে আগের মতোই কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন। ভিসা নিষেধাজ্ঞার মতো কঠির পরিস্থিতির মধ্যেও বিন্দুমাত্র বিচলিত নয় কর্মকর্তারা।

সরকারের বিভিন্ন সূত্র বলছে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর দেশের অস্থির পরিস্থিতি সামলে নিতে আগেভাগেই বেশকিছু পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। অর্থনৈতিক, খাদ্য ও জ্বালানি সংকট সমাধানের উপায় খুঁজতে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্র বলছে, জাতীয় নির্বাচনের আগে সব সচিবকে নিয়ে অনুষ্ঠিত এই বৈঠক ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে চলমান সংকট নিয়ে আলোচনা হয়। আবার আলোচ্য সূচির বাইরেও আলোচনা হয়েছে। এসব বৈঠক থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসে। সরকারি কার্য পরিচালনার পদ্ধতি, দক্ষতা এবং সরকারি সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য প্রশাসনিক ব্যবস্থার উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের দিকে তাগিদ দেওয়া হয়।

সরকারের বিভিন্ন দপ্তর থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, দেশে এখন অর্থনৈতিক সূচকের প্রায় সব কয়টি খারাপ অবস্থায় রয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরের প্রেক্ষাপটে দেশের অর্থনীতিকে সুসংহত রাখার বিষয়ে সব মন্ত্রণালয় সজাগ রয়েছে। দেশের মূল্যস্ফীতি এখন প্রায় এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ। মূল্যস্ফীতি নিয়ে ভবিষ্যতে স্বস্তির বার্তা জনগণকে দিতে চায় সরকার। অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকের হালনাগাদ তথ্য নিয়ে কাজ করছে মন্ত্রণালয়গুলো।

জানা গেছে, গ্যাস, কয়লা ও অপরিশোধিত তেলের সংকট নিরসনে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার বৈঠকে সাড়ে ১৮ লাখ মেট্রিক টন পরিশোধিত জ্বালানি তেল কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ওই বৈঠকে বলা হয়েছে, গত সেচ মৌসুমে গ্রীষ্মের বাড়তি চাহিদা মিলে এপ্রিলে সর্বোচ্চ বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৬ হাজার মেগাওয়াট। এবার সব মিলে ১৭ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট হতে পারে। অর্থাৎ গত বছরের সেচ মৌসুমের তুলনায় ১ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে। বাড়তি বিদ্যুৎ উৎপাদনে সব ধরনের জ্বালানি মজুতের কথা বলেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। চাহিদা অনুসারে ফার্নেস ও ডিজেল সরবরাহ করা যাবে বলে জানিয়েছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।

গত ১০ ডিসেম্বর কৃষিসেচ মৌসুমে জ্বালানি তেলের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে একটি ভার্চুয়াল আন্তঃমন্ত্রণালয় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, কৃষি সেচের জন্য জ্বালানি তেলের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে। বিদ্যুৎ বা জ্বালানি তেলের জন্য কৃষিকাজের ব্যাঘাত ঘটানো যাবে না। যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে জ্বালানি তেল সংশ্লিষ্ট জেলায় চাহিদামতো পৌঁছানোর উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। ২০২৩-২৪ সালের কৃষিসেচ মৌসুমে ডিজেল ১২, ৫০, ৩৫৫ মেট্রিক টন ও লুব অয়েল ৪৪,১২৩ মেট্রিকটন প্রাক্কলিত চাহিদা রয়েছে।

আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, এখন শুধু ক্ষণগণনার অপেক্ষা। দেশের অন্যান্য সেক্টরের মতো প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। কারণ নির্বাচনে জেলা প্রশাসকরা (ডিসি) রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। তারা বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। সচিবরাও বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। এছাড়া নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও সচিবদের নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। সংবিধানের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্বাচনের সার্বিক আয়োজন নির্বিঘ্ন করতে রিটার্নিং কর্মকর্তারা গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। সব মিলিয়ে নির্বাচনকে প্রশাসনিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত