ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিশ্বকে দেখাতে হবে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে : সিইসি

বিশ্বকে দেখাতে হবে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে : সিইসি

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিশ্বকে চমক দেখাতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। যেটি দেখে যে কোনো দেশ বাংলাদেশের ভোট দেখে প্রশংসা করবে। এবার দেশের ইতিহাসে সব থেকে ভালো সুষ্ঠু ও গ্রহণ যোগ্য ভোট করতে চায় সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।

গতকাল জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিটিকে দেখাতে হবে নির্বাচনটি অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। তিনি বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইন্টারন্যাশনাল ডাইমেনশন আছে। সেটাকে খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। কারণ ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিটির কাছে দেখাতে হবে নির্বাচনটা অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। সহিংসতাকে কোনোভাবেই বরদাস্ত করা উচিত না, এটা জনমনে ভীতির সৃষ্টি করে। দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের একটি অংশ নির্বাচন বর্জন করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, তারা শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনের বিরুদ্ধে নির্বাচনের বিপক্ষে বক্তব্য রাখছেন। এতে অসুবিধা নেই, তারা জনমত সৃষ্টি করতে পারেন। কিন্তু সহিংস পন্থায় যদি বিরুদ্ধাচরণ করা হয় বা যারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন তাদের যদি বাধা প্রদান করা হয়, তাহলে অবশ্যই সংকট দেখা দেবে। সেই সংকট মোকাবিলা আমাদের করতে হবে।

সিইসি বলেন, আমাদের কাজ কিন্তু সরকার গঠন করা নয়। আমাদের কাজ খুব সীমিত। নির্বাচনটা আয়োজন করে দিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করার ব্যবস্থা করা। নির্বাচনের মাধ্যমে যদি সরকার নির্বাচিত না হয় তাহলে অগণতান্ত্রিক সরকার গঠিত হওয়ার অবকাশ থাকে।

নির্বাচন পেছানো বিষয়ে সিইসি জানান, অনেকেই বলেন উনারা (কমিশন) নির্বাচনটা ৩ মাস পিছিয়ে দিলে ভালো হতো। কারণ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হয়নি। নির্বাচন ৩ মাস পিছিয়ে দেওয়ার এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের নেই। অনেকে মনে করেন নির্বাচন কমিশন অসীম ক্ষমতার অধিকারী। প্রয়োজনে ৩ মাস, ৩ বছর বা ৩০ বছর পিছিয়ে দিতে পারে। এগুলো সত্য নয়।

একই দিনে ৪৩ হাজার কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে তিনি বলেন, সর্বোচ্চ দায়িত্ব কমিশনকে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন কখনোই তার একক শক্তিতে নির্বাচন আয়োজন করতে পারে না। এ কারণেই আরপিওতে সুষ্পষ্ট করে বলা আছে, নির্বাচন পরিচালনা করতে কমিশন যেভাবে জনবল চাইবে রাষ্ট্র বা সরকার তা দিতে বাধ্য।

তিনি বলেন, এরপরও এটা ঐতিহাসিক সত্য, বাংলাদেশের নির্বাচন আজ পর্যন্ত স্থিতিশীল অবস্থানে এসে থিতু হতে পারেনি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সময়ের নির্বাচন দেখেছি। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হবে না বা হয় না। মোটামুটি যদি গ্রহণযোগ্য হয়, সেটা নির্বাচন। কারণ নিরুঙ্কুশ অর্থে সামান্যতম অনিয়ম যে হবে না, এটি কখনোই বলা যাবে না। কিছুটা উত্তপ্ত নির্বাচন হবে, কিছুটা গন্ডগোল হতে পারে। সহিংসতা হতে পারে। এগুলো খুব বেশি ধর্তব্যের মধ্যে পড়ে না। যেটা অসহনীয় সহিংসতা সেটা প্রতিরোধ করতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের চেষ্টা করতে হবে যতদূর সম্ভব নির্বাচনটাকে দৃশ্যমানভাবে স্বচ্ছ করে তুলতে হবে। দৃশ্যমানতার মাধ্যমে জনগণের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে হবে।

ভবিষ্যতের জন্য অনুকরণীয় ভোট করার আহ্বান জানিয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান বলেন, নির্বাচনটা ভবিষ্যতের প্রজন্মের জন্য, ভবিষ্যতে যারা নির্বাচন কন্ডাক্ট করবে তাদের জন্য অনুসরণীয়, অনুকরণীয় এবং মনে রাখার বিষয়বস্তু হয়।

ম্যাজিস্ট্রেটদের উদ্দেশে ইসি রাশেদা বলেন, আমরা কমিশন চাচ্ছি এবার ভোটটা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হবে। যেখানে ভোটাররা আসবে, তাদের অত্যন্ত মূল্যবান অধিকার, এ অধিকার প্রয়োগ করে তাদের যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেবে। এই জায়গায় আপনাদের সহযোগিতা চাই। সামান্যতম অপরাধ যারা করবে তাদের প্রতি আপনারা কখনোই ক্ষমাশীল হবেন না।

জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের উদ্দেশ্য করে নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বলেছেন, দৃশ্যমান একটা শাস্তি দেখাবেন যাতে জনগণ জানে, বুঝে যে এটা করলে শাস্তি হয়। আপনারা মাঠে থাকবেন। আপনারা দয়া করে কোথাও কোনো জায়গায় বসে থাকবেন না। আপনারা অবশ্যই ভ্রাম্যমাণ অবস্থায় থাকবেন।

তিনি বলেন, সামান্যতমও অপরাধ যারা করবে তাদের ক্ষমা করবেন না। কখনো কর্তব্যের প্রতি অবহেলা করবেন না। আপনি সাহসিকতা, নির্ভীকতার সঙ্গে করবেন।

দায়িত্ব পালন নিয়ে রাশেদা সুলতানা বলেন, বড় বোন হিসেবে আপনাদের বলতে চাই-আপনারা কিন্তু আপনাদের দায়িত্বটা খুব সুচারুভাবে পালন করবেন। সমন্বয় হয়নি, ভালো মতো কাজ করা হয়নি-বিষয়টি শুনলে আমি খুবই দুঃখ পাব। কারণ আমি আপনাদের বিচার বিভাগেরই একজন বড় বোন। আমি খুব লজ্জাও পাব।

তিনি আরো বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশনে আসার পর এ পর্যন্ত স্থানীয় বিভিন্ন নির্বাচন, উপ-নির্বাচন থেকে শুরু করে প্রায় ১২০০ নির্বাচন করেছি। প্রত্যেকটাতেই ছোট ছোট ঘটনা ছাড়া বড় ধরনের কোনো সহিংসতা, রক্তপাত কোনো কিছুই ঘটেনি।

এ নির্বাচন কমিশনার আরো বলেন, আমরা চাই বা না চাই এখানে অনেকগুলো অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকে। নির্বাচনে আচরণবিধি অমান্য হয়ে থাকে প্রার্থীর মাধ্যমে, পোলিং পারসোনালদের দ্বারা। অনেক সময় নির্বাচন প্রক্রিয়ায় আমরা যারা থাকি, তাদের উদাসীনতার কারণেও ব্যত্যয় হয়ে থাকে। এ ব্যত্যয়গুলো যদি ঘটতে থাকে, তাহলে নির্বাচনি পরিবেশ বজায় থাকে না।

এদিকে নির্বাচন কমিশন সচিব জাহাংগীর আলম বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন সবগুলো অপারেটরের ইন্টারনেট ফুল স্পিডে থাকবে। গতি স্লো হবে না । কতগুলো ভোটকেন্দ্রকে নেটওয়ার্কের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, আমাদের যতগুলো মোবাইল নেটওয়ার্কিং সিস্টেম আছে, সবগুলোই ফুল স্পিডে চালু থাকবে।

ভোটের দিন ইন্টারনেট স্লো হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আশা করি, না। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বলা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, আমরা যেহেতু একটা অথরিটি নিয়ে বলছি, সুতরাং তা বলা আছে কি না, এটা মুখ্য বিষয় হতে পারে না।

ইসি সচিব বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি ভোটের আগের দিন ৬ জানুয়ারি দেশবাসীকে জানাবেন ইসি। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।

জাহাংগীর আলম বলেন, ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ৬ জানুয়ারি বিকাল ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সংসদ নির্বাচন নিয়ে ‘মিট দ্য প্রেস’ আয়োজন করা হয়েছে।

ইসি সচিব আরো বলেন, আমরা মূলত নির্বাচন সংক্রান্ত সব বিষয় দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক, সাংবাদিক, মেহমান যারা আছেন তাদের সম্মুখে জানাতে চাই।

ইসি সচিব বলেন, স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট বিডি’ নামের যে অ্যাপ সম্প্রতি আমরা উদ্বোধন করেছিলাম, সেটা আমরা আপনাদের মাধ্যমে প্রচার করতে চাই। সেখানে কেন্দ্রভিত্তিক দুইঘণ্টা পরপর ভোট পড়ার হার জানা যাবে। ভোটকেন্দ্রের তথ্য এখনই জানতে পারছেন, কোনো ভোটারের ভোটকেন্দ্র কোনটি এবং লোকেশন কোথায়।

এক প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল পাওয়া গেলেও কেন্দ্রীভূত ফলাফল পাওয়া যাবে না। কেননা, পার্বত্য অঞ্চল বা মনপুরার মতো দুর্গম অঞ্চল থেকে কোনো কারণে ফলাফল পাঠাতে না পারলে ভোটের পারসেন্টেজে গরমিল হয়ে যেতে পারে। তবে সম্ভব হলে আমরা জানাব। ২০ শতাংশ ভোটকেন্দ্র এখনো নেটওয়ার্কের বাইরে। আমরা সেখানে বিজিবি, পুলিশের ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক ব্যবহার করব।

তিনি আরো বলেন, চরাঞ্চলে সমস্যা হলো নদীপথে আসতে কুয়াশার কারণে দেরি হয়। তবে ভেরিফাইড হোয়াটসঅ্যাপে যেন তথ্য নিয়ে বেসরকারি ফলাফল ঘোষণা করা যায়, সে চিন্তাভাবনা চলছে। কেননা, আমাদের আবহাওয়া অধিদপ্তরের যে পূর্বাভাস, তাতে দেখা যাচ্ছে সে সময় (ভোটের দিন) একটা মধ্যমানের শৈত্যপ্রবাহ থাকবে। নদী এবং সমুদ্র উপকূলীয় এলাকাগুলোয় ঘন কুয়াশা থাকতে পারে। সেজন্য আমরা বিকল্প চিন্তা করছি, কীভাবে হোয়াটস অ্যাপের মাধ্যমে ভোটের ফলাফল সংগ্রহ করতে পারি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত