ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ফরিদপুরে নির্বাচনি জনসভায় শেখ হাসিনা

ভোট দিয়ে জবাব দিন

দুর্নীতি করতে নয়, মানুষের ভাগ্য গড়তে এসেছি
ভোট দিয়ে জবাব দিন

দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভোটের দিন কেবল নিজে নয়, পরিবার-পরিজন নিয়ে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়ে অগ্নিসন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদী বিএনপি-জামায়াতকে উপযুক্ত জবাব দিন।

গতকাল মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৩টায় সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত নির্বাচনি জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচন ঘিরে অনেক ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত আছে। যারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সমর্থন দেয়নি, তাদের চক্রান্ত থেমে যায়নি। আর যেহেতু তারা জানে কারও কাছে আমরা মাথা নত করি না, সেজন্য চক্রান্ত আরও বেশি। আপনার ভোট আপনি রক্ষা করবেন আর অগ্নিসন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদী বিএনপি-জামায়াতকে উপযুক্ত জবাব দেবেন। ইনশাআল্লাহ, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ থামাতে পারবে না।

তিনি বলেন, আমাদের এখন উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে। এই দেশ গড়ে তুলতে হলে কাকে দরকার? আপনারা বলেন। কে ক্ষমতায় থাকলে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ গড়ে উঠবে? একমাত্র নৌকা মার্কা, নৌকা মার্কা যদি ভোট পায়, শুধুমাত্র নৌকা মার্কা ভোট পেলেই আমি সরকারে আসতে পারব। আর উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে গড়তে পারব। বাংলাদেশ কখনো পিছিয়ে যাবে না। এই নৌকা আপনাদের স্বাধীনতা দিয়েছে। এই নৌকাই পারবে মানুষকে উন্নত জীবন দিতে, শান্তি-সমৃদ্ধি দিতে। এই নৌকায় আপনারা ভোট দিয়েছিলেন বলেই আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ। নৌকায় ভোট দেবেন। ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলব। সেই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার পদক্ষেপ নেওয়ার জন্যই আজকের নির্বাচন। কাজেই এই নির্বাচনে ভোট দিয়ে আমাদের জয়যুক্ত করবেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমি বঙ্গবন্ধুর মেয়ে চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলাম পদ্মা সেতু করব, সেটা করেছি। কারও কাছে মাথা নত করব না। আওয়ামী লীগ দুর্নীতি করতে আসেনি, নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে আসেনি, এসেছে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে। বিশ্বব্যাংক যখন দুর্নীতির অভিযোগ দিয়েছিল, তখন আমি চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারেনি। আমি বঙ্গবন্ধুর মেয়ে, চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলাম পদ্মা সেতু করব, করেছি। বাঙালি কারও কাছে মাথা নত করবে না।

তিনি বলেন, একমাত্র নৌকা মার্কায় ভোট দিলেই আমি ক্ষমতায় আসতে পারব, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারব। এ মাটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাটি, এই মাটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি, নৌকার ঘাঁটি। ভোটারদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা ওয়াদা করেন নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে নৌকার প্রার্থীদের নির্বাচিত করবেন। তখন উপস্থিত জনতা সমস্বরে নৌকায় ভোট দেওয়ার সম্মতি জানান।

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, আমাদের দেশে একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। আমরা ব্যবসা-বাণিজ্য করার ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছি। অনেককে বলতে গেলে নর্দমা থেকে টেনে তোলা হয়েছে। তাদের পয়সা বানানো, ব্যবসা-বাণিজ্য করার সুযোগ দিয়েছি। মিডিয়া চালানোর সুযোগ দিয়েছি। এখন তারা টাকা ছড়ায়। তারা মনে করে টাকা দিয়েই সব কেনা যাবে। খুব ভালো কথা টাকা তারা ছড়াক। কারণ যত টাকা বানিয়েছে তা তো জনগণের হাতে যাবে। তবে একটা কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই- টাকা দিয়ে মানুষ কেনা যায় না। টাকা দিয়ে ফরিদপুরের জনগণকে কেউ কিনতে পারে নাই, পারবে না। সরকারপ্রধান বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে শিক্ষার হার অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এই শিক্ষার পেছনে বর্তমান সরকার অনেক টাকা খরচ করে যাচ্ছে। জাতির পিতা বলেছিলেন শিক্ষার পেছনে যেটা খরচ হয়, সেটা খরচ নয় বিনিয়োগ। আমাদের লক্ষ্যই দেশের মানুষের উন্নয়ন করা, সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বঙ্গবন্ধুর বাংলায় কোনো মানুষ ক্ষুধার্ত থাকবে না। দারিদ্র্য থাকবে না, গৃহহীন থাকবে না সেই লক্ষ্য নিয়ে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। প্রত্যেকটা মানুষের জীবন উন্নত করাই আমাদের লক্ষ্য। বয়স্ক ভাতা আওয়ামী লীগ প্রথম চালু করে। একুশ বছর পর সরকার গঠন করার পর দেশের মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরিয়ে আনে আওয়ামী লীগ। আর বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসেই জনজীবন বিপর্যস্ত করে তোলে। দেশের তৃণমূল, পিছিয়েপড়া জনগোষ্ঠীসহ তরুণ প্রজন্মকে আত্মনির্ভরশীল করতে সরকার কাজ করছে।

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, আজকে আমরা ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছি। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, কম্পিউটার, স্যাটেলাইট, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র, পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি। আপনারা জানেন, বিশ্ব ব্যাংক একটা চ্যালেঞ্জ দিয়েছিল দুর্নীতির। আমরা দুর্নীতি করতে আসিনি। নিজেদের ভাগ্য গড়তে আসিনি। এসেছি বাংলার মানুষের ভাগ্য গড়তে।

দেশের উন্নয়নে সরকারের অবদানের কথা উল্লেখ করে জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ২০০৮-এর নির্বাচনে ঘোষণা দিয়েছিলাম ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলব। আজকে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি। আট হাজারের বেশি ডিজিটাল সেন্টার দেশের মানুষকে সেবা দিচ্ছে। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

পতিত জমি ফেলে না রাখার আহ্বান জানিয়ে সবার উদ্দেশে এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। আপনাদের কাছে আহ্বান, কারও এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। যার যেখানে যতটুকু জমি আছে, যে যা পারেন উৎপাদন করেন। যদি জলাভূমি-পুকুর থাকে মাছ উৎপাদন করেন। হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল পালন করেন। আপনিও লাভবান হবেন, দেশও লাভবান হবে। সব বাধা উপেক্ষা করে পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাংক যখন অভিযোগ এনেছিল, আমি চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম। তারা প্রমাণ করতে পারেনি। আমি বলেছিলাম, আমরা নিজের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করব। অনেকে বিশ্বাস করতে পারেনি। আমার আত্মবিশ্বাস ছিল। আমি কখনও ভুলে যাই না, আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মেয়ে। জাতির পিতা দেশ স্বাধীন করে গিয়েছিলেন। এই জাতি কখনও কারও কাছে মাথা নত করবে না। আমরা নিজের টাকায় পদ্মা সেতু করে দিয়েছি। ফরিদপুর, মাগুরা ও রাজবাড়ী জেলার নির্বাচনি আসনের নৌকার প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেন শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি বলেন, নৌকা মার্কার প্রার্থীদের আপনাদের দিয়ে গেলাম। তারা আপনাদের সেবা করবে, গ্রামবাসীর সেবা করবে। আপনারা তাদের নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন। ‘তরুণ সমাজ বা তারুণ্যই হচ্ছে উন্নয়নের অগ্রদূত’ উল্লেখ করে তাদের ভোট প্রত্যাশা করেন শেখ হাসিনা। তিনি অন্যান্য নির্বাচনি জনসভার মতো প্রথমবারের মতো ভোটারদের নৌকায় ভোট দিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় শরিক হওয়ার আহ্বান জানান। ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ফরিদপুর-৩ আসনের নৌকার প্রার্থী শামীম হকের সভাপতিত্বে জনসভায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ফরিদপুর-১ আসনের নৌকার প্রার্থী আব্দুর রহমান, ফরিদপুর-২ আসনের প্রার্থী শাহাদাব আকবর লাবু চৌধুরী, মাগুরা-১ আসনের প্রার্থী সাকিব আল হাসান, রাজবাড়ী-১ আসনের প্রার্থী কাজী কেরামত আলী, রাজবাড়ী-২ আসনের প্রার্থী ঝিল্লুল হাকিম, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইসতিয়াক আরিফ, পৌর মেয়র অমিতাভ বোস প্রমুখ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত