ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

ভোটকেন্দ্রে নাশকতার শঙ্কা পাহারা দিবে আওয়ামী লীগ

* সারা দেশে ৪২ হাজার ৩৫০টি কেন্দ্র * ভোটার আনার দায়িত্বে সহযোগীরা
ভোটকেন্দ্রে নাশকতার শঙ্কা পাহারা দিবে আওয়ামী লীগ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র তিন দিন বাকি। আগামী রোববার সারা দেশে একযোগে ২৯৯টি আসনে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। সংবিধানের আলোকে ২৮টি রাজনৈতিক দল ভোটে অংশগ্রহণ করেছে। রয়েছে ৩৮২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থীও। তবে দ্বাদশের ভোট বর্জন করেছে বিএনপি ও তার মিত্ররা। শুধু ভোট বজর্ন নয়, প্রতিহতের ডাক দিয়েছে বিএনপিসহ ১৫টি রাজনৈতিক দল। এজন্য নানামুখী আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে ভোটবিরোধী দলগুলো। হরতাল ও অবরোধের মতো কর্মসূচি দিয়েছে; এবার জনসাধারণকে ভোটবিমুখ করতেও গণসংযোগ চালাচ্ছে।

বিএনপি-জামায়াতের ভোট বর্জনের কর্মসূচি ঘোষণার পর টানা কয়েক দিন; দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে নাশকতা করেছে রাজনৈতিক দুর্বিত্তরা। পোড়ানো হয়েছে সরকারি-বেসরকারি গণপরিবহন। উপড়ে ফেলা হয় রেললাইন। আগুন দেওয়া দিয়েছে পণ্যবাহী ট্রাকে। ভোটকে সামনে রেখে এক ধরনের ভয়ের পরিবেশ তৈরির পাঁয়তারা চলছে। এসব নাশকতা থেকে জনগণের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, সাধারণ মানুষকে ভোট থেকে বিরত রাখতে চায় বিএনপি-জামায়াত জোট। কতিপয় দলের ভোট প্রতিহত করার সিদ্ধান্ত দেশের রাজনীতিকে আরও বেশি অসুস্থ করে তুলবে। গণতান্ত্রিক পরিবেশকে দূষিত করবে। বাসে আগুন, পেট্রোল বোমা মেরে রাষ্ট্র ও জনগণের জানমালের ক্ষতি করা কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড হতে পারে না। নেতিবাচক এবং বিধ্বংসী রাজনীতি থেকে সবাইকে বেরিয়ে আসতে হবে। জানা গেছে, সারা দেশে ৩০০ আসনে ৪২ হাজার ৩৫০টি ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনকে ঘিরে ভোট কেন্দ্রগুলোতে নাশকতা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। তাদের মতে, নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসবে, বিএনপি-জামায়াত নির্বাচন বানচালে ততই মরিয়া হয়ে উঠবে। তাদের নাশকতার মাত্রা বিস্তৃত হতে পারে। তারা আগুন সন্ত্রাসের মাধ্যমে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে চাইছে। যাতে ভোটাররা কেন্দ্রে না আসে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে-পরে জ্বালাও-পোড়াও করেছে বিএনপি-জামায়াত। মানুষ হত্যা করে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করেছে। এবারও তারা নির্বাচনে না এসে, ভোট প্রতিহতের ঘোষণা দিয়ে চোরাগুপ্তা হামলা করছে। তবে কোনো বাধা বিপত্তি, হুমকি, নাশকতা, অগ্নি সন্ত্রাস দ্বাদশের নির্বাচনে বাধা হতে পারবে না। ভোটাররা স্বতঃস্ফূর্র্তভাবে কেন্দ্রে এসে ভোট দিবে। বিএনপি-জামায়াতের ভোটবিরোধী ডাকে সাড়া দেবে না।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, বিএনপি-জামায়াত ও স্বাধীনতাবিরোধীরা চোরাগোপ্তা হামলা করে ভোট বানচালের অপচেষ্টা করছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে-পরে জ্বালাও-পোড়াও করেছে বিএনপি-জামায়াত। মানুষ হত্যা করে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করেছে। তবে জনসাধারণের সাড়া পায়নি। এবারও বিএনপি-জামায়াতের ভোটবিরোধী কর্মসূচি হালে পানি পাবে না। জনগণ উন্নয়ন, সমৃদ্ধি ও স্মার্ট বাংলাদেশের পক্ষে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে। বিএনপি-জামায়াতের চোরাগোপ্তা হামলা ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সজাগ এবং সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। ভোটকেন্দ্রসহ সব জায়গায় তারা সতর্ক পাহাড়া দিবে। এছাড়া চোরাগোপ্তা হামলার বিরুদ্ধে প্রশাসনও তাদের মতো করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিবে।

জানা গেছে, জনসাধারণকে ভোটমুখী করতে আওয়ামী লীগ ও দলের সহযোগী সংগঠনগুলো কাজ করছে। স্থানীয় নেতাকর্মীদের মাধ্যমে ভোটকেন্দ্রভিত্তিক ইউনিট কমিটি গুছিয়ে এনেছে তারা। এ কমিটির নেতাকর্মীরা ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এসব কমিটির মাধ্যমে ভোটারদের সচেতন করা, ভোটকেন্দ্রে যেতে সহযোগিতা করা এবং দলীয় পোলিং এজেন্ট মনিটরিংয়ের কাজটিও করা হবে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতাও করবে। মূল দল আওয়ামী লীগসহ ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ আলাদাভাবে দেশের ৪২ হাজার ৩৫০ ভোট কেন্দ্রের প্রত্যেকটিতে কমিটি গঠন করেছে। যুব মহিলা লীগ, তাঁতী লীগ, মৎস্যজীবী লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগও নিজেদের মতো করে গুরুত্বপূর্ণ আসনগুলোতে কমিটি গঠন করে কাজ করছে। জানতে চাইলে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, স্থানীয় লোকজন নিয়ে কেন্দ্রভিত্তিক ইউনিট কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি ইউনিটে ১০০ জন করে নেতাকর্মী থাকবে। তারা নৌকার পক্ষে নির্বাচনি প্রচারণার কাজে অংশ নিবে। ভোটের দিন বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে আসবে। পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াতের অপরাজনীতির বিষয়ে নেতাকর্মীরা সতর্ক থাকবে।

ভোটারদের ভোটদানে উদ্ধুদ্ধ করতে ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করে দিয়েছে যুবলীগ। নির্বিঘ্নে ভোট দিতে আসা ও ভোট দিয়ে মানুষ যাতে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারে সে দায়িত্ব পালন করবে যুবলীগের কেন্দ্রভিত্তিক ইউনিট কমিটি। সারা দেশের পাশাপশি ঢাকায়ও ভোটের মাঠ চষে বেড়াচ্ছে যুবলীগের নেতাকর্মীরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এইচ এম রেজাউল করিম রেজা আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দক্ষিণে ৭৫টি ওয়ার্ডের ৫২৫টি কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি করা হয়েছে। প্রত্যেক কমিটিতে ২০ জনের মতো সদস্য রয়েছে। প্রত্যেক সদস্য ভোটের দিন বিশজন করে ভোটারকে কেন্দ্রে নিয়ে আসবে। এসব কমিটির নেতাকর্মীরা পাড়া-মহল্লায় অবস্থান নেবে। এলাকায় কেউ যাতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা করতে না পারে। কেউ যাতে ভোটারদের হুমকি ও তাদের কেন্দ্রে যেতে বাধা দিতে না পারে সে বিষয়েও লক্ষ্য রাখবে। আর ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগ ৮টি নির্বাচনি আসনে ১২১৪টি কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠন করেছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির দপ্তর সম্পাদক এএইচএম কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, কেন্দ্রভিত্তিক কমিটির নেতাকর্মীদের কাজ হচ্ছে, ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে আসা। আমরা কেন্দ্রগুলোতে ভোটারের সর্বোচ্চ উপস্থিতি চাই। তারা যাকে খুশি ভোট দিতে পারবে। তাতে আমাদের কোনো আপত্তি নাই।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, ৪৩ হাজার ভোটকেন্দ্রে আমরা কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠন করেছি। প্রতি কেন্দ্রে ন্যূনতম ২০ জন সদস্য রয়েছে। এছাড়া আমাদের জেলা ও বিভাগীয় সমন্বয় কমিটিও গঠন করা হয়েছে। এরা কেন্দ্র পাহারা দেবে, ভোটের পরিবেশ সৃষ্টিতে কাজ করবে। নৌকার পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেবে। কেউ সহিংসতার চেষ্টা করলে তা প্রতিহত করবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত