ভোটে গন্ডগোল চাই না, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রক্ষা করতে হবে

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নির্বাচনে কোনোরকম সংঘাত আমি চাই না। আমি চাই, এই নির্বাচনে সত্যিকারভাবে একটা অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। যে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণ তার পছন্দমতো প্রার্থীকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবে।

গতকাল বিকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ ভবন থেকে ৫টি জেলা ও একটি উপজেলায় আওয়ামী লীগের নির্বাচনি জনসভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন তিনি। এদিন রংপুর বিভাগের গাইবান্ধা জেলা, রাজশাহী বিভাগের রাজশাহী জেলা ও মহানগর, ঢাকা বিভাগের টাঙ্গাইল জেলা এবং চট্টগ্রাম বিভাগের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা, কুমিল্লা উত্তর-দক্ষিণ জেলা ও মহানগর এবং চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ উপজেলায় নির্বাচনি জনসভা করে আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনা বলেন, এই নির্বাচনে শান্তিপূর্ণভাবে মানুষ যার যার ভোটের অধিকার প্রয়োগ করবে, যার যার ইচ্ছামতো ভোট দেবে। এখানে কেউ কাউকে বাধা দিতে পারেন না। বিএনপির দুর্বৃত্তায়নের জবাব দিতে হবে। আপনার নৌকা ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে জয়যুক্ত করে এর জবাব দেবেন এবং উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখবেন। সেটাই আমরা চাই। বিভিন্ন জায়গায় আমাদের প্রার্থী আছে। আমরা নির্বাচনকে উন্মুক্ত করে দিয়েছি। আমার ভোট আমি দেব যাকে খুশি তাকে দেব, এটা আমাদের স্লোগান। আপনারা আপনাদের পছন্দমতো প্রার্থীকে ভোট দেবেন। তবে কোনোরকম গণ্ডগোল আমি চাই না। শান্তিপূর্ণ পরিবেশটা আমাদের রক্ষা করতে হবে। যা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে একটা মাইলফলক হয়ে থাকবে। আর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অগ্রযাত্রা সুগম হবে।

তিনি বলেন, ভোট চুরি করে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিল খালেদা জিয়া, কিন্তু থাকতে পারেনি। ভোট চুরি করলে জনগণ মেনে নেয় না। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়ার পতন ঘটে। ৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন হয়। তারপর পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। কিন্তু ওদের শিক্ষা হয়নি। তাই ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে আবারও ভোট কারচুপি, ভোট চুরি, জনগণের ভাগ্য নিয়ে খেলা শুরু করে। তাদের দুঃশাসনের কারণে দেশে ইমার্জেন্সি (জরুরি অবস্থা জারি) হয়।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য একান্তভাবে জরুরি। বাংলাদেশ নিয়ে অনেক রকম খেলা অনেকে খেলতে চায়। যারা স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাস করে না, জয় বাংলা স্লোগান যারা নিষিদ্ধ করে, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ যারা নিষিদ্ধ করে দেয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যারা ধ্বংস করে- তারা দেশটাকেই ধ্বংস করবে। দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলবে। সেটি যেন করতে না পারে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার ফলে একটা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে আসতে পেরেছি। দুর্ভাগ্যের বিষয় বিএনপি-জামায়াতের চরিত্র হচ্ছে দুর্নীতি করা, মানুষ খুন করা। তারা অগ্নিসন্ত্রাস করে মানুষ খুন করে, এর চেয়ে জঘন্য কাজ আর কিছু হতে পারে না। ২০১৩-১৪ সালের যেমন করেছে ঠিক এ নির্বাচনের আগে ভয়াল রূপ নিয়ে তারা মানুষের সামনে হাজির।

তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত অগ্নিসন্ত্রাস করে, ট্রেনে আগুন দেয়, তাদের দেওয়া আগুনে মা-শিশু পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে। এই দৃশ্য সারা বিশ্বকে নাড়া দিয়েছে। শুধু তাই না, রেললাইনের ফিশপ্লেট খুলেছে, বগি ফেলে দিয়ে এক্সিডেন্ট ঘটিয়ে মানুষ মারার ফাঁদ পাতে তারা। যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয়। চিফ জাস্টিসের বাড়িতে হামলা করেছে, জাজেস কোয়ার্টারে হামলা করেছে। সাংবাদিকদের পিটিয়েছে। পুলিশকে কীভাবে পিটিয়ে মেরেছে আপনারা দেখেছেন। এই ধরনের জঘন্য কর্মকাণ্ড তারা করেছে।

সরকার প্রধান বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি ৩০০ আসনের মধ্যে ৩০টি সিট পেয়েছিল। আওয়ামী লীগ ২৩৩ সিটে জয়ী হয়। আর অন্য সিটগুলো আমাদের জোটের শরিকরা পেয়েছিল। ২০০৮ সালে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হওয়ার পর ২০১৪ ও ২০১৮ সালেও জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকারে আসি। বাংলাদেশের ইতিহাসে ধারাবাহিকভাবে গণতন্ত্র এবং দেশের উন্নয়নে কাজ করার সৌভাগ্য আমাদের হয়। যার ফল আজকের বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। আমরা যে লক্ষ্য স্থির করেছিলাম, বাংলাদেশকে উন্নত করব, বাংলাদেশের মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষার ব্যবস্থা করে দেব, আমরা কিন্তু সেই বিষয়ে যথেষ্ট অগ্রগতি লাভ করেছি। আজকে দারিদ্র্যের হার কমিয়ে ১৮ দশমিক ৭ ভাগে আমরা নামিয়ে এনেছি। মাথাপিছু আয় আমরা বৃদ্ধি করেছি। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছি। হতদরিদ্রের হার ২৫.১ ভাগ থেকে ৫.৬ ভাগে নামিয়ে এনেছি। রাস্তাঘাট, পুল, ব্রিজ বাংলাদেশের ব্যাপকভাবে উন্নয়ন করা হয়েছে। মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টির জন্য বেসরকারি খাতকে উন্মুক্ত করে দিয়ে কর্মসংস্থান ব্যবস্থা করা হয়েছে। ৯৬ সাল থেকে যেটা শুরু করেছিলাম সেটা আরো প্রসারিত করেছি। প্রতিটি বড় বড় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়েছি। প্রতিটি উপজেলায় ভোকেশনাল ট্রেনিং এবং কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা করেছি।

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করব বলেছিলাম, আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ, এখন সবার হাতে মোবাইল ফোন আছে, ওয়াইফাই কানেকশন দিয়েছি। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ আমরা উৎক্ষেপণ করেছি। দারিদ্র্যের হার কমানোর পাশাপাশি বেকারত্বের হারও কমিয়েছি। এখন বাংলাদেশে বেকারত্বের হার মাত্র ৩ শতাংশ। সবাই যদি উদ্যোগ নেয় তাহলে যে কোনো কাজ করতে পারে।

এ সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।