চট্টগ্রামে শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় ব্যস্ত শতাধিক প্রার্থী। ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে ধরনা দিচ্ছেন তারা। আর প্রতিশ্রুতির বন্যায় ভাসাচ্ছেন ভোটারদের। কেউ বলছেন, নির্বাচিত হলে কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করবেন। কেউ নিজ নির্বাচনি এলাকায় শিল্প কারখানা স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। কেউ ভাঙা অচল সেতু মেরামতের প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন। সবার মূল প্রতিশ্রুতি একটাই নির্বাচিত হলে উন্নয়নের মাধ্যমে নির্বাচনি এলাকার চেহারা পাল্টে দেবেন।
এদিকে চট্টগ্রামের ১৬ আসনের মধ্যে তিন মন্ত্রী ও এক সংসদ সদস্যের আসন ছাড়া ১২ আসনেই জোরেশোরে প্রচারণা চালাচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তারাও নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন ভোটারদের। এসব আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ঘিরে চলছে নানা আলোচনা। নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসার সাথে পাল্লা ভারি হচ্ছে স্বতন্ত্র প্রার্থীর। তবে চার আসনে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থীরা একেবারে নির্ভার। এসব আসনে ফুরফুরে মেজাজে আছেন প্রার্থীর পক্ষে কাজ করা দলীয় কর্মী ও সমর্থকরাও। আসনগুলো হচ্ছে- চট্টগ্রাম-৬, চট্টগ্রাম-৭, চট্টগ্রাম-৯ ও চট্টগ্রাম-১৩ আসন।
চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে নৌকার প্রার্থী এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী। তিনি ছাড়াও পাঁচ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের কেউ নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে তেমন প্রচার প্রচারণায় নেই। প্রার্থীদের কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগও নেই। শান্তিপূর্ণভাবে চলে আসছে প্রচার প্রচারণা। এতে অনেকটা নির্ভার আছেন নৌকার প্রার্থী।
চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া-বোয়লখালী আংশিক) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তিনি ছাড়াও আরো পাঁজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এই আসনে। তারা প্রচারণায় থাকলেও নির্ভার আছেন তথ্যমন্ত্রী। ভোটের হিসেবেও এখনো এগিয়ে আছেন ড. হাছান মাহমুদ। তার এলাকায় ভোটের পরিবেশও শান্তিপূর্ণ আছে।
চট্টগ্রাম-৯ (বাকলিয়া-কোতোয়ালী) আসনে নৌকার প্রার্থী শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিনি ছাড়াও আরো ছয়জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এই আসনে। তবে ভোটের হিসাবে এগিয়ে আছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী। তার এলাকায় প্রচারণার পরিবেশও আছে শান্তিপূর্ণ। সাবেক মেয়র এবং নগর আওয়ামী লীগ নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর পুত্র নওফেল। তাই তার প্রতি এলাকার ভোটারদের একটা আবেগ জড়িয়ে আছে। ভোটারদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের সমর্থন রয়েছে। ভোটের হিসাবেও এগিয়ে আছেন তিনি।
চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসনে নৌকার প্রার্থী ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। তিনি ছাড়াও আরো ছয়জন প্রার্থী প্রচারণায় আছেন এই আসনে। তবে প্রার্থীরা তেমন সরব নন। ভোটারদের পাল্লা ভারি ভূমিমন্ত্রীর প্রতি। তিনিও নির্ভার আছেন বলে দলীয় নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন।
চার আসনের বাইরে বাকি ১২ আসনে জয়-পরাজয়ের হিসাব নিকাশ বেশ জটিল করে তুলেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ভোটের হিসাব ক্ষণে ক্ষণে বদলাচ্ছেন। এসব আসনে নৌকা ও জোটের প্রার্থীদের ছাপিয়ে জোরদার অবস্থান গড়ে তুলেছেন আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
বিশেষ করে চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) ও চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারি) আসনে জোট মনোনীত জাপার দুই প্রার্থীর অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়ছে। চট্টগ্রাম-৫ আসনে জোটের প্রার্থী জাপার ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং চট্টগ্রাম-৮ আসনে প্রার্থী সোলায়মান আলম শেঠের পক্ষে শুরু থেকেই ছিল না আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসলেও নেতাকর্মীদের চোখে পড়ছেনা শেঠের প্রচার কর্মসূচিতে। দুই প্রার্থীই আওয়ামী লীগের দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর শক্ত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন। চট্টগ্রাম-৮ আসনে প্রচারণায় এগিয়ে আছেন সিডিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুচ ছালাম। দলীয় নেতাকর্মীদের বেশিরভাগ তার পক্ষে প্রচার প্রচারণায় নেমেছেন। আবার চট্টগ্রাম-৫ আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহাম্মদ শাহজাহান চৌধুরী প্রচারণায় এগিয়ে আছেন। দলীয় নেতাকর্মীদের বড় অংশ তার পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এই দুই আসনে জয়ের হিসাব-নিকাশ পাল্টে যাচ্ছে। স্বতন্ত্র দুই প্রার্থীর অবস্থানই কেবল দৃঢ় হচ্ছে। নির্বাচনের মাঠে দুর্বল চিত্র ফুটে উঠছে জোটের দুই প্রার্থীর।
চট্টগ্রাম-১০ (খুলশী, পাহাড়তলী, হালিশহর) আসনে ভোটের মাঠে আছেন ৯ জন। এদের মধ্যে আছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চু। হেভিওয়েট স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আছেন সাবেক মেয়র মনজুর আলম। নগর যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদও এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে সবাইকে ছাপিয়ে আলোচনায় তুঙ্গে মনজুর আলম। নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে ততই ভোটের হিসাব পাল্টাচ্ছে। হেভিওয়েট এই প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও। তাদের পাশাপাশি এলাকার সাধারণ ভোটারদের বড় অংশও এই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন। এখনো পর্যন্ত ভোটের হিসাব মনজুর আলমের পক্ষে অনুকূল রয়েছে বলে জানান আওয়ামী লীগ নেতারা।
চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে চিত্র একেবারে ভিন্ন। অন্য আসনের কয়েকটিতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জোটের প্রার্থী এড়িয়ে ঝুঁকছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীর দিকে। আর এই আসনে নৌকার প্রার্থী খাদিজাতুল আনোয়ার সনির পক্ষে থাকতে মরিয়া। তার পক্ষে বেশ সরব অবস্থান নিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। বিশেষ করে তাকে প্রার্থিতা থেকে সরে যেতে কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা আসার সংবাদ চাউর হওয়ার পর কর্মীদের বেশ জোরাল সমর্থন দেখা যাচ্ছে তার প্রতি। দলীয় নেতাকর্মীরা ইতিমধ্যে জেলা পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতাদের জানিয়ে দিয়েছেন তারা নৌকার প্রার্থীর পক্ষেই থাকবেন। নৌকার প্রার্থী অন্য কোনো প্রার্থীর পক্ষে সরে গেলে তারা মেনে নেবেননা বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন।