দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের ওবায়দুল কাদের

ভোটের দিন সন্ত্রাস করতে পারে বিএনপি-জামায়াত

প্রকাশ : ০৬ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে দেশের বিভিন্ন স্থানে নাশকতা অব্যাহত রেখেছে। আমাদের কাছে তথ্য আছে, এখনও তারা ভয়াবহ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। নির্বাচনের দিন সারা দেশে সন্ত্রাস ও সহিংসতা করতে পারে।

গতকাল রাজধানীর তেজগাঁওস্থ আওয়ামী লীগের ঢাকা জেলার কার্যলয় থেকে দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে অনেক গুজব নানাভাবে বিএনপি-জামায়াত জড়াচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়াতে বিভিন্ন ভুয়া ভিডিও ছড়াচ্ছে। আমরা তাই সতর্ক আছি ও সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানাই। আমরা দেশের ভোটারদের আব্বান জানাই, আপনারা ব্যালটের মাধ্যমে ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে, সহিংসতাকারীদের বিরুদ্ধে রায় দিবেন। যারা মা-শিশুকে ট্রেনে পুড়িয়ে মেরেছে, পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে মেরেছে, বাস হেলাপারকে যারা পুড়িয়ে মেরেছে সেই হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে আপনারা জবাব দিবেন ব্যালটের মাধ্যমে। আপনাদের রায়ে আবারও পরাজিত হবে সকল অপশক্তি।

তিনি বলেন, গণতন্ত্রের অভিযাত্রায় ৭ জানুয়ারির নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে শক্তিশালী করতে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখতে এবং গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিকীরণের জন্য এই নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের অগ্রযাত্রা আরও গতিময় হবে। ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে দেশের মানুষের প্রত্যেকটি ভোট নিশ্চিত করবে স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণের প্রত্যয়কে বাস্তবে পরিণত করতে। আমাদের জনগণের একটি বড় অংশ তরুণ। এই তরুণ সমাজই হবে আর্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের মূল কারিগর।

সেতুমন্ত্রী বলেন, তারুণ্যের শক্তি বাংলাদেশের অগ্রগতি। প্রতিটি নতুন তরুণ ভোটারদের সক্রিয় সর্মথন আগামী ৫ বছরে এক কোটি কর্মসংস্থানের সুবিধা প্রাপ্তিকে নিশ্চিত করবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ‘স্মার্ট বাংলাদেশ-উন্নয়ন দৃশ্যমান-বাড়বে এবার কর্মসংস্থান’ স্লোগানকে সামনে রেখে আমাদের নির্বাচনি ইশতেহার জনগণের সামনে উপস্থাপন করেছেন। আমরা এবারের ইশতেহারে ‘স্মার্ট নাগরিক’, ‘স্মার্ট সরকার’, ‘স্মার্ট অর্থনীতি’ ও ‘স্মার্ট সমাজ’ এ চারটি জয়ের সমন্বয়ে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার ঘোষণা দিয়েছি। আমরা ভোটে নির্বাচিত হলে ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলবো, ইনশাআল্লাহ।

নির্বাচন ঘিরে সারা দেশে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে দাবি করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বাংলাদেশের মানুষের কাছে নির্বাচন মানে হলো উৎসব, গণতন্ত্রের উৎসব। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বরং তীব্র শীত উপেক্ষা করে জনগণ নির্বাচনকে স্বাগত জানিয়ে প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিয়েছে। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ২৮টি রাজনৈতিক দল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে এবং ২৯৯টি আসনে মোট প্রার্থী আছেন ১ হাজার ৯৭০ জন, যার মধ্যে ৪শ ৩৬ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী। সুতরাং নির্বাচনটি একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হতে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নির্বাচনি প্রচারণায় কোন রাষ্ট্রীয় প্রটোকল গ্রহণ করেননি। তিনি প্রধানমন্ত্রীর ফ্ল্যাগ ব্যবহার না করে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করে নির্বাচনি জনসভায় অংশগ্রহণ করেছেন। গত ২০ ডিসেম্বর তারিখে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সিলেটে হযরত শাহজালাল (রাঃ) ও হযরত শাহ পরান (রাঃ)-এর মাজার জিয়ারত করার পর আওয়ামী লীগের প্রথম বিভাগীয় জনসভায় সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। এরপর তিনি রংপুর, বরিশাল, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, ঢাকা, ফরিদপুর ও নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি জনসভায় সরাসরি অংশ নিয়েছেন। পাশাপাশি, তিনি ২৩টি জেলায় ভার্চুয়াল নির্বাচনী জনসভায় অংশগ্রহণ করেছেন। এসব জনসভার মাধ্যমে তিনি নিজে মোট ১৬৩টি সংসদীয় আসনে দলীয় নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষের কাছে দলীয় প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিয়ে গণতন্ত্র ও উন্নয়নের মার্কা নৌকা মার্কায় ভোট চেয়েছেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার প্রতিটি নির্বাচনী জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছিল। এতে প্রমাণ হয়, নির্বাচন ঘিরে সারা দেশে নৌকার পক্ষে অভূতপূর্ণ গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে দেশের ভোটাররা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার- ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা সবসময় চেয়েছি নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিক। নির্বাচন কমিশন বিএনপিকে আলোচনায় অংশ নিতে আহ্বান জানালে বিএনপি তা প্রত্যাখ্যান করেছে। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠকের জন্য আমন্ত্রণও বিএনপি প্রত্যাখ্যান করেছে। আমি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা বললেও তারা প্রত্যাখ্যান করেছে। এখন পরিষ্কার যে, গত কয়েক বছরে বিএনপির বিভিন্ন দফা-দাবি, সভা-সমাবেশ মূলত নির্বাচনকে প্রতিহত করার অংশ হিসেবে এসব কর্মসূচি দিয়েছিল। অতীতে যেমন জামায়াতের জন্য বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়নি, এবারও তারা জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচন প্রতিহতের আন্দোলন করছে। অথচ জামায়াতের নিবন্ধন আদালতের রায়ে বাতিল রয়েছে। সেই অনিবন্ধিত যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতকে নিয়ে বিএনপি আগুন সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, বিএনপি তথাকথিত আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস করছে নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য। তাই বিএনপির সহিংসতার চিরচেনা চরিত্র আবারও জাতির সামনে উপস্থাপিত হয়েছে। ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর থেকে বিএনপি ও তাদের দোসররা আন্দোলনের নামে বাপে ধাপে সহিংসতা প্রস্তুতি নিচ্ছিল। সে প্রস্তুতির একটা নৃশংস রূপ জাতি দেখেছে গত বছরের ২৮ অক্টোবর। সেদিন তারা একজন পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করেছে, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুর করেছে এবং জাজেস কমপ্লেক্সেও হামলা করেছিল। বিএনপি-জামায়াত ও তাদের মিত্ররা ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে আজ পর্যন্ত ২৩ দিন অবরোধ, ৬ দিন হরতাল কর্মসূচি দিয়ে সারা দেশে সহিংসতা ও নাশকতা চালিয়েছে। তাদের হামল্য-সহিংসতায় একজন শ্রমিক লীগ নেতা ও দুইজন বাসের হেলপার নিহত এবং ট্রেনে নাশকতায় ছয়জন মানুষ নিহত হয়েছে। এ সময়ে ২০ জন বাস চালক ও হেলপার, পুলিশ বাহিনীর ১৪৪ জন, আনসার বাহিনীর ২৫ জন, ফায়ার সার্ভিসের তিনজন, ১০২ জন সাধারণ মানুষসহ অর্ধশতাধিক সাংবাদিককে অগ্নিদগ্ধ ও আহত করেছে অবরোধকারীরা। একই সাথে দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আগুন এবং মোট ৬৫৫টি যানবাহন ও ১০টি অ্যাম্বুলেন্স আগুন ও ভাঙচুর করা হয়। পাশাপাশি, রেলে ২০টির বেশি নাশকতা করে ১২টি ট্রেনে ভাঙচুর বা আগুন দেওয়া হয়। বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের ছয়টি দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর ও পোড়ানো হয় এবং খুলনায় আদালতের এজলাস কক্ষে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেওয়া হয়।

ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য ২৮ অক্টোবরের পর থেকে আজ অব্দি বিএনপি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং জাতীয় নির্বাচনকে বানচাল করার উদ্দেশ্যে টানা রাজনৈতিক কর্মসূচি দিয়েছে এমনকী আগামী ৬ জানুয়ারি থেকে ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত টানা ৪৮ ঘণ্টার হরতাল আজরান করেছে বিএনপি। এর অর্থ হলো জনগণকে ভোট প্রদান হতে বিরত রাখা, ইলেক্টরাল প্রসেস বাধাগ্রস্ত করা। পৃথিবীর কোনো দেশে নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য এমন ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি দেওয়া হয়। তার কী কোনো নজির আছে? আমাদের বিদেশি বন্ধুরা বাংলাদেশে পশ্চিমাদের মানসম্মত গণতন্ত্র দেখতে চান। যেসব দেশে কী কোন রাজনৈতিক দল হাতাল দেয়? তাহলে তো যারা ইলেক্টরাল প্রসেসকে বাধাগ্রস্ত করতে চায় তাদের উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ হওয়া উচিত। আমাদের নির্ভরতার প্রতীক শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে বিশ্বমঞ্চে যে মর্যাদায় উন্নীত করেছেন, আমরা বিশ্বাস করি, দেশের জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে তার প্রতিদান অবশ্যই দিবেন।