ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ভোটের টানে ঢাকা ছাড়ছে মানুষ

নতুন ভোটারদের বাড়তি উচ্ছ্বাস
ভোটের টানে ঢাকা ছাড়ছে মানুষ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে ঢাকা হয়েছে ফাঁকা। ভোটের আগে গত বৃহস্পতিবার ছিল শেষ কর্মদিবস। এতে একটানা তিন দিন বন্ধ পেয়েছেন কর্মজীবীরা। এ সুযোগে রাজধানী ছেড়েছেন অনেকেই। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গ্রামে ছুটেছেন মানুষ। এলাকায় গিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবেন ভোটাররা।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে আগামীকাল রোববার সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস/প্রতিষ্ঠান/সংস্থায় কর্মরত কর্মকর্তা/কর্মচারী এবং সরকারি, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক/কর্মকর্তা/কর্মচারীদের ভোটাধিকার প্রয়োগ ও ভোটগ্রহণের সুবিধার্থে সারা দেশে নির্বাচনকালীন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা জানান, একটানা তিন দিন ছুটি পাওযায় গত বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে গতকাল রাজধানী ছাড়তে বাসস্ট্যান্ডে চাপ বাড়ে। গাবতলী বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, উত্তরবঙ্গগামী বাসগুলোতে সাধারণ মানুষের ভিড় অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেক বেশি ছিল। বিশেষ করে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলগামী বাস কাউন্টারগুলোতেও বেশি ভিড় হয়।

রাজধানীর মিরপুর এলাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন হুমায়ূন। তিনি বলেন, টানা তিন দিনের ছুটি পেয়েছি। ভোট দিতে বাড়ি যাব। কাজ কম থাকায় বৃহস্পতিবার একটু আগেই অফিস থেকে বের হয়েছি। এছাড়াও প্রার্থীরা বারবার বাড়িতে এসে আমার বাবা-মার কাছে এসেছেন, ভোট চেয়েছেন। আগামী পাঁচ বছরের জন্য অভিভাবক নির্বাচনে আমার অংশগ্রহণ থাকা উচিত বলে মনে করি। তাই বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়েছি। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে বিভিন্ন বাসের টিকিট বিক্রি করা কমিশন এজেন্ট মো. আলী বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে এবার ঈদের মতো যাত্রীরা কাউন্টারে এসেছেন। টিকিটও বিক্রি হয়েছে। অনেকেই বাড়ি ফিরছেন। এ টার্মিনালে নিজের স্ত্রী-সন্তানকে বাসে তুলে দিতে এসেছেন বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা বরিশালের রাতুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমার স্ত্রী এলাকায় ভোটার হয়েছে। এবারই প্রথম ভোট দেবে। তাই বাড়ি যাওয়ার জন্য তার মধ্যে একটু বাড়তি উচ্ছ্বাস।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামীকাল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আগামীকাল দেশের সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি অফিস ও প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ফলে শুক্র-শনি-রবিবার টানা তিন অফিস বন্ধ। এই ছুটিতে অনেকেই সুযোগ ও পরিবেশের ওপর ভিত্তি করে এলাকায় গিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে চান।

সরেজমিন রাজধানীর কমলাপুর, যাত্রাবাড়ি ও গাবতলী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গত বৃহস্পতিবার অফিস শেষে করে বিশেষ কাজ থাকায় অনেকেই ঢাকা ছাড়তে পারেননি। গতকাল তাদের ঢাকা ছাড়তে দেখা গেছে। তবে স্টেশন ও বাস টার্মিনালগুলোতে আগের মতো যাত্রীদের চাপ নেই। ফলে অলস সময় পার করছেন দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

কমলাপুর স্টেশনে বিভিন্ন কমিউটার ট্রেনের টিকিট বিক্রি করা হয়। সকাল থেকে সব ট্রেনই নির্দিষ্ট সময়ে স্টেশন ছেড়েছে। আখাউড়া কমিউটার ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার পর যাত্রীদের অপেক্ষা করতে দেখা গেছে রংপুর এক্সপ্রেসের জন্য। রংপুর এক্সপ্রেসের যাত্রী মোজাহিদুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনের কারণে তিন দিনের ছুটি পাওয়ায় তিনি বাড়ি যাচ্ছেন। ভোটের দিন পরিবেশ ভালো থাকলে কেন্দ্রে যাব। ছুটি মিলে যাওয়ায় সেই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাননি তিনি। একই ধরনের বক্তব্য পাওয়া গেল আরেক অপেক্ষমাণ যাত্রী কাজল সরকারের কাছ থেকেও। তিনি বলেন, ছুটির কারণেই তিনি বাড়িতে যাচ্ছেন।

ব্যস্ততম নগরী গুলিস্তান, নিউমার্কেট ও পল্টনের আশপাশে মানুষের ভিড় ও যানজট কমলেও গতকাল কমলাপুরের মতো সদরঘাটেও কিছুটা ভিড় ছিল। অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন বিভাগের (ঢাকা নদীবন্দর, সদরঘাট) নৌনিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগ জানায়, অন্যান্য দিনের তুলনায় যাত্রীর চাপ মোটামুটি বেশি। টানা তিন দিনের ছুটিতে যাত্রীর চাপ ছিল। গত বৃহস্পতিবার থেকেই যাত্রীর চাপ বেড়েছে। গতকাল শুক্রবারও বরিশাল-চাঁদপুর অঞ্চলে যাত্রীদের চাপ বাড়ে। বৃহস্পতিবার ৬৫টি লঞ্চ ঢাকা ছেড়েছে, গতকালও সম সংখ্যক লঞ্চ ছাড়ার কথা ছিল।

নির্বাচন উপলক্ষ্যে ভোটের আগে-পরে তিন দিন বন্ধ থাকবে মোটরসাইকেল চলাচল। এর মধ্যে ভোটের দিন ট্যাক্সি ক্যাব, পিকআপ, মাইক্রোবাস ও ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকবে। ভোটকে কেন্দ্র করে বহু মানুষ রাজধানী ছাড়ায় চিরচেনা সেই রাজধানীর রূপ বদলেছে। নেই সেই চিরচেনা যানজট, মানুষের ভিড় ও ফুটপাত এবং অলিতে-গলিতে অস্থায়ী দোকানগুলো।

আজিমপুর এলাকা দীর্ঘ ২০ বছর ধরে বসবাস করেন ষাটোর্ধ্ব আফজাল হোসেন। তিনি বলছেন, রাজধানীতে এমন পরিবেশ খুব কমই দেখা যায়। বছরে দুইটা ঈদ আর নির্বাচনের দিন ব্যস্ত ঢাকাকে ফাঁকা দেখা যায়। তাই বাসা থেকে হেঁটেই বের হয়েছি। এই ফাঁকা ঢাকা আর হয়তো বহুদিন দেখা হবে না।

রাজধানীর একটি বেসকারি প্রতিষ্ঠান ফয়সাল মোরব্বা ও লাচ্চা সেমাই ঘরের ব্যবস্থাপনা পরিচাল মো. মহসিন আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, ভোট দেওয়ার জন্য কর্মচারীদের ছুটি দিয়ে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। যাতে সবাই ভোট উৎসবে শামিল হতে পারে। আমি ঢাকার ভোটার। ঢকায় ভোট দেব।

উল্লেখ্য, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি। দলটি ভোটের বিরোধিতা করে সাধারণ মানুষকে ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য অনুরোধ করছে। এ লক্ষ্যে জনসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করেছে দলটি। তবে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে। কমলাপুর স্টেশনে যাত্রীদের সঙ্গে চোখে পড়ে নিরাপত্তাও। রেল পুলিশের সঙ্গে অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীও স্টেশনে সক্রিয়। কমলাপুরের স্টেশন মাস্টার আনোয়ার হোসেন জানান, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মানুষ আগে থেকেই টিকিট কেটে রেখেছে। অগ্রিম টিকিট শেষ হয়ে গেছে অনেক আগেই।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত