ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দেশি-বিদেশি সাংবাদিক পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে শেখ হাসিনা

দ্বাদশের ভোটে জনগণের বিজয়

* মাতৃস্নেহে দেশ পরিচালনা করছি * সুষ্ঠু নির্বাচনের দৃষ্টান্ত সৃষ্টি হয়েছে
দ্বাদশের ভোটে জনগণের বিজয়

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নয়, জনগণের জয় হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এবারের নির্বাচনে ব্যতিক্রমী হয়েছে। জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটে অংশগ্রহণ করেছে। তারা ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করেছেন, এই বিজয় জনগণের বিজয়।

গতকাল বিকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাসভবন গণভবনে দেশি-বিদেশি সাংবাদিক পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে সৌজন্য মতবিনিময়ের সময় তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণের যে অধিকার আছে, সরকার গঠন করার। তাদের ক্ষমতা হাতে আছে, জনগণের ভোটের অধিকার প্রয়োগ করার মাধ্যমে সেটি তারা নিশ্চিত করেছে। আমাদের অনেক স্বতন্ত্র প্রার্থীও নির্বাচিত হয়েছে। অন্যদলগুলোরও বেশকিছু প্রার্থী জয় লাভ করেছে। এবার অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের দৃষ্টান্ত সৃষ্টি হয়েছে। দেশ ও গণতন্ত্রের জন্য এটা যুগান্তকারী ঘটনা। আমি অনেকবারই নির্বাচন করেছি। সেই ১৯৮৬ সাল থেকে আটবারই আমার নির্বাচন করা হয়ে গেছে। তবে এত মানুষের আগ্রহ আগে দেখিনি। আমি মনে করি, বাংলাদেশের জনগণ অনেক আনন্দিত এবং নির্বাচন যারা পর্যবেক্ষণ করেছেন, মতামত দিয়েছেন, সেটা উপযোগী।’

নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য সব ব্যবস্থা নিয়েছি- উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করাই আমার লক্ষ্য। জনগণের সরকার গঠন করবার অধিকার ও ক্ষমতা আছে, যেটা নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন সংগ্রাম করেছি। জনগণ তাদের ভোটের অধিকার প্রয়োগ করেছে। ভোট সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। সেজন্য নির্বাচনব্যবস্থাকে সংস্কার করেছি। নির্বাচন চলাকালীন সময়ে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী- সবাইকে নির্বাচন কমিশনের অধীনস্ত করে মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করাটাই লক্ষ্য ছিল। সাধারণত দল থেকে প্রার্থী নির্বাচন করা হলেও এবার প্রার্থিতা উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছিল। বিএনপি এবারের নির্বাচনে অংশ নেয়নি কারণ, তারা আসলে নির্বাচনে অংশ নিতে চায় না এবং তারা ভয় পায়। বিএনপি মিলিটারি ডিকটেটরের হাতে তৈরি। মিলিটারি ডিকটেটরের হাতে তৈরি দলগুলো নিজেরা চলতে পারে না, তাদের জনসমর্থন থাকে না। সেজন্য নির্বাচন ভয় পায়। আমাদের দল হলো জনগণের দল।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিএনপি-জামায়াত কী করছে, আগুন দিয়ে মানুষ মারছে। ট্রেনে আগুন দিচ্ছে। এটা কি গণতন্ত্র? আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। কিন্তু আপনি যখন সাধারণ মানুষকে হত্যা করতে চাইবেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নয়, এটা সন্ত্রাসী কার্যক্রম। এ দেশে কেউ সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না। মানুষ সন্ত্রাসী কার্যক্রম পছন্দ করে না। বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনে অংশ না নিয়ে, মানুষের ভোটকেন্দ্রে যাওয়া ঠেকাতে চেয়েছে। কিন্তু তারা সেটা পারেনি। কারণ, মানুষ সচেতন। মানুষ তাদের কথা শোনেননি। এছাড়া যদি গণতন্ত্রের আর কোনো সংজ্ঞা থেকে থাকে তাহলে সেটা আলাদা। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি, এটা মানুষের অধিকার। যখন জনগণ অংশগ্রহণ করে, তারা তাদের সরকারের জন্য ভোট দেয়, তখন তাদের অংশগ্রহণই মূল বিষয়। আমরা মানুষের অধিকার নিশ্চিত করেছি।

‘গণতান্ত্রিক দেশে বিরোধী দল থাকাটা জরুরি’, উল্লেখ করে একজন বিদেশি সাংবাদিক প্রশ্ন করলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রত্যেক দলের নিজেদের মতো সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রয়েছে। কোনো দল নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার অর্থ এই নয় যে; গণতন্ত্র নেই। জনগণের অংশগ্রহণ ছিল কি না, এটা বিবেচনা করতে হবে। আমি বিরোধী দলে ছিলাম দীর্ঘদিন ধরে। আমাদের দলকে আমরা সংগঠিত করেছি। বিরোধী দলকে তাদের নিজেদের সংগঠিত করতে হবে। আপনি আমাকে বিরোধী দল গঠন করতে বলতে পারেন না। অবশ্য আপনি চাইলে আমরা সেটা করতে পারি। কিন্তু সেটা আসল বিরোধীদল হবে না।’

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে যারা সমালোচনা করতে চায় তারা করতে পারে। সেটা তাদের স্বাধীনতা। ভুল-ঠিক নিয়ে আমার নিজস্ব বিশ্বাস আছে। আমি সেটাতেই বিশ্বাস করি। হ্যাঁ আমি ঠিক কাজটি করেছি। নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হয়েছে। নির্বাচন হয়ে গেছে, এখনো গেজেট হয়নি। তাই আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। সম্পূর্ণ ফলাফল আসলে গেজেট হবে, তখনই শপথ হবে। এরপর আমাদের সংসদীয় দলের বৈঠক করতে হবে। সেখানে সংসদীয় দলের নেতা কে হবেন, সেটা নির্বাচন করতে হবে। নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা সেটা নির্বাচিত করবেন। মেজরিটি পার্টি যাকে নির্বাচিত করবেন, তিনিই হবে সংসদীয় দলের নেতা। তখন সরকার গঠন করতে রাষ্ট্রপতির কাছে যেতে হবে, সরকার গঠন হবে। এটাই সংবিধানিক প্রক্রিয়া, তা অনুসরণ করতে চাচ্ছি।’

ভোট দেখতে আসায় বিদেশি সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে আপনারা আমাদের দেশটাকে দেখতে এসেছেন। আমি মনে করি, আমাদের দেশের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য এটা অত্যন্ত যুগান্তকারী ঘটনা। নির্বাচনটা যে অবাধ, সুষ্ঠু হতে পারে সেই দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করতে পেরেছি। আপনাদের আগমন আমাদের দেশের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য, মানুষের অধিকারটা আরো সুরক্ষিত হয়েছে। আপনারা যার যার দেশে ফিরে যাবেন, বাংলাদেশের কথা বলবেন। আপনাদের আগমন আমাদের গণতান্ত্রিক বিধি-ব্যবস্থাকে আরো মজবুত ও শক্তিশালী করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’

এ সময় এক বিদেশি পর্যবেক্ষক বলেন, নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আপনি পাঁচবার ক্ষমতায় এলেন। এর মাধ্যমে আপনি ইন্দিরা গান্ধী, শ্রীমাভো বন্দরনায়েকে, চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গা, বেনজীর ভুট্টো, গোল্ডমেয়ার ও মার্গারেট থ্যাচারকে ছাড়িয়ে গেছেন। আপনার এই বিজয় উদযাপনের অংশ হিসেবে আপনি ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ক্ষমা করার কথা বিবেচনা করবেন কি না?

জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনি যখন দেশ পরিচালনা করছেন তখন আপনি নারী নাকি-পুরুষ এটা নিয়ে ভাবা উচিত নয়। আমি আমার দেশের মানুষের জন্য কাজ করেছি। নারী হিসেবে আমি জনগণকে মাতৃস্নেহের সঙ্গে দেখি। আপনি যে নারী নেত্রীদের নাম নিয়েছেন, তারা মহান ছিলেন। আমি তাদের মতো নই। আমি একজন খুব সাধারণ মানুষ। তবে আমি সবসময় মানুষের প্রতি আমার কর্তব্যের কথা অনুভব করি। আমাকে তাদের সেবা করতে হবে।’

ড. ইউনূসের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘শ্রম আদালত তার বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে। তিনি তার নিজের কোম্পানির যাদের বঞ্চিত করেছেন তারাই মামলা করেছেন। তিনি শ্রম আইন লঙ্ঘন করেছেন। এ ব্যাপারে আমার কিছুই করার নেই। তাই তাকে ক্ষমা করার প্রশ্ন আমার কাছে আসা উচিত নয়। তার নিজের কোম্পানির কর্মচারীদের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত। আমি শুধু এটুকুই বলতে পারি।’

ভারতীয় এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ভারত বাংলাদেশের মহৎ বন্ধু। ১৯৭১ সালে তারা আমাদের সমর্থন করেছে। পঁচাত্তরের পর তারা আমাকে ও আমার বোনকে আশ্রয় দিয়েছে। ঘরের পাশের প্রতিবেশী হিসেবে ভারতের সঙ্গে আমাদের অনেক সমস্যা থাকলেও আমরা তা দ্বিপাক্ষিকভাবে সমাধান করেছি। প্রতিবেশী হিসেবে তাদের সঙ্গে আমাদের চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে। অন্যান্য দেশের সঙ্গেও আমার ভালো সম্পর্ক রয়েছে।’

আগামী ৫ বছর বহির্বিশ্বের সঙ্গে কেমন সম্পর্ক প্রত্যাশা করছেন- এই প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আগেও বলেছি, অর্থনৈতিক উন্নতি, মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন নিশ্চিত করাই আমার প্রধান লক্ষ্য। এই লক্ষ্যে আমরা সব ধরনের কাজও শুরু করেছি। এটা আমরা পূরণ করতে চাই।’

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে করণীয় নিয়ে মার্কিন একজন পর্যবেক্ষকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দিক থেকে কোনো সমস্যা নেই। আমাদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক রয়েছে। এটা এখন আপনাদের সরকারের ওপর নির্ভর করছে।’

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ খুবই চমৎকার। আমি প্রতিহিংসাপরায়ণ নই। আমি কারো ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করিনি। আমি খোলা মনের ও খুব উদারপন্থি মানুষ। দেশে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ও সংবাদপত্রগুলো স্বাধীনভাবে কথা বলতে ও লিখতে পারে। তারা তাদের কাজ করতে পারে, আমি কখনো হস্তক্ষেপ করি না। যখন কেউ সমালোচনা করে, তখন তাদের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেকে শোধরানো যায়, আমি এভাবেই দেখি।’

এ সময় দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক, সাংবাদিক, বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা, প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত