ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী

নির্বাচন বানচালে ব্যর্থ হয়েছে ষড়যন্ত্রকারীরা

জনগণের অধিকার রক্ষায় আ.লীগের সৃষ্টি
নির্বাচন বানচালে ব্যর্থ হয়েছে ষড়যন্ত্রকারীরা

নির্বাচন বানচালে ষড়যন্ত্রকারীরা ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, যারা নির্বাচন নিয়ে বড় খেলা খেলতে চেয়েছে; তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচন যাতে না হয় তার জন্য বিএনপি নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করেছিল। তাদের কিছু মুরুব্বি আছে, তারা পরামর্শ দেন। মুরুব্বিদের পরামর্শে চললে বাংলাদেশের আর চলা লাগবে না। এটাই হলো বাস্তবতা। যদি সৎ পরামর্শ হয়, সেটা ভালো কথা। নির্বাচন হতে দেবে না, এসব হুমকিধমকি গেল কোথায়?

দ্বাদশের ভোটে নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর গতকাল দুপুরে গণভবনে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বাংলাদেশের মানুষকে তারা চেনে না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবে না’, ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের মানুষ সেটা প্রমাণ করে দিয়েছে। আমাদের কোনো প্রভু নেই। বাংলাদেশের জনগণই আমাদের শক্তি। ৭ জানুয়ারির নির্বাচন দেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। ৭৫-এর পর বাংলাদেশে যত নির্বাচন হয়েছে, তার মধ্যে এ নির্বাচন সবচেয়ে সুশৃঙ্খল, সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ, প্রতিযোগিতামূলক ও অংশগ্রহণমূলক। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে যে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে, আমরা সেটা প্রমাণ করেছি। এতো দলের মধ্যে ২-৪টা দল নির্বাচনে না আসলে কিছু যায় আসে না। নির্বাচনের এখানে জনগণের অংশগ্রহণ ছিলো। ধন্যবাদ জানাই নির্বাচন কমিশনকে। চমৎকার নির্বাচন উপহার দেয়ার জন্য আন্তরিক অভিনন্দন।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করা হয়। স্বাধীনতায় লাখো শহীদের যে অবদান, সেটাই ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা হয়। ইতিহাস বিকৃত করা হয়। এটাই হচ্ছে জাতির সবচেয়ে দুর্ভাগ্য। ৭৫-এর পর নির্বাচন মানে কী সেটা আমি দেখেছি। নির্বাচন ছিল নামেই নির্বাচন। ভোট চুরি, ভোট ডাকাতি, ভোটার লিস্টে মিথ্যা নাম দেওয়া, সংবিধান লঙ্ঘন করে, সেনা আইন লঙ্ঘন করে যারা ক্ষমতায় ছিল তাদের পকেট থেকে রাজনৈতিক দল বের হতো, এই দল মাটি মানুষের কথা বলে না। ক্ষমতার উচ্চ আসনে বসে গঠিত রাজনৈতিক দল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সেই দল না।

জনগণের অধিকার রক্ষায় আওয়ামী লীগের সৃষ্টি উল্লেখ করে দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ হচ্ছে মানুষের অধিকারের কথা বলার জন্য, যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ছিল না, তখনই আওয়ামী লীগের সৃষ্টি। জনগণের স্বার্থে, জনগণের কল্যাণে, জনগণের অধিকার রক্ষায় আওয়ামী লীগের সৃষ্টি। সৃষ্টিলগ্ন থেকে আওয়ামী লীগ জনগণের স্বার্থে কাজ করে গেছে। আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার জন্য বারবার অনেকেই এসেছে, আইয়ুব খানও চেষ্টা করেছে, ইয়াহিয়া খানও চেষ্টা করেছে, জিয়াউর রহমান চেষ্টা করেছে, এরশাদ চেষ্টা করেছে। জিয়াউর রহমান যেমন হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে, সেভাবে খালেদা জিয়াও হত্যাকাণ্ড চালিয়ে আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে।

বিএনপির সমালোচনা করে বঙ্গবন্ধুরকন্যা বলেন, শুধু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী না, এ দেশের প্রতিটি শ্রেণির মানুষ আজকে তাদের (বিএনপি) দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত। একটা মানুষের মধ্যে মনুষত্ব থাকলে কোনোদিন এভাবে পুড়িয়ে মারতে পারে না। গত ২৮ অক্টোবর পুলিশ হত্যা করেছে। পুলিশ হাসপাতালে হামলা করেছে। প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা করেছে। সাংবাদিকদের পিটিয়েছে। তারা এখনো ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি ভেবেছিল একেবারে ক্ষমতা চলে যাবে, নির্বাচনে মাত্র ৩০টা সিট পেয়েছে। এরপর থেকে তারা জানে, বাংলাদেশের মানুষ সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি, মানুষ হত্যা এগুলো পছন্দ করে না। তাদের প্রত্যাখ্যান করেছিল। যে কারণে তারা কোনো নির্বাচনে আসতে চায়নি।

বাংলাদেশের মানুষ কোনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয় না মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৯৬ সালে খালেদা জিয়া ভোটারবিহীন নির্বাচন করেছিল, শত চেষ্টা করেও ভোটার আনতে পারেনি। তারপর সিল মেরে, বাক্স ভরে সবকিছু করেছিল, সারা জায়গায় আর্মি নামিয়েছিল, পুলিশ নামিয়েছিল, সব নামিয়েছিল। তারপরও সে নির্বাচন হয়নি এবং জনগণ মেনে নেয়নি। ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন হয়েছিল, ৩০ মার্চ খালেদা জিয়া ভোটচুরির অপরাধ নিয়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিল। সে কথা জনগণ ভুলে যায়নি। ২০০৬ সালের নির্বাচনেও এক কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার দিয়ে এ নির্বাচন করতে চেয়েছিল। সেই নির্বাচনও টিকাতে পারেনি। ইমারজেন্সি ডিক্লেয়ার হয়, খালেদা জিয়াও যায়, তার নির্বাচনও যায়। এদের তাও শিক্ষা হয় না, লজ্জা হয় না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে। উৎপাদন বাড়াতে হবে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করতে হবে। দেশের মানুষকে হাত পেতে চলতে হবে না। বিজয়ী জাতি হিসেবে আমাদের মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। আধুনিক বিজ্ঞান শিক্ষায় জাতি সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

এ সময় অনুষ্ঠান মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত