ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় শেখ হাসিনা

জনগণের শক্তিই বড় শক্তি

স্বচ্ছ-নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছে
জনগণের শক্তিই বড় শক্তি

জনগণের শক্তিই বড় শক্তি, সেটা নির্বাচনের মধ্যদিয়ে আবার প্রমাণিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা আপনাদের সেবা করার সুযোগ পেয়ে দেশকে নিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাব ইনশা আল্লাহ। আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসায় বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ ঠেকাতে পারবে না।

গতকাল বিকালে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন। এদিন বিকাল ৪টার দিকে মঞ্চে উপস্থিত হন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসার কারণে বাংলাদেশের সমৃদ্ধির পথে অগ্রগতিতে কেউ বাধা সৃষ্টি করতে পারবে না। আওয়ামী লীগ যদি সরকারে না আসত তাহলে কিন্তু এই দেশ আর এগোতে পারত না। অনেকেরই অনেক রকম স্বপ্ন আছে। অনেকেই এই নির্বাচন বন্ধ করতে চেয়েছিল; কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনে মানুষ যাতে ভোট দিতে না আসে, সেটা ঠেকাতে চেয়েছিল; কিন্তু তারপরেও ৪১ দশমিক ৮ ভাগ ভোট পড়েছে। এটা সোজা কথা নয়। এই কারণে যে এককভাবে আওয়ামী লীগ এবং এর সমমনা দল যখন নির্বাচন করেছে, আরেকটি দল তখন নির্বাচন প্রতিহত করার চেষ্টা করেছে। আর এবারের নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রশ্ন ওঠার সুযোগ নেই। কারণ, অত্যন্ত স্বচ্ছ, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন এবার অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেটা আপনারাই দেখেছেন।

তিনি বলেন, আইন করে নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীন করে দিয়েছি। নির্বাচনে কোনোরূপ হস্তক্ষেপ আমরা করিনি বরং সহযোগিতা করেছি। সেই সঙ্গে সঙ্গে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা এবং প্রশাসন থেকে শুরু করে সবকিছুই ছিল, সেই নির্বাচন কমিশনের হাতে ন্যস্ত। যাতে নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাতে ভোট দিয়েছে, দিনের ভোট রাতে দিয়েছে, ভোট কারচুপি হয়েছে, এসব বলার কোনো সুযোগ নেই। অত্যন্ত স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সরকারপ্রধান বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, প্রশাসন থেকে শুরু করে সব কিছুই নির্বাচন কমিশনের হাতে ন্যস্ত ছিল। যেন নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়। আমরা কখনও হস্তক্ষেপ করিনি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসনের কর্মকর্তা, সশস্ত্র বাহিনীসহ যারা নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করেছেন, তাদের ধন্যবাদ জানাই। প্রতিটি জিনিস পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে তুলে আনার জন্য সাংবাদিকদেরও ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, আমাদের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলব। যে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ শিক্ষা-দীক্ষা এবং প্রযুক্তি ব্যবহারে স্মার্ট হবে। ইনশাআল্লাহ উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কেউ ছিনিমিনি খেলতে পারবে না।

১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের দায়িত্বভার কাঁধে নিয়ে বিভিন্ন মেয়াদে সরকার গঠন করে দেশ ও দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিভিন্ন প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি বলেন, এই বাংলাদেশের জনগণ তারাই আমার পরিবার। আমি বাংলাদেশের মানুষের মাঝে খুঁজে নিয়েছি আমার হারানো বাবার স্নেহ, মায়ের স্নেহ, ভাইয়ের স্নেহ। ঠিক সেভাবেই আমি রাষ্ট্র পরিচালনা করেছি, যেন প্রত্যেক মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনতে পারি। তাদের জীবনকে উন্নত করতে পারি।

সেনা সমর্থিত এক-এগারোর সরকারের সময় জরুরি অবস্থা জারির প্রসঙ্গ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, সবার আগে আমাকেই গ্রেপ্তার করে। আমি তো ক্ষমতায় ছিলাম না। তবু আমাকে আগে গ্রেপ্তার করেছিল। আমার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে, শাস্তি দিয়ে আমি যেন নির্বাচন করতে না পারি, সেই চক্রান্ত ছিল। তারপর তারা (মুক্তি দিতে) বাধ্য হয়েছিল এদেশের মানুষের জন্যই।

দেশি-বিদেশি সবার প্রতিবাদ ও প্রচণ্ড চাপে তারা (এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকার) নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়েছিল বলেও জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, অনেকেরই ধারণা ছিল বিএনপি খুব শক্তিশালী দল। আওয়ামী লীগ-বিএনপি সমান সমান ভোট পাবে। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ আওয়ামী লীগকে বেছে নিয়েছিল। তারা জানত, একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে।

আওয়ামী লীগের এমপিদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বাচনে আমরা জয়লাভ করেছি এবং আজকে পার্লামেন্টারি পার্টির সভায় আমাকে সর্বসম্মতিক্রমে তাদের নেতা নির্বাচিত করা হয়েছে। এজন্য সংসদ সদস্যদের আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সংবিধান অনুযায়ী এখন রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠি দেব। কেন না, সরকার গঠন করার জন্য অনুমতি নিতে হবে এবং এই সমাবেশের পরেই বঙ্গভবনে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি।

দেশে ও জাতির জন্য বঙ্গবন্ধুর ত্যাগ ও অবদান তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তান থেকে মুক্তি পেয়ে সরাসরি বাংলাদেশে ফিরে এসেছিলেন বঙ্গবন্ধু। বাঙালি জাতির ভাগ্য গড়ার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার পুরো জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। বাংলাদেশের মানুষের কোনো কিছু ছিল না। সেই জাতির জন্য, তাদের ভাগ্য গড়ার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজের জীবন উৎসর্গ করেন। অনেক সংগ্রাম ত্যাগের মধ্য দিয়ে এই দেশ স্বাধীন করেন। এ দেশে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষার কোনো কিছু ছিল না। প্রায় ৮০ থেকে ৯০ ভাগ মানুষই দারিদ্র্যসীমার নিচের বাস করত। একবেলা খাবার পেত না, দিনের পর দিন না খেয়ে তাদের জীবন কাটাতে হয়েছে। সেই মানুষদের মুক্তির জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেতে হয়েছিল তাকে।

পাকিস্তানের কারগারে ২৯০ দিন কারাভোগের পর জাতির পিতার স্বাধীন স্বদেশ ভূমিতে ফিরে আসার মাধ্যমে মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পূর্ণতা লাভের এই দিনটিকে গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন উপলক্ষ্যে আনন্দের দিন হিসেবে পালন করছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে ২৯৮টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ এককভাবে ২২২টি আসনে জয়লাভ করেছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত