শপথ নিলেন শেখ হাসিনাসহ ২৯৮ প্রার্থী

দ্বাদশ জাতীয় সংসদের যাত্রা শুরু

চলতি মাসের শেষের দিকে সংসদ অধিবেশন ডেকে সংসদের কার্যক্রম শুরু হবে

প্রকাশ : ১১ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আরিফুল ইসলাম

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় লাভের পর প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৯৮ জন প্রার্থীর শপথগ্রহণের মধ্যে দিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের যাত্রা শুরু হয়েছে। এর ফলে আগামী ৫ বছররের জন্য আওয়ামী লীগ ক্ষমতার মান্ডেট পেল। চলতি মাসের শেষের দিকে সংসদ অধিবেশন ডেকে সংসদের কার্যক্রম শুরু হবে।

গতকাল জাতীয় সংসদ ভবনে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত সংসদ সদস্যের শপথবাক্য পাঠ করান স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। পরে তাদের শপথের কাগজে স্বাক্ষর করতে বলেন। পরবর্তী কার্যক্রম হিসেবে সাংসদদের রেজিস্ট্রারে স্বাক্ষর করতে বলা হয়। শপথের পর নবাগত এমপিরা স্পিকারের সামনে শপথ ফরমে স্বাক্ষর করেন।

আজ বিকালে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন হবে বলে জানা গেছে। সংসদ নেতা হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো সংসদ নেতা হলেন তিনি। একাদশ সংসদের মতো এবারও মতিয়া চৌধুরীকেই সংসদের উপনেতা হিসেবে নির্বাচন করেছেন আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সদস্যরা। সেইসাথে, দ্বাদশ সংসদের চিফ হুইপ হিসেবেও থাকছেন নূর-ই-আলম চৌধুরী।

বিরোধী দলের বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে কি না- জানতে চাইলে নূর-ই-আলম চৌধুরী বলেন, বিরোধী দলের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয় নি। সংসদ ডাকার পরে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে। এছাড়া নতুন মন্ত্রিসভা কত সদস্যের হতে যাচ্ছে বা নতুন করে কারা মন্ত্রী হতে যাচ্ছেন, সে ব্যাপারে এখনও নির্দিষ্ট করে কিছু জানা যায়নি। তবে বিগত সরকারের বেশ কয়েকজন প্রতিমন্ত্রী নির্বাচনে জিততে না পারায় এবার মন্ত্রিসভায় বেশকিছু নতুন মুখ যোগ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠানের জন্য দেশি-বিদেশি মিলিয়ে প্রায় দেড় হাজার অতিথিকে দাওয়াত দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। এদিকে গতকাল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও রংপুর সদর-৩ আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের বলেছেন, আমরা একাদশ সংসদে বিরোধী দলে ছিলেন এবং দ্বাদশ সংসদেও বিরোধী দলে থাকতে চাই। জিএম কাদের বলেন, সংসদে আসার অনুভূতি সব সময়ই ভালো। সেদিক দিয়ে বলতে গেলে আবার সংসদে এলাম, সেটা আনন্দের বিষয়।

দ্বাদশ সংসদের বিরোধী দল প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি ঠিক জানি না নিয়মটা কী। তবে আমরা বিরোধী দলে ছিলাম এবং বিরোধী দলে থাকতে চাই। আমরা জনকল্যাণমুখী যেটা জনগণের ভালো হয়, সেটিই আমরা করতে চাই।

পার্টি অফিসে নেতৃত্বের ব্যর্থতা নিয়ে বিক্ষোভ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এগুলো সাজানো জিনিস। কিছু লোক আমাদের পার্টিকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অথবা ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা করছে। যেটা করা হয়েছে, সবার সঙ্গে আলোচনা করে করা হয়েছে। এবারের সংসদ নির্বাচনে এত কম আসনে নির্বাচিত হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সব সময় সবকিছু এক রকম হয় না। এবারের নির্বাচনটা সঠিক নির্বাচন হয়নি। কিছু ক্ষেত্রে সঠিক হয়েছে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের নেতাকর্মীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি ও বুথ দখল করা হয়েছে। সিল মারা হয়েছে, খালি ব্যালট পেপার ছিল।

জাপা চেয়ারম্যান বলেন, সত্যিকার অর্থে আমাদের জনপ্রিয়তা বা জনগণের সঙ্গে আমাদের যে ভিত্তি রয়েছে, সেটি এই নির্বাচনের ফলাফলে সঠিকভাবে আসেনি।

গতকাল সকাল ১০টা শপথ অনুষ্ঠানের শুরুতেই স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী নিজে শপথ নেন। পরে আওয়ামী লীগের ২২২ জন সংসদ সদস্যকে শপথবাক্য পাঠ করান তিনি। বেলা ১১টায় শপথ পড়ান ৬২ জন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যকে। পরে জাপার ১১ জন সদস্যকে।

গত ৭ জানুয়ারি সারা দেশে একযোগে ২৯৯ আসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে ২৯৮ আসনের ফল বেসরকারিভাবে ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। কমিশনের দেওয়া তালিকা অনুয়ায়ী নির্বাচনে অংশ নেওয়া দলগুলোর মধ্যে জাতীয় পার্টি ১১ আসনে জয় লাভ করে। ২৯৮ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২২২ আসনে জয়লাভ করে একক সংখ্যাগরিষ্ঠা লাভ করে। এছাড়া বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ ও কল্যাণ পার্টির প্রার্থী একটি করে আসনে নির্বাচিত হয়েছেন। আর ৬২টি আসনে জয়লাভ করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।

শপথ নিতে এসে ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় নায়ক ফেরদৌস আহমেদ বলেন, আমার ওপর যে বিশ্বাস ও আস্থা দল ও ভোটারসহ এলাকাবাসী রেখেছেন, তার প্রতিদান যেন দিতে পারি। কোনো কাজ বিঘ্নিত না হয়, সে চেষ্টাই করে যাবো। আমি যেন সততার সঙ্গে দেশের প্রতি, জনগণের প্রতি বিশেষ করে আমার ঢাকা-১০ আসনের সম্মানিত নাগরিকদের জন্য অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে পারি। তিনি বলেন, ঢাকা-১০-এর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও বিশেষ করে ব্যারিস্টার তাপসের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। ঢাকা-১০-কে উন্নয়নে দশে দশ রাখার চেষ্টা করব।

অন্যদিকে রাজপথের মতোই সংসদেও আগের মতোই ভূমিকা রাখবেন বলে জানিয়েছেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।

তিনি বলেন, কাজে অসংখ্য চ্যালেঞ্জ থাকবে। একটা-দুইটা না, বাংলাদেশে কাজ তো কেউই করতে চায় না। তারপরও যদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুনজর থাকে, তাহলে আমি অনেকটুকু পাড়ি দিতে পারবো।

আপনার নামের সঙ্গে সংসদ সদস্য যুক্ত হওয়ার কেমন মনে হচ্ছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এটাকে (সংসদ সদস্য) আলাদাভাবে নিচ্ছি না। এটা একদমই যায় না। এটা ৫ বছরের জন্য। আমি খারাপ করলে লোকজন আমাকে আবার বিদায় করে দেবে।

তিনি বলেন, আমার সঙ্গে ব্যারিস্টার’ শব্দটা বাদ যাবে না, এটা মরার আগ পর্যন্ত থাকবে। আমি মনে করছি আমাকে পাঁচ বছরের জন্য একটা দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন বলেন, আমার ভূমিকা আগের মতোই থাকবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, নিপীড়িত মানুষের পক্ষে কথা বলা এবং নিজের এলাকাকে যতটুকু পারা যায় বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাকে বাস্তবিক অর্থে রূপ দেওয়া।