ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

হাড় কাঁপানো শীতের মধ্যেই বৃষ্টির আভাস

দুর্ভোগে দরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষ
হাড় কাঁপানো শীতের মধ্যেই বৃষ্টির আভাস

হাড় কাঁপানো শীতের মধ্যেই দেশের বিভিন্ন বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। শীত আর হীমেল হাওয়ায় জবুথবু হয়ে পড়েছে জনজীবন। দেশের সর্বত্রে শীতের প্রকোপ বেড়েই চলেছে। গত তিন চার দিন ধরে শীতের প্রচণ্ডতায় শুধু জনজীবন মুখ থুবড়ে পড়েছে তা নয়, শীত কৃষি উৎপাদন সবজি চাষেও চরমভাবে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে চলেছে। অধিকাংশ সময় সূর্যের আলো দেখা যাইনি। চলমান শীতের তীব্রতা কমার কোনো সম্ভবনা নেই বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। বর্ধিত পাঁচ দিনের আবহাওয়া তথ্য বলছে- বৃষ্টি-বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

গতকাল বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক-এর স্বাক্ষরিত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে- সারাদেশের রাতের এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। দেশের কোথাও কোথাও দিনে ঠান্ডা পরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে। শীতের মধ্যে যানবাহন চলাচলে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়। সেদিক থেকে মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং এটি কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগে সাময়িকভাবে বিঘ্ন ঘটতে পারে। জানা গেছে, আগামী ১৭ ও ১৮ জানুয়ারি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। বৃষ্টি হলে তাপমাত্রা আরো কমে যাবে। যার ফলে শীতের অনুভূতি বেশি হতে পারে। গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গা ও কিশোরগঞ্জের নিকলিতে ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করেছে আবহওয়া অধিদপ্তর। আর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৭ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস

দিনাজপুর : একদিকে মিলছে না সূর্যের দেখা, একইসঙ্গে ঘন কুয়াশা। দিনের বেলায়ও যানবাহনকে লাইট জ্বালিয়ে চলতে হচ্ছে। এমন হাড়কাঁপানো শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দিনাজপুরের জনজীবন। গতকাল শুক্রবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিনের তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় রাস্তায় মানুষের চলাচল কমেছে। উষ্ণতার আশায় মানুষ আগুন জ্বালিয়ে শরীর গরম করে নিচ্ছেন। আবার কেউ ভিড় জমাচ্ছেন চায়ের আড্ডায়। দূরপাল্লার গাড়িগুলো চলাচল করছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। দিনের তাপমাত্রা কমে যাওয়ায়, বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া ও নিম্ন আয়ের মানুষ।

রংপুর : মাঘ মাসের শুরু হতে আরো বাকি তিন দিন। বরাবরই মাঘের শীতে কাঁপুনি বাড়ে। কিন্তু এবার পৌষের ক্রান্তিলগ্নেই হাড়কাঁপানো শীত অনুভূত হচ্ছে। গত কয়েকদিন ধরে রংপুর অঞ্চলে হিমেল হাওয়ার সঙ্গে জেঁকে বসা শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। কনকনে শীত আর হিমেল হাওয়ায় চরম বিপাকে এ অঞ্চলের শীতার্ত মানুষ। শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ছিন্নমূল মানুষদের দুর্দশাও বেড়েছে। রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে ১১ দিনের ব্যবধানে অগ্নিদগ্ধ হয়ে ৪২ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। দগ্ধ রোগীদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এদের মধ্যে বার্ন ইউনিটে ১১ জন এবং বাকি ৩১ জনকে সার্জারি, শিশু ও মহিলা ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের চিকিৎসকরা বলছেন, গত তিন দিনে ভর্তি হওয়া পাঁচজনের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এদের কারো কারো শরীরের ১০-৪০ শতাংশ আবার কারো ৪০-৬০ শতাংশ পুড়ে গেছে।

বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. শাহ মো. আল মুকিত জানান, চিকিৎসাধীন বেশির ভাগ রোগীই শীতের তীব্রতা থেকে উষ্ণতা পেতে আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হয়েছেন। প্রতি শীত মৌসুমে রংপুর অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় অগ্নিদগ্ধের এমন ঘটনা ঘটে। বর্তমানে বার্ন ইউনিটসহ হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। রংপুরের বাইরে বিশেষ করে দিনাজপুর, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁওয়ে এই অগ্নিদগ্ধের ঘটনা বেশি ঘটছে। সেখানকার চিকিৎসক ফারুক আলম বলেন, অল্প কয়েক দিন হলো রংপুর অঞ্চলে তীব্র শীত পড়েছে। শীত থেকে বাঁচতে গ্রামের মানুষ খড়কুটোয় আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করেন। সেই সঙ্গে গরম পানির ব্যবহারও বেড়ে যায়। অসাবধানতার কারণে দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের তারা সাধ্যমতো সেবা দেওয়া হচ্ছে।

রংপুর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, গতকাল সকাল ৯টায় রংপুরে দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের দিন একই তাপমাত্রা ছিল। রংপুর ছাড়াও বিভাগের সৈয়দপুর, তেঁতুলিয়া, দিনাজপুরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ চলছে।

রাজশাহী: রাজশাহীতে ঘন কুয়াশায় প্রকৃতি ধোঁয়াটে রূপ ধারণ করেছে। কুয়াশা কেটে গেলেও আকাশে মেঘ থাকায় সূর্যের কিরণ পোঁছাতে পারেনি পদ্মাপাড়ের এ শহরে। এর মধ্য হু হু করে বইছে হিমালয় ছুঁয়ে আসা কনকনে ঠান্ডা বাতাস। তাই এ বছর শৈত্যপ্রবাহ শুরুর আগেই কাঁপছে রাজশাহীর মানুষ। দিনভর উত্তরে কনকনে ঠান্ডা বাতাস কাঁপিয়ে তুলছে পথে-প্রান্তরে থাকা ছিন্নমূল ও হতদরিদ্র মানুষগুলোকে। খোলা আকাশের নিচে থাকা এ হতদরিদ্র মানুষগুলো শীতে নাকাল হয়ে পড়েছেন। একটু উষ্ণতার খোঁজে পথের পাশে খড়কুটো কুড়িয়ে আগুন জ্বেলে ঘিরে বসে থাকছেন তারা। শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে নিম্ন আয়ের মানুষ ভিড় করছেন পুরোনো শীতবস্ত্রের মার্কেটে। আর সামর্থ্যবানরা দৌড়াচ্ছেন অভিজাত মার্কেট ও শপিংমলে। হালে তাই শীতবস্ত্রের কেনাবেচাও জমে উঠেছে।

কিশোরগঞ্জ : গতকাল শুক্রবার কিশোরগঞ্জে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। কিশোরগঞ্জের হাওর অধ্যুষিত উপজেলা নিকলীতে ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। নিকলী প্রথমশ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাহেদুল ইসলাম মাসুদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি রেকর্ড করা হয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে নিকলীতে পর্যবেক্ষণাগারের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। চলতি বছরের দুদিন ধরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় এখানে। এর আগে কখনো এমন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়নি। এদিকে তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে বিপাকে পড়েছেন ‘দিন আনি দিন খাই’ ধরনের কৃষি শ্রমিক, দিনমজুর, রিকশাচালকসহ নিম্ন আয়ের মানুষজন। তীব্র শীতে তাদের রুটি-রোজগার প্রায় বন্ধ। এদের তাদের কপালে পড়েছে দুশ্চিন্তার ভাঁজ।

সিরাজগঞ্জ: তীব্র শীত, হিমেল হাওয়া ও কুয়াশায় জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। এতে শ্রমজীবী মানুষের স্বাভাবিক কাজকর্মে নেমে এসেছে স্থবিরতা। এ অঞ্চলের অসহায় ও দিনমজুর পরিবারগুলো শীতে কাহিলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সিরাজগঞ্জ এলাকায় হিমেল হাওয়া ও তীব্র শীতে জেলা ও উপজেলা শহরসহ বিভিন্ন স্থানে জনসমাগম তেমন দেখা যায়নি। শীত নিবারণে বিভিন্ন স্থানে গরম কাপড় কেনার হিড়িক পড়েছে এবং চলাচলে যাত্রী না থাকায় রিকশাসহ ছোটখাটো যানবাহন চালকরা শীতের কাপড় জড়িয়ে অবস্থান করছে। শীতের কারণে কৃষকরাও মাঠে নামতে হিমশিম খাচ্ছে। অনেক স্থানে আগুনের কুন্ড জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন মানুষ। হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ওসি এম এ ওয়াদুদ বলেন, ভোর থেকে ঘন কুয়াশায় মহাসড়কে কচ্ছপগতিতে চলাচল করছে যানবাহন। তবে দুপুরে কুয়াশা কিছুটা কেটে যাওয়ায় যান চলাচলে গতি বেড়েছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, সিরাজগঞ্জ জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এ বিষয়ে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আখতারুজ্জান আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে জেলার সবকয়টি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ৫০ হাজার কম্বল শীতার্তদের মাঝে এরমধ্যেই বিতরণ শুরু হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে এই কম্বলের আরো চাহিদা চাওয়া হবে বলে জানান তিনি।

গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল কিশোরগঞ্জের নিকলিতে এবং চুয়াডাঙ্গায় ৯ দশমিক ৬, ঢাকায় তাপমাত্রা ১৩ দশমিক ৯, যা গতকাল ছিল ১৪ দশমিক ৪ ডিগ্রি। এদিকে ১২ ডিগ্রি তাপমাত্রার নিচে থাকা অঞ্চলগুলোর মধ্যে আছে- পাবনার ঈশ্বরদীতে ৯ দশমিক ৮, দিনাজপুরে ১০, রাজশাহীতে ১০ দশমিক ৫, রাজশাহীর বদলগাছিতে ১০ দশমিক ৭, যশোর, সীতাকুণ্ড ও মাদারীপুরে ১১, খেপুপাড়া, কুমারখালি ও সৈয়দপুরে ১১ দশমিক ৩, বগুড়া ১১ দশমিক ৪, বরিশালে ১১ দশমিক ৫, টাঙ্গাইলে ১১ দশমিক ৮, তেঁতুলিয়ায় ১১ দশমিক ৯, ময়মনসিংহ ও ফরিদপুরে ১১ দশমিক ২, কুমিল্লা ও গোপালগঞ্জে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত