ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মন্ত্রীদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত সচিবালয়

ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হবেন মন্ত্রীরা
মন্ত্রীদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত সচিবালয়

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে মন্ত্রিদের শপথ পড়ানো হয়। নতুন মন্ত্রীদের দপ্তর বণ্টন হলেও শুক্র-শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় মন্ত্রণালয়ে আসতে পারেননি মন্ত্রীরা। তবে আজ রোববার সচিবালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দপ্তরে আসবেন মন্ত্রীরা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিজ নিজ দপ্তর হয়েছে। নতুন মন্ত্রীদের স্বাগত জানাতে আগে থেকেই ফুলের তোড়া আর মিষ্টি নিয়ে অপেক্ষায় থাকবেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ঊধর্?তন কর্মকর্তারা। তাদের সঙ্গে যোগ দেবেন সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দর্শনার্থীরা। মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরিচিতি সভায় মিলিত হবেন। সরকারের কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সবার সহায়তা চাইবেন নতুন মন্ত্রীরা। গত বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে ঘুরে দেখা গেছে, নতুন মন্ত্রীদের বরণের লক্ষ্যে প্রস্তুতি চলছিল প্রত্যেক মন্ত্রণালয়ে। গতকাল শনিবার ছুটির দিনেও পুরোনো মন্ত্রীদের নামফলক পরিবর্তন করে নতুন মন্ত্রীদের নামফলক লাগানো হয়। ঝেড়ে-মুছে ঝকঝকে-তকতকে করা হয় মন্ত্রণালয়। সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব, উপসচিবসহ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট প্রত্যেক কর্মকর্তা-কর্মচারী মন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানাবেন।

মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ছাড়াও মন্ত্রীদের শুভেচ্ছা জানাতে সাধারণ দর্শনার্থীর পাশাপাশি দলীয় নেতাকর্মীরাও উপস্থিত থাকবেন। প্রায় প্রত্যেক মন্ত্রণালয়ে লোকারণ্য থাকবে। একাদশ মন্ত্রিসভায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করা ডা. দীপু মনি এবার পেয়েছেন সমাজকল্যাণের ভার। পূর্ণমন্ত্রী হওয়া মুহিবুল হাসান চৌধুরীকে শিক্ষামন্ত্রী করা হয়েছে। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। মোহাম্মদ আলী আরাফাতকে করা হয়েছে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী। এর মধ্যে প্রথমবার মন্ত্রী হয়েছেন মো. আব্দুস শহীদ কৃষি, র. আ. ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী গৃহায়ন ও গণপূর্ত, মো. আব্দুর রহমান মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, আনিসুল হক আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক, মুহাম্মদ ফারুক খান বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন, নারায়ণ চন্দ্র চন্দ ভূমি, ফরহাদ হোসেন জনপ্রশাসন, তাজুল ইসলাম স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়, সাধন চন্দ্র মজুমদার খাদ্য, স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং ফরিদুল হক খান ধর্ম মন্ত্রণালয়, নাজমুল হাসান যুব ও ক্রীড়া এবং সামন্ত লাল সেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন।

অন্যদিকে প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে নসরুল হামিদ, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, জুনাইদ আহমেদ পলক এবং জাহিদ ফারুক বিদায়ি মন্ত্রিসভায়ও যথাক্রমে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, নৌ পরিবহন, তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন।

এছাড়া প্রথমবার মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাওয়া কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাকে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক, সিমিন হোসেন রিমিকে মহিলা ও শিশুবিষয়ক, শফিকুর রহমান চৌধুরীকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান, আহসানুল ইসলাম টিটুকে বাণিজ্য, মো. মহিববুর রহমানকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ এবং বেগম রুমানা আলীকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। মন্ত্রীদের স্বাগত জানাবেন প্রত্যেক মন্ত্রণালয়ের সচিবরা।

মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদে এবার যারা মন্ত্রী হয়েছেন তাদের সামনে ভূ-রাজনীতি ও অর্থনীতি সংকট নিরসনে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর স্বপে?র সোনার বাংলাদেশ গঠনে আগামী ৫ বছর দেশের অবকাঠামো খাতে উন?য়নে চমক থাকতে হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে দেশের প্রতিটি গ্রামে শহরের সব নাগরিক সুবিধা পৌঁছে দেয়ার কর্মসূচি বাস্তবায়নে সর্বাত্মক ভূমিকা পালন করবেন মন্ত্রীরা।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাওয়ায় মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা ভোটের জন্য তাদের নির্বাচনি এলাকায় যান, এতে প্রাণহীন হয়ে পড়েছিল সচিবালয়। মন্ত্রিত্ব পেয়েই গত শুক্রবার ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অপর্ণ করেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে যান মন্ত্রীরা। শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মন্ত্রিপরিষদ সদস্যরা টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজার জেয়ারত করতে যান। মন্ত্রিদের প্রথম অফিসে কর্মচঞ্চল হয়ে উঠবে সচিবালয়ে। দুই মাসের ফাঁকা দৃশ্যপট পাল্টে যাবে।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসনের সংসদ সদস্য র. আ. ম. উবায়দুল মোক্তাদির চৌধুরী। মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীদের ফুল দিয়ে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত রয়েছে। এ বিষয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, আমরা মন্ত্রীকে ফুল দিয়ে মন্ত্রণালয়ে স্বাগত জানাব। এরপর বিভিন? দপ্তর থেকে আসা প্রধানদের নিয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে কুশল বিনিময় করব। নতুন মন্ত্রণালয় পাওয়া মন্ত্রীদের জন্য যে ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া দরকার তা নেওয়া হয়েছে।

কাজী ওয়াছি উদ্দিন আরো বলেন, মানুষের আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিতে বর্তমান সরকারের মিশন ও ভিশন বাস্তবায়নের দিকগুলো মন্ত্রীর সামনে তুলে ধরা হবে। তার নেতৃত্বে মন্ত্রণালয়ে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হবে। কারণ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী নেতা হিসেবে বর্তমান মন্ত্রিকে গৃহায়ন ও গণপূর্তের দায়িত্ব দিয়েছেন।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের নতুন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) আসনের সংসদ সদস্য মো. মহিববুর রহমান। প্রতিমন্ত্রীকে বরণ করে নিতে মন্ত্রণালয় প্রস্তুত। এ বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, প্রতিমন্ত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছা বিনিময় ও বরণ করে নেওয়া হবে। সেই লক্ষ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের সব কর্মকর্তাকে সকাল থেকে সচিবালয়ে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।

জানা গেছে, নতুন নিয়োগ পাওয়া মন্ত্রীদের সহকারী একান্ত সচিবরা (এপিএস) এসব বিষয়ে মনিটরিং শুরু করেছেন। নতুন মন্ত্রীর ব্যবহারের জন্য তোয়ালে থেকে শুরু করে অন্য আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র গতকাল প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। সচিবালয়ে মন্ত্রীদের পিএস হিসেবে এতদিন যারা দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের পরিবর্তন আসছে। এছাড়া মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা চিন্তায় রয়েছেন, নতুন মন্ত্রী এসে কোনো রদবদল এলে, অনেকের দায়িত্বের ক্ষেত্রে ভাটা পড়বে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, আজ (রোববার) মন্ত্রীরা তাদের নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ে প্রবেশ করবেন। মন্ত্রণালয়ের সচিবরা মন্ত্রীদের ফুল দিয়ে স্বাগত জানাবেন। এ ছাড়াও মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিভিন্ন দপ্তরের প্রধানরা মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।

মন্ত্রীদের আগমন ঘিরে আজ (রোববার) সচিবালয়ে একদিকে ফুল দিয়ে বরণ উৎসবের পাশাপাশি মিডিয়াসহ অন্য শুভাকাঙ্ক্ষীদের পদচারণে মুখর থাকবে। সকাল ৯টার আগেই বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সচিবালয়ে হাজির হওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। কোনো ত্রুটি যেন কারো চোখে না পড়ে, সেজন্য সব মন্ত্রণালয়ে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

সচিবালয়ে প্রবেশ করবে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের গাড়িবহর। প্রচলিত নিয়মে স্বরাষ্ট্র রমন্ত্রণালয়ের স্টিকার ছাড়া সচিবালয়ে কোনো গাড়ি প্রবেশের অনুমতি নেই। মূলত নতুন ও পুরোনো মন্ত্রীরা দিনব্যাপী সচিবালয়ে ব্যস্ত সময় পার করবেন।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের কাজের পরিধি বাড়তে শুরু করবে।

বিশেষ করে চলতি সপ্তাহেই একনেক, অর্থনৈতিক-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা, ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা, জাতীয় পুরস্কার-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা ও আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি পুনর্গঠন করা হবে। এছাড়া নতুন ও পুরোনো মন্ত্রীদের বেতন-ভাতাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার ফাইল নতুন করে খুলতে হবে। প্রসঙ্গত, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও পূর্ণমন্ত্রী ২৫ জন আর প্রতিমন্ত্রী ১১ জন করা হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত