ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দ্বাদশ নির্বাচনে ভরাডুবি

আবারো প্রকাশ্যে এলো দেবর ভাবির দ্বন্দ্ব

আবারো প্রকাশ্যে এলো দেবর ভাবির দ্বন্দ্ব

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর জাতীয় পার্টি (জাপা) প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ এবং তার দেবর দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের দ্বন্দ্ব আবারো প্রকাশ্যে এসেছে। দ্বাদশ সংসদ ভোটে ভাবি রওশন এরশাদকে বাহিরে রেখে জিএম কাদেরের নেতৃত্বে ভোটে ভরাডুবির পর নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব আরো বেড়েছে।

সূত্র জানায়, নির্বাচনে ভরাডুবির পর জাপায় নতুন করে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। ভরাডুবির জন্য চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনে নামায় দলের কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ ও প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভরায়কে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তবে আন্দোলনে নামা পরাজিত প্রার্থীরা আজ রোববার বৈঠক ডেকেছেন। জাপা আগামীতে কীভাবে চলবে, তা বৈঠকে ঠিক করা হবে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। তবে যে কোনো ধরনের বৈঠকে যোগ দেওয়া থেকে বিরত থাকতে সতর্কতা জারি করেছে জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাপা। তবে পর্দার আড়ালে থাকা রওশন এরশাদের ইশারায় আন্দোলন আরো বেগবান হবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা। রওশন পন্ত্রী নেতারা বলেন, এবার রওশন এরশাদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত ছিলেন। কিন্তু তিনি পার্টির মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করতে দেননি। অথচ পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের গত চার বছরে তার সাংগঠনিক দুর্বলতা, রাজনৈতিক অদূরদর্শিতা এবং অদক্ষতার কারণে জাতীয় পার্টিকে ধ্বংসের শেষ প্রান্তে নিয়ে গেছেন। তারই প্রতিফলন ঘটেছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। তারা বলেন, রওশন এরশাদ জাতীয় সম্মানের সহিত জনগণের কাছে টিকে রাখতে পারবেন।

এদিকে গত শুক্রবার দলের দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের দলীয় গঠনতন্ত্রে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে কাজী ফিরোজ রশীদ ও সুনীল শুভরায়কে কো-চেয়ারম্যান, প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ সব পদণ্ডপদবি থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন, যা এরইমধ্যে কার্যকর হয়েছে।

৭ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতা করে অংশ নেয় জাপা। দলটিকে ছেড়ে দেওয়া ২৬ আসন থেকে নৌকার প্রার্থী প্রত্যাহার করে নেয় ক্ষমতাসীনরা। এর ১১টিতে জয়ী হয়েছে জাপা।

বাকি ১৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে হেরে গেছেন লাঙ্গলের প্রার্থীরা। একটিতে পরাজিত হয়েছেন নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর বিপক্ষে। ছাড়ের আসনের বাইরে ২৩৯ প্রার্থী ছিল লাঙ্গলের। এর মধ্যে ২৩৩টিতেই জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।

দলটির প্রার্থীরা অভিযোগ করেছেন, নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় টাকা পেয়েছিল জাপা। প্রার্থীদের নির্বাচনের মাঠে নামিয়ে জিএম কাদের, মুজিবুল হক চুন্নুরা সহায়তা দূরে থাক; খবর পর্যন্ত নেননি। তারা নিজের এবং আত্মীয়দের বাইরে দলের অন্য নেতাদের জয় নিশ্চিতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতার চেষ্টা করেননি।

প্রার্থীরা গত বুধবার জিএম কাদেরের বনানী কার্যালয় ঘিরে বিক্ষোভ করেন। পুলিশ তাদের কার্যালয়ে প্রবেশ করতে দেয়নি। সেদিন কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলাসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা বিক্ষোভে অংশ নেন। কাজী ফিরোজ রশীদ তাতে যোগ না দিলেও আগের রাতে তার নেতৃত্বেই বৈঠক হয়েছিল।

অব্যাহতির খবরে তিনি জানিয়েছেন, এ নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন না। দল ঠিক করতে হবে। কারও ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলে জাতীয় পার্টি ব্যবহৃত হতে পারে না।

সুনীল শুভরায় ব্যঙ্গ করে ফেসবুকে লিখেছেন, জাতীয় পার্টি নামের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থেকে আমাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এই অব্যাহতিপত্র কচুপাতার চেয়েও মূল্যহীন।

লাঙ্গলের প্রার্থীদের অভিযোগ, তাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা ও প্রতারণা করা হয়েছে। পথে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা বলেছেন, প্রার্থী মনোনয়নে দুর্নীতি ও অর্থ কেলেঙ্কারি অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা আসন ছাড় না পেলেও জিএম কাদেরের স্ত্রী শেরীফা কাদেরকে ঢাকা-১৮ আসন ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। অন্য প্রার্থীরা সহায়তা না পেলেও এই আসনে জোর প্রচার ছিল। কিন্তু বিপুল ভোটে হেরে জামানত হারিয়েছেন শেরীফা।

এদিকে নির্বাচনে মহাবিপর্যের পর আবারও বিভক্তির পথে জাতীয় পার্টি। দলের একটি অংশ চেয়ারম্যান ও মহাসচিবকে বাদ দিয়ে রোববার রাজধানীতে সভা ডেকেছে। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, তারা সভায় কী সিদ্ধান্ত নেন, তা দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গতকাল শনিবার সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে চুন্নু বলেন, যৌক্তিক কারণেই কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ ও প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়কে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

গত বুধবার যখন জাতীয় সংসদে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিবসহ দলের এমপিরা শপথ অনুষ্ঠানে ছিলেন, তখন বনানী কার্যালয়ে শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছিলেন জাতীয় পার্টির কয়েকজন নেতাকর্মী। নির্বাচনে ভরাডুবির জন্য চেয়ারম্যান ও মহাসচিবকে দায়ী করে তাদের দল থেকে পদত্যাগের সময় বেঁধে দেন বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব আরো জানিয়েছেন, রোববার তাদের কোনো সভা নেই। কথা বলেন, দলের দুই নেতাকে বহিষ্কার করা নিয়েও। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি হবে সংসদের বিরোধীদল। স্বীকৃতি না পেলেও বিরোধীদল হিসেবে ভূমিকা রাখবেন তারা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত