ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মন্ত্রীদের পদচারণায় প্রাণ ফিরল সচিবালয়ে

মন্ত্রীদের পদচারণায় প্রাণ ফিরল সচিবালয়ে

প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে দ্বাদশ সংসদের মন্ত্রিরা আনুষ্ঠানিকভাবে দাপ্তরিক কার্যক্রম শুরু করেছেন। গতকাল সচিবালয়ে নয়া মন্ত্রিদের আগমনে সব মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ব্যস্ত ছিলেন। মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের ঊধর্তন কর্মকর্তারা ফুলেল শুভেচ্ছা জানান মন্ত্রীদের। এরপর নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে কর্মকর্তাদের পরিচয় শেষে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড মন্ত্রীর সামনে তুলে ধরা হয়।

গতকাল সচিবালয়ে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, শীতের সকালে মন্ত্রীরা নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ে এসেছেন। তাদের আগমনে শুভেচ্ছা জানাতে সচিবালয়ের হাজার হাজার মানুষ প্রবেশ করেন। সেখানে সংস্থাগুলোর কর্মকর্তারা ছাড়াও বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা মন্ত্রীদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে শুরু হয়ে বিকাল পর্যন্ত মন্ত্রীদের ফুলের শুভেচ্ছা দিতে দেখা যায়। কিছু মন্ত্রীর কাজ থাকায় দুপুরের মধ্যেই সচিবালয় ত্যাগ করেন।

তবে অধিকাংশ মন্ত্রী গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন। সচিবালয়ের ভেতরে থাকা মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে অধিকাংশ মন্ত্রী এলেও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ডা. দীপু মনি দেখা যায়নি। ওই মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান মন্ত্রী অসুস্থ থাকার কারণে প্রথম দিনেই মন্ত্রণালয়ে আসতে পারেননি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রার্থী হওয়ায় অনেক মন্ত্রী নির্বাচনী এলাকায় গিয়েছিলেন, এতে সচিবালয় ছিল প্রায় ফাঁকা। তবে নতুন সরকারের মন্ত্রীরা প্রথম দিনে অফিসে আসায় দৃশপট পাল্টে গেছে সচিবালয়ের। লোকে লোকারণ্য ছিল সচিবালয় অঙ্গন। যানজট ছিল চোখে পড়ার মতো। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের নতুন মন্ত্রী র, আ, ম, উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান ওই মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন। ভূমিমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দকে মন্ত্রণালয়ের সচিব ভূমি সচিব মোঃ খলিলুর রহমান ফুলের শুভেচ্ছা জানান। এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুস সবুর মন্ডল, ভূমি আপীল বোর্ডের চেয়ারম্যান এ কে এম শামিমুল হক এবং ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আনিস মাহমুদ। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আব্দুর রহমানকে শুভেচ্ছা জানান সচিব মোহাং সেলিম উদ্দিন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ফরহাদ হোসেনের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন ওই মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী। এছাড়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমানকে শুভেচ্ছা জানান সচিব মো. কামরুল হাসান। সব মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোর ঊধ্বর্তন কর্মকর্তা সম্মেলন কক্ষে আলোচনা করেন। পুরোনো মন্ত্রীদের মধ্যে যারা বাদ পড়েছেন তাদের নামফলক পরিবর্তন করে নতুন মন্ত্রীদের নামফলক লাগানো হয়েছে। ঝেড়ে-মুছে ঝকঝকে-তকতকে করা হয়েছে মন্ত্রণালয়। প্রত্যেক মন্ত্রণালয়ে লোকারণ্য ছিল। সচিবালয়ের চারপাশে গাড়ির চাপ থাকায় যানজট তৈরি হয়। এতে সচিবালয়ের ভেতরে গাড়ি-জট দেখা যায়। শিক্ষা ভবনের সামন থেকে সচিবালয়ের ভেতরে প্রবেশের কয়েক মিনিটের পথ আধা ঘণ্টা সময় লেগেছে। মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরিচিতি সভা শেষে সরকারের কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সবার সহায়তা চান নতুন মন্ত্রীরা।

গতকাল রোবববার নতুন মন্ত্রিসভায় চতুর্থবারের মতো সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়ে প্রথম দিনেই সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। এখন এই সরকারের সামনে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। দেশের অর্থনীতিকে বিপন্ন করার ষড়যন্ত্রও আছে। এগুলোকে ভয় পেলে চলবে না। সাহস রাখতে হবে। দেশি-বিদেশি চাপ ও ষড়যন্ত্র অতিক্রম করার ক্ষমতা, সাহস ও সামর্থ্য বর্তমান সরকারের আছে।

ওবায়দুল কাদেরর মতোই সচিবালয়ে প্রথম কর্মদিবসে সাংবাদিকদের সামনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন দক্ষ ও দূরদর্শী নেতা। তিনি মাথানত করে কারও সঙ্গে কথা বলেন না। বাংলাদেশকে তিনি হৃদয় দিয়ে ভালোবাসেন বলেই মাথা উঁচু করে কথা বলেন। যে কারণে দেশি-বিদেশি চাপ তার কাছে কোনো চাপ নয়।

জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের বলেছেন, ক্যাডার বৈষম্য দূর করতে যথার্থভাবে চেষ্টা করেছি। একই সঙ্গে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর অর্গানোগ্রাম পরিবর্তন করবো। এগুলো পরিবর্তন করতে হলে নিজ নিজ মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব আসতে হয়। আমাদের অধিকাংশ মন্ত্রণালয় চার থেকে পাঁচজন করে অতিরিক্ত সচিব আছেন। কিন্তু সেখানে হয়তো পদ আছে দুটি। তাই সেখানে আমাদের বেশি করে পদায়ন করতে হচ্ছে। আমরা এবার প্রথম দিকেই মন্ত্রণালয়গুলোকে আহ্বান করবো বাস্তবতার নিরিখে তারা যাতে আমাদের কাছে তাদের অর্গানোগ্রামে কী পরিবর্তন দরকার যুগোপযোগী করে সেটি যাতে বাস্তবভিত্তিক হয়, সেভাবে আমাদের কাছে প্রস্তাব পাঠালে দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা অর্গানোগ্রামটাকে আপডেট করব।

তিনি আরো বলেন, গত ৫ বছরে মন্ত্রণালয়ের কাজগুলো বুঝে নিয়েছিলাম। বাজেট বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা ব্যাপক প্রকল্প গ্রহণ করেছি। আমাদের সরকারি কর্মকর্তারা সেগুলো অত্যন্ত দক্ষতা ও যোগ্যতার সঙ্গে সম্পন্ন করতে পেরেছে।

সচিবালয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেছেন, ভূমি মন্ত্রণালয় ও এর আওতাভুক্ত দপ্তর/সংস্থায় কর্মরত আমরা সবাই একটা টিম হিসেবে কাজ করে প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পিত ইশতেহারের অংশ স্মার্ট ভূমি ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়নে কাজ করব।

সচিবালয়ে প্রথম কর্মদিবসে নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, সবাই সিনসিয়ারলি কাজ করলে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। আপনাদের সবার কাছেই অনুরোধ, এ মন্ত্রণালয়ে যারা কর্মকর্তা আছেন এবং যারা বাইরে আছেন, আপনারা যেকোনো সময় আমার অফিসে চলে আসবেন। আপনাদের জন্য আমার দরজায় কোনো প্রটোকল থাকবে না।

প্রায় সব মন্ত্রীর চেয়ে প্রথম কর্মদিবসে কিছুটা ব্যতিক্রম ছিলেন নতুন রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম। মন্ত্রীরা সচিবালয়ে নিজ নিজ দপ্তরে অফিস করছেন। প্রায় প্রত্যেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী প্রথম দিনে অফিসে এসেই সাংবাদিকদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেছেন। তবে রেলমন্ত্রী সাংবাদিকদের এড়িয়ে যান।

সচিবালয়ে প্রথম কার্যদিবসে মন্ত্রীরা যখন ফুলের শুভেচ্ছা নিয়ে ব্যস্ত তখন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মোঃ মহিববুর রহমান মন্ত্রণালয় এসেই ছুটে যান ঢাকার তেজগাঁওয়ের অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে। সেখানে গিয়ে ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান বলেছেন, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে আছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আপনাদের অবস্থা দেখতে এসেছি। যেকোনো দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থাকবে সরকার। গত শনিবার ঢাকায় তেজগাঁওয়ের মোল্লাবাড়ী বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন শেষে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে মানবিক সহায়তা হিসেবে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণকালে এসব কথা বলেন ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী।

সিন্ডিকেট ভেঙে শক্ত হাতে দমন করার ইঙ্গিত দিয়ে নতুন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেছেন, স্মার্ট বাংলাদেশে আমরা স্মার্টবাজার ব্যবস্থাপনা করতে চাই। বাংলাদেশে কোনো সিন্ডিকেট থাকতে পারবে না। কেউ কোনো কারসাজি করে বাজারে অস্থিতিশীলতা তৈরি করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানা গেছে, নতুন মন্ত্রীদের জন্য নতুন একান্ত সচিব (পিএস) যোগ দেবেন। ইতোমধ্যে প্রায় ১০০ জন পিএস’র তালিকা করা হয়েছে। কারণ নতুন মন্ত্রীরা আগের মতো নিজেদের পছন্দের পিএস পাচ্ছেন না। জনপ্রশাসন থেকে পিএস নিয়োগ দেওয়া হবে। তবে সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) পছন্দ করে নিয়োগ দিতে পারবেন।

প্রসঙ্গত, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও পূর্ণমন্ত্রী ২৫ জন আর প্রতিমন্ত্রী ১১ জন করা হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত