ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দ্বাদশে নির্বাচিত স্বতন্ত্রদের জোট : আতঙ্ক জাপায়

দ্বাদশে নির্বাচিত স্বতন্ত্রদের জোট : আতঙ্ক জাপায়

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির (জাপা) ভরাডুবির পর সংসদের বিরোধীদল কে হবে এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে চলছে আলোচনা সমালোচনা। এবার ভোটে মাত্র ১১টি আসন পেয়েছে জাপা। অন্যদিকে ৬২টি আসন পেয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। ফলে এখন স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে কোনো জোট হলে সংসদে প্রাধন বিরোধীদলের মর্যাদা হারাবে জাপা।

সূত্র জানায়, বেশ কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী একটি জোট করার প্ররিকল্পনা করছেন। যদিও এটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। তবে জোটটি হয়ে গেলে তারা জাতীয় সংসদের বিরোধীদল হবে। এ কারণে স্বতন্ত্র জোটে আতঙ্কে রয়েছে জাপা।

জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, সংসদে একমাত্র বিরোধীদল তারাই। স্বীকৃতি না পেলেও জাপা বিরোধীদলের ভূমিকা পালন করবে। চুন্নু বলেন, সংসদে বিরোধীদল অবশ্যই আমরা। কারণ আমরা ছাড়া যারা আছে, তারা সবাই ক্ষমতাসীন দল। স্বতন্ত্রদের মধ্যে তিনজন বাদে সবাই আওয়ামী লীগের পদণ্ডপদবি নিয়ে নির্বাচন করেছেন। এমনিতেই নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্ন আছে। এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের পদণ্ডপদবি নিয়ে যদি স্বতন্ত্র এমপিরা বিরোধীদল গঠন করতে চাইলে সেটা আরও খারাপ হবে। তিনি বলেন, সংসদের বিরোধীদল স্পিকার নির্ধারণ করেন। সেটা কার্যবিধি অনুযায়ী স্পিকারের এখতিয়ার। সেটা স্পিকার চিন্তা করুক। কিন্তু আমরাই বিরোধীদল। আমাদের ভূমিকা বিরোধীই থাকবে। আমরা এবার নির্বাচনে কোনো জোট করিনি। আমরা আলাদাভাবেই নিজেদের পরিচিতি দিয়ে নির্বাচন করেছি। কাজেই আমরাই একমাত্র বিরোধীদল, যোগ করেন চুন্নু। জানা যায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় ২২২টি আসন পেয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগের পর সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছে জাতীয় পার্টি। এই সবচেয়ে বেশি আসনের সংখ্যা মাত্র ১১। এ কয়টি আসনের বিপরীতে এবারেই প্রথম বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তারা পেয়েছেন ৬২টি আসন। এছাড়া আওয়ামী লীগের শরিক দল হিসেবে রাশেদ খান মেনন এবং রেজাউল করিম তানসেন একটি করে আসন পেয়েছেন। এর বাইরে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি পেয়েছে একটি আসন।

আওয়ামী লীগের বিপরীতে এবারের সংসদ নির্বাচনে আসনের ভিত্তিতে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছেন স্বতন্ত্ররা। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের কোনো দল না থাকায়, বিরোধীদল হিসেবে তাদের আবির্ভাব নিয়ে চলছে নানা রকমের কানাঘুষা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধীদল কারা হবে এবং বিরোধীদলীয় নেতা কে হবেন, তা এখনো স্পষ্ট হয়নি। এই সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগের পর সবচেয়ে বেশি ৬২টি আসন পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করা ব্যক্তিরা। তাদের মধ্যে চারজন ছাড়া বাকি সবাই হয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কমিটির পদধারী নেতা, নয়তো সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। স্বতন্ত্ররা মিলে জোটবদ্ধ (গ্রুপ) হলে তারাই হবে প্রধান বিরোধীদল এবং তাদের একজন হবেন বিরোধীদলীয় নেতা।

একাধিক স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত চারজন সংসদ সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার কারা প্রধান বিরোধীদলের আসনে বসতে যাচ্ছে, তা অনেকটা নির্ভর করছে সংসদ নেতা ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার ওপর। কারণ, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের মধ্যে ৫৮ জনই আওয়ামী লীগের। তারা দলীয় প্রধানের নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছেন।

জাতীয় সংসদে সরকারের বিরোধিতাকারী দলগুলো বিরোধীদল হিসেবে পরিচিত। বিরোধীদল হতে হলে ন্যূনতম কতজন সংসদ সদস্য থাকতে হবে, সেটি আইন বা জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিতে উল্লেখ নেই। তবে বিরোধীদলের নেতা কে হবেন, তা উল্লেখ আছে।

জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালি বিধি অনুযায়ী, ‘বিরোধীদলের নেতা অর্থ স্পিকারের বিবেচনামতে যে সংসদ সদস্য সংসদে সরকারি দলের বিরোধিতাকারী সর্বোচ্চসংখ্যক সদস্য নিয়ে গঠিত ক্ষেত্রমতো দল বা অধিসংঘের নেতা।

এছাড়া ‘বিরোধীদলের নেতা এবং উপনেতা (পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার)’ আইনেও একই সংজ্ঞা দেওয়া আছে। বিরোধীদল হতে হলে ন্যূনতম কতজন সংসদ সদস্য থাকতে হবে, সেটি আইন বা জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিতে উল্লেখ নেই। তবে বিরোধীদলের নেতা কে হবেন, তা উল্লেখ আছে।

আইন বিশেষজ্ঞ জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সাবেক যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ হোসেন বলেন, সংসদে বিরোধীদল বলে কোনো কথা নেই। এ ধরনের কোনো টার্মও নেই। বলা আছে বিরোধীদলের নেতার কথা। এই বিরোধীদলের নেতা হওয়ার জন্য দলের কোনো প্রয়োজন নেই। সংসদে যারা বিরোধীপক্ষ থাকবে তারা যাকে নির্বাচন করবে তিনি বিরোধীদলের নেতা হতে পারবেন।

কার্যপ্রণালি বিধিতে বিরোধীদলের মর্যাদা পেতে হলে এককভাবে কয়টি আসন পেতে হবে, তা সুনির্দিষ্ট করা হয়নি। বিরোধীদলের স্বীকৃতির বিষয়টি স্পিকারের একক এখতিয়ারের বিষয়। তবে প্রথা বা রেওয়াজ অনুযায়ী, সরকারি দলের পর যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠ, সেই দলই প্রধান বিরোধীদল এবং সেই দলের নেতা বিরোধীদলীয় নেতার মর্যাদা লাভ করেন।

বাংলাদেশের বিগত ১১টি সংসদের মধ্যে প্রথম ও ষষ্ঠ সংসদে কোনো বিরোধীদল ছিল না। ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৯৩টি আসন পেয়েছিল। সংসদীয় দল ও গ্রুপ সম্পর্কে প্রথম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনকালেই বিতর্ক ওঠে। সরকার দলীয় একজন সদস্য সংসদে সরকারের বিরোধিতাকারী সদস্যদের ‘তথাকথিত বিরোধীদল’ হিসেবে আখ্যা দিলে সরকারের বিরোধিতাকারী গ্রুপের এক সদস্য আপত্তি তুলে বলেছিলেন, ‘আমরা সরকার কর্তৃক স্বীকৃত বিরোধীদল। তিনি যুক্তি হিসেবে তাদের নেতার অনুকূলে সংসদে একটি কক্ষ বরাদ্দ হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। ওই যুক্তিতে জাতীয় লীগের এমপি আতাউর রহমান খানকে তাদের নেতা উল্লেখ করে বিরোধীদলীয় নেতার স্বীকৃতি দাবি করেন। বিষয়টি নিয়ে সংসদে ২০ মিনিটের বিতর্কও হয়। বিতর্কের সমাপনী বক্তৃতায় সংসদ নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘আতাউর রহমান খান একা এক দলের একজন, আরেকদলের একজন, আর কয়েকজন নির্দলীয় সদস্য মোট পাঁচ-সাতজন সদস্য সংসদ ভবনে একটি কক্ষে একটি জায়গায় বসতে চেয়েছেন এবং এ ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। সংসদ নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধুর যুক্তি ছিল, ২৫ জনের কম সদস্য নিয়ে গঠিত কোনো দলকে বিরোধীদল হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া যায় না। তবে ২৫ জনের কম সদস্য নিয়ে কোনো দল গঠিত হলে এবং ওই দলে কমপক্ষে ১০ জন সদস্য থাকলে ওই দলকে পার্লামেন্টারি গ্রুপ বলা যেতে পারে। কিন্তু সংসদীয় দল বলা যাবে না। যার প্রেক্ষাপটে প্রথম সংসদে কোনো বিরোধীদল ছিল না। অপরদিকে ষষ্ঠ সংসদে বিএনপির বাইরে একটি রাজনৈতিক দলের একজন মাত্র সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়। ১১ দিনের ওই সংসদেও কোনো বিরোধীদল ছিল না।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত