ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

জাপায় দোষারোপের রাজনীতি

জাপায় দোষারোপের রাজনীতি

নির্বাচনে ভরাডুবি ও অনিয়মসহ নানা অভিযোগে জাতীয় পার্টির পরাজিত প্রার্থীরা দলের মহাসচিব ও চেয়ারম্যানকে দায়ী করছে। এ নিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। এরই মধ্যে মুখ খুললেন দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। তিনি বলেন, বাইরের কারো ইন্ধনে জাতীয় পার্টিকে দুর্বল করার চেষ্টা চলছে। এর আগে গত রোববার দুপুরে বিশেষ সভা করেন জাপার পরাজিত প্রার্থীরা। সেখানে নির্বাচনে ভরাডুবির জন্য জাপা মহাসচিব ও চেয়ারম্যানকে দায়ী করেন তারা। গতকাল সোমবার এ প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে গণমাধ্যমকে চুন্নু বলেন, ‘নির্বাচনে কাঙ্ক্ষিত ফল পাইনি। সেই বিষয়ে আমার ও চেয়ারম্যানের মধ্যে দায়-দায়িত্ব আছে। সেই দায়-দায়িত্ব নিয়ে আমরা কথা বলতে পারতাম। আমরা ঘরের মধ্যে আলোচনা করতে পারতাম। ফোরামে আলোচনা করতে পারতাম, কিন্তু যেটা করছে সেটা আমার মনে হয় বাইরে থেকে কারো ইন্ধন আছে। পার্টিকে দুর্বল করার জন্য, কারো ইন্ধন আছে। না হলে এ ধরনের কথা বলার কোনো যুক্তি নেই। কারা ইন্ধন দিচ্ছে এটা এখনই বলতে পারব না। এটা এখনই বলা মুশকিল, অনুমানের ওপর বলছি।’

ভোটে জাপাকে কেউ অর্থ দেয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, কেউ আমাদের ভোট করতে টাকা দেয়নি। ব্যবসায়ীরাও দেয়নি। কেউ একটা পয়সা দিয়েছে, অসম্ভব। চুন্নু বলেন, আমরা পরাজিত প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলাম। তার আগেই তারা ফরাসি বিপ্লবের মতো বিপ্লব আরম্ভ করে দিয়েছে। দলের ভাঙনের গুঞ্জন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ তিনবার চারবার ভাঙছে। বিএনপিও অনেক বার ভাঙছে এটা চলমান প্রক্রিয়া। একটা দল ট্রেনের মতো যাচ্ছে। সেখান থেকে কোনো কোনো যাত্রী নেমে যায়, নতুন যাত্রী ওঠে। এটা কোনো বিষয় নয়। দল ভাঙছে না, কোন জেলার সভাপতি সেক্রেটারি আসছে, প্রেসিডিয়াম মেম্বার সংখ্যাগরিষ্ঠ কেউ বিবৃতি দেয়নি। নির্বাহী সদস্যরাও বিবৃতি দেয়নি। সাংগঠনিক ভাঙা-গড়া একটা প্রক্রিয়া। কতিপয় প্রার্থী যারা ভেবেছে আমরা টাকা পেয়েছি, ওদের টাকা দেইনি। এটাই কারণ, অন্য কোনো কারণ নেই। এখানে ভাঙা ভাঙির কোনো বিষয় নেই।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে জাতীয় পার্টি ক্ষমতাসীনদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি বাংলাদেশের কোনো লোক যদি বলতে পারে আমি বা চেয়ারম্যান কারো কাছ থেকে টাকা নিয়েছি দলের জন্য বা পার্টিকে দেওয়ার জন্য তাহলে আমি পদত্যাগ করব।

গতকাল দুপুরে বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে এ চ্যালেঞ্জ জানান চুন্নু। এর আগে রোববার নির্বাচনে ভরাডুবি, অনিয়মসহ নানা অভিযোগে জাপার পরাজিত প্রার্থীরা বিশেষ সভা করেন। সেখানে তারা অভিযোগ করেন ক্ষমতাসীনদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে হাইকমান্ড।

এ বিষয়ে চুন্নু বলেন, এইগুলো হলো গসিপিং। অনেকেই মনে করেছে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যেহেতু আমাদের কথাবার্তা হয়েছে, ২৬টা সিট দিয়েছে। তাদের ধারণা আমাদের অনেক টাকা দিয়েছে। শত শত কোটি টাকা দিয়েছে, প্রার্থীদের কেন আমরা টাকা দিলাম না। এটা তাদের মনের আসল ব্যথা। ইলেকশন ঠিকমত হয় নাই, তারা পাস করে নাই এইটা আসল ব্যথা না। দুই একজন ছাড়া বাকিদের আসল ব্যথা আমরা শত কোটি টাকা পেয়েছি, তাদের দেই নাই।

চুন্নুর প্রশ্ন, শত কোটি টাকা কে দেবে? সরকার আমাকে টাকা দেবে কেন? সরকার যদি আমাকে টাকা দেয় তাহলে এটা জানার বাকি থাকবে?

এদিকে, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ও সাবেক স্বাস্থ্য সচিব এমএম নিয়াজ উদ্দিন পদত্যাগ করেছেন। গত রোববার দলের চেয়ারম্যান বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। এ তথ্য তিনি নিজেই গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন। পদত্যাগপত্রে তিনি বলেন, ‘আমি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ও গাজীপুর মহানগর কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। পারিবারিক ও ব্যক্তিগত কারণে দায়িত্ব পালন ও রাজনীতি করতে এ মুহূর্তে সক্ষম নই। এমতাবস্থায়, আমি চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ও গাজীপুর মহানগরের সভাপতিসহ সব দলীয় পদ থেকে পদত্যাগ করলাম।’

গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাজীপুর-১ ও গাজীপুর-৫ আসনে থেকে লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এমএম নিয়াজ উদ্দিন। তবে নির্বাচনে কয়েকদিন আগে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন। দলের পক্ষ থেকে প্রার্থীদের খবর না নেওয়া, মনোনয়ন বাণিজ্য, আর্থিক সহযোগিতা না করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলেছেন নির্বাচনে জাপার পরাজিত প্রার্থীরা। এরমধ্যেই জাপা চেয়ারম্যানের উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করলেন নিয়াজউদ্দিন।

এছাড়া জাতীয় পার্টির ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক মো. শফিকুল ইসলাম সেন্টু ও সিলেট-২ আসন থেকে নির্বাচন করা ইয়াহ ইয়া চৌধুরীকে দলীয় সকল পদণ্ডপদবি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর কমিটিও বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।

গত রোববার জাতীয় পার্টির যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলম স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়। এতে বলা হয়, জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো: মুজিবুল হক চুন্নু এমপি’র সুপারিশক্রমে পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি দলীয় গঠনতন্ত্রে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ঢাকা মহানগর উত্তর এর মেয়াদোত্তীর্ণ আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করেছেন। সেইসঙ্গে মো: শফিকুল ইসলাম সেন্টু ও ইয়াহ ইয়া চৌধুরীকে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ভাইস চেয়ারম্যান পদসহ দলীয় সকল পদণ্ডপদবি থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। এর আগে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ ও প্রেসিডিয়াম মেম্বার সুনীল শুভ রায়কে বহিষ্কার করা হয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত