গ্যাসের তীব্র সংকটে হাহাকার

প্রকাশ : ১৭ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ফারুক আলম

রাজধানীতে গ্যাসের অভাবে হাহাকার তৈরি হয়েছে। দিনে-রাতে চব্বিশ ঘণ্টায় গ্যাস সংকটে রান্নার কাজে ব্যাহত হচ্ছে। তবে গ্যাসের চলমান সংকট নিরসনের সুষ্ঠু পথ খুঁজে পাচ্ছে না সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। উল্টো আগের নিয়মেই গ্যাসের বিল বাবদ গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে। এ নিয়ে জনমনে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।

জানা গেছে, গ্যাস সংকটে জামালপুরের তারাকান্দির যমুনা সার কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামীতে সারের অভাবে কৃষকদের ফসল উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে। গ্যাসের অভাবে রাজধানীর চারপাশে শিল্পকারখানার উৎপাদন কমেছে।

সরেজিমন রাজধানীর মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, আজিমপুর, যাত্রাবাড়ী, শনিরআখড়া, কুড়িল বিশ্বরোড় ও মহাখালী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গ্যাসের অভাবে রান্না করতে পারছেন মানুষ। আবার কোথাও কোথাও গ্যাস নিভু নিভু অবস্থায় জ্বলছে, যা দিয়ে পানি গরম করাও সম্ভব নয়। মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা নয়ন মুরাদ বলেন, প্রত্যেক বছরের মতো এবারও শীতের মৌসুমে গ্যাসের ভোগান্তি বেড়েছে। অথচ গ্যাস সরবরাহকারী সংস্থা তিতাস এ ব্যাপারে আগেভাগে বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেয় না। মাসের পর মাস বিল দিতে হচ্ছে আমাদের। যাত্রাবাড়ী এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, লাইনের গ্যাসের অভাবে সিলিন্ডার কিনে রান্না করতে হচ্ছে। অধিকাংশ বাড়িতেই একই অবস্থা। কেউ কেউ মধ্যরাতে রান্না করতে বাধ্য হচ্ছে। বাধ্য হয়ে ইলেক্ট্রিক চুলার দিকে ঝুঁকতে হয়। ইলেক্ট্রিক চুলা ব্যবহারীদের বাড়তি বিল গুনতে হচ্ছে।

গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে গ্যাস সংকটের জন্য ‘দুঃখ প্রকাশ’ করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, শীতের মৌসুমে গ্যাসের চাপ কম থাকায় সংকট দেখা দিয়েছে। মার্চের মধ্যেই গ্যাস সংকটের সমাধান হবে। কারণ বিবিয়ানাতে আরও এক দশমিক ৬ টিসিএফ নতুন গ্যাসের নতুন মজুদ পাওয়া গেছে। সেটি আগামী কিছু দিনের মধ্যে নিশ্চিত হওয়া যাবে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশের দুটি এলএনজি টার্মিনালের মধ্যে একটি সংস্কারের জন্য দেশের বাইরে রয়েছে। এ কারণে শীতে চলমান গ্যাস সংকট আরও বেড়েছে। এলএনজি টার্মিনালটি সংস্কার শেষে দেশে না আসা পর্যন্ত গ্যাসের সরবরাহ বৃদ্ধি করার পেট্রোবাংলার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধানে গুরুত্ব দিচ্ছি। যেসব গ্যাস কূপ খনন করা হয়েছে, অধিকাংশ কূপে গ্যাস মিলেছে।

বাসা-বাড়ির পাশাপাশি বিভিন্ন শিল্প কারখানায় গ্যাসের সংকট দেখা দিয়েছে। তেমনি জামালপুর যমুনা সার কারখানায় গ্যাসের অভাবে সার উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে সংস্থাটির ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক দেলোয়ার হোসেন বলেছেন, গত সোমবার তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি থেকে গ্যাস সংযোগ বন্ধ করার পরই উৎপাদন বন্ধ হয়েছে। গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিকের ওপর নির্ভর করছে ইউরিয়া সার উৎপাদন। কারণ প্রতিদিন ১ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন দানাদার ইউরিয়া সার উৎপাদন হয় যমুনা সার কারখানায়। এসব সার জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইলসহ ১৯ জেলায় সরবরাহ করা হয়। ধানমন্ডির জিগাতলা এলাকা বাসিন্দা মুন্নি আক্তার বলেন, রাত-দিন চব্বিশ ঘণ্টা গ্যাসের সংকট। এভাবে চলা কষ্ট কর হয়ে পড়েছে। যদি সুনির্দিষ্ট একটা সময়ে গ্যাস পাওয়া যেত তাহলেও রান্নার কাজ শেষ করা যেত। মহাখালী ওয়্যারলেস এলাকায় গত এক সপ্তাহ ধরে গ্যাসের চাপ কম। আজিমপুর এলাকায় গ্যাসের সংকট আরও তীব্র। মনিরা বেগম বলেন, সকাল থেকেই বাসায় গ্যাস থাকে না। নিজেরা না খেলাম, বাচ্চার খাবার তো রান্না করতে হয়। সিলিন্ডার কিনলে খরচ বেশি হবে। দ্রব্যমূল্যের যে অবস্থা, এভাবে চলতে থাকলে সংসার চালানো হিমশিমে পড়বে।

পেট্রোবাংলার তথ্য বলছে, দিন দিন গ্যাসের চাহিদা বাড়ছে। সেই হিসেবে সারা দেশে মাসে প্রায় ৩ হাজার ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন রয়েছে। চলতি মাসে এই চাহিদার বিপরীতে গড়ে ২ হাজার ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ হচ্ছে, যা ২০২০ সালের এপ্রিলের পর সর্বনিম্ন।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, বিদেশ থেকে আমদানি করা এলএনজি দুটি ভাসমান টার্মিনালের মাধ্যমে গ্যাসে রূপান্তর করে পাইপলাইনে সরবরাহ করা হয়। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি টার্মিনাল গত ১ নভেম্বরে বন্ধ করা হয়েছে। যার কারণে গ্যাস সরবরাহ কমেছে। কিছু দিনের মধ্যেই টার্মিনাল রক্ষণাবেক্ষণ কাজ শেষ হবে এবং গ্যাস সরবরাহ স্বভাবিক হবে। গ্যাস সংকট নিরসনের বিষয়ে তিতাসের মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী সেলিম মিয়া বলেন, গ্যাস সরবরাহ কমায় সমস্যা হচ্ছে। এছাড়াও একটি এলএনজি টার্মিনাল বন্ধ আছে। সেটি চালু হলে কিছুটা হলেও গ্যাস সংকট দূর হবে। কয়েক দিনের মধ্যেই এলএনজি আনা হবে।