চট্টগ্রামে বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগী

চমেকের শিশু স্বাস্থ্য বিভাগে ভর্তি ধারণ ক্ষমতার তিনগুণ

প্রকাশ : ১৭ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  তামীম রহমান, চট্টগ্রাম

সারা দেশের মতো চট্টগ্রামেও জেঁকে বসেছে শীত। তাপমাত্রা এখনো কমছে। শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির সঙ্গে বাড়ছে শীতজনিত রোগ। সব বয়সীরাই শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তবে আক্রান্তের হারে বেশি আছে শিশু ও বৃদ্ধরা। চিকিৎসকরা বলছেন, এই সময়ে শিশুদের মধ্যে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার হার বাড়ছে। এছাড়া বৃদ্ধদের কফ কাশির সাথে শ্বাসকষ্টও হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুদের নিয়মিত টিকাদান, স্বাস্থ্যকর জীবন এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, এই তিনটি বিষয় নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করতে পারে। এছাড়া ঠান্ডা থেকে রক্ষা পেতে শিশুর মাথায় হালকা টুপি এবং হাতে- পায়ে মোজা পরাতে হবে। ঘরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে হবে। কোনোভাবেই আগুনের ধোঁয়া জাতীয় কিছু দিয়ে শিশুর শরীরে উষ্ণতা বাড়ানোর চেষ্টা করা যাবে না। ঘরের বাইরে গেলে বড়দের যে পরিমাণ শীতের কাপড় প্রয়োজন হয়, শিশুকেও যেন একইধরনের কাপড় পরানো হয়। খুব বেশি যাতে পরানো না হয়। আর শিশুকে সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। তাতে এই সময়ের শীতজনিত অনেক রোগ থেকে রক্ষা মিলবে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য বিভাগে প্রতিদিন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে ধারণ ক্ষমতার তিনগুণ রোগী ভর্তি রয়েছে। এর এক-তৃতীয়াংশ আবার নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগী। একইসাথে নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগী বাড়ছে চট্টগ্রাম মা শিশু ও জেনারেল হাসপাতালেও। অন্যদিকে চমেক হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে বাড়ছে শীতজনিত রোগে আক্রান্তরা।

চমেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের একজন চিকিৎসক বলেন, শীতের সময় কিছু কিছু রোগের প্রকোপ বাড়ে। এরই মধ্যে অন্যতম হচ্ছে শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়া। তাই বয়ষ্ক লোকদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে নিয়মিত মাস্ক পরতে হবে। এছাড়া নিজেকে উষ্ণ রাখতে হবে।

চমেক হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী বলেন, শীতের এই সময় সব শ্রেণীর মানুষকে সাবধানতা অবলম্বন করে চলতে হবে। ১ থেকে ৫ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুর প্রধান কারণ নিউমোনিয়া। সাধারণত যেসব শিশু কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ করে, তাদের নিউমোনিয়া বেশি হয়। এছাড়া প্রিম্যাচিউরড (সময়ের আগে জন্ম নেয়া) শিশুদেরও নিউমোনিয়া বেশি হয়। ভিটামিন ‘এ’ ঘাটতিজনিত কারণেও নিউমোনিয়া হয়। এখন নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করতে হলে গর্ভকালীন ও প্রসব পরবর্তী কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। বিশেষ করে গর্ভকালীন মায়ের পুষ্টি নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া স্বল্প বিরতিতে সন্তান জন্ম দিলেও সেই সন্তানের ওজন কম হতে পারে। মা-বাবা কেউ ধূমপায়ী হলে সন্তানের নিউমোনিয়া হতে পারে। পর্যাপ্ত আলো বাতাস ছাড়া স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে বেড়ে উঠা শিশু নিউমোনিয়ার ঝঁকিুতে থাকে। এক কথায় নিয়ম মেনে চললে শীতজনিত রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

চট্টগ্রাম মা-শিশু ও জেনারেল হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক (শিশু আইসিইউ) ডা. ফাহিম হাসান রেজা বলেন, প্রতি বছর শীতের প্রকোপ বৃদ্ধি পেলে শিশু রোগীর সংখ্যা বাড়ে। তাদের আক্রান্তের হার অন্য রোগীর চেয়ে বেশি। নিউমোনিয়া থেকে রক্ষা পেতে অভিভাবকদের সচেতন হবে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের অভিভাবকরা বেশি অসচেতন। তারা স্থানীয় পল্লী চিকিৎকসকদের দিয়ে শিশুর চিকিৎসা করান অথবা একেবারেই করান না। যখন শিশুর অবস্থার অবনতি হয়, তখন হাসপাতালে দৌঁড়াদৌঁড়ি করেন। এটি করা যাবে না। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলেই নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। দ্রুত চিকিৎসা শুরু করলে রোগী দ্রুত আরোগ্য লাভ করেন।

নগরীর বিভিন্ন ক্লিনিকগুলোতে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, প্রচুর শিশু ও বৃদ্ধ বয়সী রোগী ভর্তি আছেন। যাদের বেশিরভাগ শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত। হাসপাতালের চিকিৎসক নার্সরা বলছেন, যাদের আর্থিক সামর্থ্য ভাল তারা সরকারি হাসপাতাল এড়িয়ে প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি হচ্ছেন। যাদের আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো নেই এদের বড় অংশ সরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তবে প্রাইভেট হাসপাতাল ক্লিনিকগুলোতে সব ধরনের চিকিৎসা সুবিধা আছে। রোগীদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না।