ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

তীব্র শীতে কাঁপছে দেশ

তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নামলেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশ মাউশির
তীব্র শীতে কাঁপছে দেশ

তীব্র শীতে কাঁপছে দেশ। কয়েক দিন ধরে দেশের কয়েকটি অঞ্চলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তবে গতকাল দেশের কোথাও শৈত্যপ্রবাহ ছিল না। সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও বেড়েছে। যদিও রাজধানীতে গতকালের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আগের দিনের চেয়ে কমেছে প্রায় এক ডিগ্রি সেলসিয়াস। এতে শীতের অনুভূতিও বেড়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র বলছে, গত সোমবার রোদ ওঠার কারণে তাপমাত্রা এমনটা কমেছে। সোমবার কুয়াশা ভেদ করে সূর্যের আলোর মুখ দেখা গিয়েছিল রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। তবে গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীসহ দেশের অধিকাংশ জায়গায় সূর্যের আলোর মুখ দেখা যায়নি। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে ব্যাহত হচ্ছে জনজীবন। টানা এ শৈত্যপ্রবাহে বাড়ছে ঠান্ডাজনিত নানা রোগ। এতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। সোমবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল বরিশালে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, বরিশাল, ভোলা ও দিনাজপুরের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। প্রায় পাঁচ দিন ধরে একাধিক অঞ্চলে বয়ে গেছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। তবে গতকাল দেশের কোথাও শৈত্যপ্রবাহ নেই বলে জানান আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল ইসলাম। তিনি বলেন, দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা গতকাল মঙ্গলবার মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

রাজধানীতে অবশ্য সর্বনিম্ন তাপমাত্রা সোমবারের চেয়ে আরও কমেছে। গতকাল ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, আজ খুলনা অঞ্চলে হালকা বা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার ঢাকাসহ পাঁচ বিভাগের কিছু স্থানে বৃষ্টির সম্ভাবনার কথাও বলেছে আবহাওয়া অফিস।

দেশের উত্তরাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলে অবশ্য পাঁচ দিন ধরে দিনভর ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতের অনুভূতি থাকছে। রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের বেশিরভাগ এলাকায় শৈত্যপ্রবাহের কাছাকাছি তাপমাত্রা ছিল। কুয়াশা বেশি থাকায় সৈয়দপুর, রাজশাহী ও সিলেট বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ ওঠানামায় সমস্যা হয়েছে। ফেরি চলাচলেও বিঘ্ন ঘটেছে। আর হাসপাতালগুলোতে বেড়ে গেছে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত মানুষের ভিড়। বিশেষ করে শিশুদের কষ্ট ছিল বেশি।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, মূলত কুয়াশার কারণে দেশে তীব্র শীতের এলাকা বাড়ছে। একসময় জানুয়ারিতে দেশের উত্তরাঞ্চল ও সিলেট বিভাগে মূলত তীব্র শীতের অনুভূতি থাকত। উপকূলীয় জেলাগুলোতে শীত পড়ত কম। কারণ, সমুদ্রের কাছাকাছি এলাকায় জলীয় বাষ্প বেশি থাকে। ফলে হিমালয় পেরিয়ে আসা শীতের শুষ্ক বাতাস উত্তরাঞ্চল থেকে দক্ষিণাঞ্চলে প্রবেশ করতে পারে না। কিন্তু এক সপ্তাহ ধরে উত্তরাঞ্চল থেকে শুরু হয়ে মধ্যাঞ্চল, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল পর্যন্ত তীব্র শীত থাকছে। আবহাওয়াবিদদের মতে, তা মূলত কুয়াশার কারণে ঘটছে।

সরেজমিন দেখা যায়, তীব্র শীত থেকে রক্ষা পেতে মানুষ রাস্তার পাশে, খোলা স্থানে আগুন জ্বালিয়ে শরীর গরম করার চেষ্টা করছেন। নদীবন্দরে ভাসমান ও ছিন্নমূল মানুষ কনকনে শীতে বন্দরের মেঝেতে আশ্রয় নিয়ে শীতে কাঁপছিলেন। এছাড়া সর্বত্রই বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে শীতে কাবু হতে দেখা গেছে।

এদিকে, চলতি মাসের শুরু থেকে গতকাল পর্যন্ত দেশজুড়ে শীতের কষ্ট বেড়ে যাওয়া নিয়ে আবহাওয়া ও জলবায়ুবিশেষজ্ঞরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। এই প্রবণতাকে আবহাওয়ার ধরনের বদলকে ইঙ্গিত করছে বলে মনে করছেন তারা। বিশেষ করে জানুয়ারির শুরু থেকে শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত পাকিস্তান ও ভারত হয়ে বাংলাদেশের ওপর একটি ভারি কুয়াশার চাদর ছড়িয়ে পড়ছে। সেইসঙ্গে দেশের ভেতরেও নিচু মেঘ বা লো ক্লাউড তৈরি হচ্ছে। বাতাসে ভেসে বেড়ানো ধুলা ও ধোঁয়া এর সঙ্গে যোগ হচ্ছে। এ কারণেই অস্বাভাবিক কুয়াশা তৈরি হচ্ছে, যা দিনের তাপমাত্রা কমিয়ে দিচ্ছে।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, কুয়াশার দাপটের কারণে সূর্যের আলো ভূমিতে আসতে পারছে না। ফলে রোদ কম আসায় দিনেও তীব্র শীতের কষ্ট বাড়ছে। অন্যদিকে ওই ঘন নিচু মেঘের কারণে আটকে যাচ্ছে দৃষ্টিসীমা। উড়োজাহাজ থেকে শুরু করে নৌযান ও সড়কের যানবাহন চলাচলে সমস্যা বাড়ছে। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে দিনে রোদ কম আসা ও শীতের অনুভূতি বেড়ে যাওয়াকে দায়ী করা হচ্ছে। মাঠে শীতকালীন ফসল ধান ও সবজির উৎপাদনেও সমস্যা বাড়াচ্ছে।

গত ৩৩ বছরে ঢাকার আবহাওয়ার গড় তাপমাত্রার রেকর্ড বলছে, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকার গড় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ থেকে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস হওয়ার কথা। কিন্তু আট বছর ধরে ঢাকার গড় তাপমাত্রা বিবেচনায় নিলে তা কোনোভাবেই ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামেনি। ব্যতিক্রম ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি। ওই দিন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়। এ বছরও ঢাকায় ডিসেম্বরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা গড়ে ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ছিল। আর জানুয়ারির প্রথম ১৫ দিনে তা প্রায় ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকছে। এক সপ্তাহ ধরে ঢাকার দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য ৪ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকছে। ফলে তীব্র শীতে রাজধানীর জীবনযাত্রা রীতিমতো স্থবির হয়ে পড়েছে।

যদিও ঢাকায় গত আট বছরে একবার শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে। এ বছর শৈত্যপ্রবাহ না হলেও তাপমাত্রার পার্থক্যের কারণে তীব্র শীতের অনুভূতিই পাচ্ছেন নগরবাসী।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান বলেন, শীতকালে কোন এলাকায় শীত বেশি, তা এখন আর শৈত্যপ্রবাহ দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে না। কারণ, দিন ও রাতের তাপমাত্রা কমে এলে তা শৈত্যপ্রবাহের চেয়েও বেশি শীতের অনুভূতি হয়। এখন শৈত্যপ্রবাহ দেশের চার-পাঁচটি জেলায় থাকলেও তীব্র শীতের অনুভূতি দেশের দুই-তৃতীয়াংশ এলাকায় থাকছে। ফলে এ ধরনের শীত মোকাবিলায় আমাদের কৃষি ও জনস্বাস্থ্যের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।

এদিকে, শীতের তীব্রতার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধে নির্দেশনা দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। জরুরি এ নির্দেশনা অনুযায়ী- চলমান শৈত্যপ্রবাহে দেশের যেসব জেলায় তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নামবে, সেখানে স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখা যাবে। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) থেকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এতে সই করেছেন মাউশির সহকারী পরিচালক (মাধ্যমিক-২) এসএম জিয়াউল হায়দার হেনরী। শৈত্যপ্রবাহে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা সংক্রান্ত এ নির্দেশনায় বলা হয়েছে, দেশের বিভিন্ন জেলায় তীব্র শৈত্যপ্রবাহ প্রবাহিত হচ্ছে। চলমান এ শৈত্যপ্রবাহে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে। এক্ষেত্রে যেসব জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে (সংশ্লিষ্ট আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়ার পূর্বাভাসের প্রমাণক অনুযায়ী) নেমে যাবে, আঞ্চলিক উপ-পরিচালকরা ওইসব জেলার শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেবেন।

সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি না হওয়া পর্যন্ত ওইসব জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে বলেও নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়।

এসএম জিয়াউল হায়দার হেনরী বলেন, টানা এক সপ্তাহ দেশে শৈত্যপ্রবাহ চলছে। এতে শিশুরা চরম কষ্টে স্কুলে আসছে। অনেকে শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ঝুঁকির মধ্যে শিক্ষার্থীদের এভাবে ক্লাসে আনতে চায় না সরকার। সেজন্য আলোচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, অনেক জায়গায় ১০ ডিগ্রির নিচে তাপমাত্রা নেমে যাচ্ছে। সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান কমে আসায় শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে। উত্তরাঞ্চলসহ চুয়াডাঙ্গা ও আশপাশের জেলাগুলোর অবস্থা খুবই বেগতিক। শৈত্যপ্রবাহ কেটে গিয়ে তাপমাত্রা বাড়লে (১০ ডিগ্রির উপরে উঠলে) স্কুল খুলে দেওয়া হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত