ক্রেতার পকেট কাটছে সিন্ডিকেট

শীতে সবজির বাজারে আগুন

প্রকাশ : ১৯ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আমিরুল ইসলাম অমর

শীতের মৌসুম মানেই নানান ধরনের সবজির ছড়াছড়ি। এই সময়ে সবজির উৎপাদন যেমন বেশি হয়, দামও থাকে কম। তবে এবারের বিষয় একটু ভিন্ন। নানান ধরনের সবজির ছড়াছড়ি থাকলেও দাম নাগালের বাইরে। দাম না কমে বরং বাড়ছে। যারা নিম্ন আয়ের মানুষ তারা মাছ ও মাংস কিনতে না পেরে সবজির উপরই ভরসা করে। সেই সবজির দামও আকাশচুম্বি। যেনো নিম্ন আয়ের মানুষের নুন আনতে পান্তা ফুরাচ্ছে। যাত্রাবাড়ী এলাকার সবজি বাজারে কয়েকজন ক্রেতার সাথে কথা হলে তারা জানান, যেভাবে জিনিসের দাম বাড়ছে তাতে কোনো উপায় দেখছি না। কোন জিনিসটার দাম কম? চাল, ডাল, তেল, আলু, পেঁয়াজসহ সব জিনিসের দামই ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। মাছ ও মাংসের কথা বাদই দিলাম। শীতের মৌসুমে সবজির দাম একটু কম থাকে, সেই সবজিও এখন কিনে খেতে পারি না। চাল কিনলে ডাল-তেল কিনতে পারি না, আবার ডাল-তেল কিনলে চাল থাকে না। আমাদের অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যেন- নুন আনতে পান্তা ফুরাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে।

বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন ধরনের সবজি পাওয়া যাচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে- ফুলকপি, পাতাকপি, সিম, মুলা, পেঁপে, বেগুন, গাজর, টমেটো, করলা, আলু, ধনেপাতা, বরবটি, জিঙ্গে, ঢ্যাঁড়স, লেবু, ওলকপি, দেশি লাউ, মিষ্টি লাউ, চাল কুমড়া, ধুন্দুল, শশা, কচু ইত্যাদি। বাজারে পর্যাপ্ত থাকলেও এসব সবজির দাম আকাশচুম্বি। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, সেগুনবাগিচা, কাওরান বাজার, মগবাজার, মোহাম্মদপুর, রামপুরা ও মিরপুর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে সবজির চড়া দাম। এসব এলাকার বাজার ঘুরে ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আলুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছে বেগুন। প্রতি কেজি বেগুনের দাম পড়ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা। লাউয়ের দামেও সেঞ্চুরি। বড় আকারের প্রতিটি লাউ ১০০ টাকার নিচে নেই। তবে ছোট সাইজের লাউ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়। মানভেদে টমেটোর কেজি রাখা হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা। মানভেদে শিমের কেজিও ৭০ থেকে ৯০ টাকা।

মাঝারি আকারের প্রতিটি ফুলকপি ও বাঁধাকপির দাম হাঁকা হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা। সবজির মধ্যে ৫০ টাকার মধ্যে আছে মাত্র তিনটি সবজি- মুলা, ওলকপি (শালগম) ও পেঁপে। করলার কেজি পড়ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। কাঁচা মরিচের কেজি ১০০ টাকার আশপাশে। বাজারে গ্রীষ্মের সবজি হিসেবে পরিচিত ঝিঙে ও ধুন্দুলের দাম পড়ছে কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা। নতুন দেশি পেঁয়াজের দাম এখনো ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি। এছাড়া ধনেপাতা বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজি। গাজর বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা কেজি। ঢেড়স ও কচু ১০০ টাকার উপরে। বরবটি ৮০-৯০ টাকা। মানভেদে লেবু বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৬০ টাকা হালি। শশা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি।

ব্যবসায়ীদের দাবি, এবার শীতের পুরো মৌসুমেই বাজারে সবজির দাম বেশি দেখা যাচ্ছে। মাঝেমধ্যে একটু কমলেও ভরা মৌসুমে এসে সবজির বাজার যেভাবে নামতে শুরু করে, এবার সেই প্রবণতা নেই। উল্টো মৌসুমের শেষ দিকে এসে সবজির দাম বাড়তি দেখা যাচ্ছে। ব্যবসায়ীদের দাবি, এবার আলুর দাম বেশি। তাতে অন্যান্য সবজির দাম কমছে না। কারণ, সবজির মধ্যে আলু কমবেশি সবাই কেনেন। সেটাই বাড়তি দামে কিনতে হলে বিক্রেতারা অন্যান্য সবজির দাম আর কমান না।

বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি মো. ইমরান মাস্টার বলেছেন, কৃষকের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় সবজির দাম মৌসুমের শুরু থেকেই বাড়তি। এখনো পর্যাপ্ত সবজি বাজারে আসছে না, তাই দাম কমছে না। তবে বাজারে কেউ সুযোগ নিচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে তদারকি হওয়া প্রয়োজন। এবার শীতে সবজির বাজার অনেকটা উল্টো আচরণ করছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। যাত্রাবাড়ী এলাকার এক সবজি বিক্রেতার সাথে কথা হলে তিনি জানান, অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার সবজির দাম বেশি। আমরা পাইকারদেও কাছ থেকে বেশি দামে কিনে আনি। আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। এই সময়ে ক্রেতারা বেশি বেশি সবজি কিনলেও এবার দাম বেশি হওয়ায় তুলনামূলক কম কিনছে।

রাজধানীর সেগুনবাগিচা বাজারে এক ক্রেতার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, শীতে সবজির দাম শুরুতে বেশি থাকে। পরে দ্রুত দাম নেমে আসে। এবার সেটা হলো না। বিষয়টা অবাক করার মতো। হয়তো আমরা বেশি দামে কিনতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। এ জন্য ব্যবসায়ীরা দাম কমাচ্ছেন না।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর বিবিরবাগিচা এলাকার বাসিন্দা জামাল বলেন, শীতের সবজির দাম শুরুতে বেশি থাকে। পরে দ্রুত দাম নেমে আসে। এবার সেটা হলো না। বিষয়টা অবাক করার মতো। হয়তো আমরা বেশি দামে কিনতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। এ জন্য ব্যবসায়ীরা দাম কমাচ্ছেন না।

মিরপুর ১০ নম্বরের এক কাঁচাবাজারে সবজি কিনতে আসা আব্দুর রাফি রন বলেন, এভাবে দিনের পর দিন জিনিসের দাম বাড়তে থাকলে নিম্ন আয়ের মানুষের না খেয়ে থাকতে হবে। এখনো সময় আছে সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা। তানাহলে দেশের পরিস্থিতি ভয়াভহ হবে। তিনি আরো বলেন, এখন শীতের মৌসুম। এই সময়ে সবজির ফলন বেশি। সাধারণত দামও তুলনামূলকভাবে অনেক কম থাকে। অথচ, সেই সবজির দাম অনেক চড়া। ভেবেছিলাম বেশি করে সবজি নেব কিন্তু দাম বেশি হওয়াই কম কম করে কয়েকটা সবজি নিলাম।