চট্টগ্রামে দখল-নিশ্চিহ্ন খাল উদ্ধারে নেমেছে সিডিএ

স্বস্তি মিলছে নগরবাসীর মধ্যে

প্রকাশ : ২০ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  তামীম রহমান, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম নগরীতে খাল ভরাটের কারণে জলাবদ্ধতা সমস্যা থেকে মুক্তি মিলছে না। এবার সেই খালগুলো উদ্ধারে নেমেছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। একের পর এক দখল খাল উদ্ধার হতে থাকায় নগরবাসীর মধ্যে মিলছে স্বস্তি। গত বৃহস্পতিবার দখল খালের বড় একটি অংশ উদ্ধার করা হয়। আগামীকাল রোববার উদ্ধার অভিযান আবার শুরু করা হচ্ছে। সিডিএ’র কর্মকর্তাদের মতে অনেক খাল প্রায় উধাও হয়ে গেছে। অনেক খালের চিহ্নও খুঁজে পাওয়া যায় না। নিয়মিত অভিযান চালিয়ে খালগুলো উদ্ধার করা হবে। আগের চেহারায় ফিরিয়ে আনা হবে খালগুলোর চেহারা। সিডিএ সূত্র জানায়, নগরীর লাভলেন এলাকায় স্মরণিকা ক্লাবের পাশ থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত দুই কিলোমিটারেরও বেশি জামাল খান খালের বড় অংশ। এটির বেশিরভাগ অংশই এরইমধ্যে দখল হয়ে গেছে। ২০ ফুট চওড়া খালটির কোথাও ৮ ফুট কোথাও ১০ ফুট জায়গা রয়েছে। বাকি অংশ বহুতল ভবনের পেটে ঢুকে গেছে। খালটির দুই পাড়জুড়ে অসংখ্য বহুতল ভবন রয়েছে। এরমধ্যে ১০ তলার উপরে ভবন রয়েছে ১৮টি। খাল উদ্ধারের অভিযান শুরুর খবর প্রকাশ হওয়ার পর থেকে প্রভাবশালীদের চাপে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। গত বৃহস্পতিবার সব চাপ উপেক্ষা করে সিডিএ খাল উদ্ধারের অভিযান পরিচালনা করে। এতে বেশ সাফল্যও মিলেছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

জানা গেছে, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ৪০টি বহুতল ভবনের দখলকৃত অংশ উচ্ছেদ করা হয়। এরমধ্যে বহু ভবনেরই নিচতলা ভেঙে দেয়া হয়েছে। উপরের দিকে ভবন মালিকরা নিজ উদ্যোগে ভাঙার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এর মধ্যে ১৬ তলা, ১০ তলা, ১২ তলা ভবনও রয়েছে। রয়েছে অনেকগুলো আবাসিক ফ্ল্যাট। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের স্পেশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ) তাহমিনা আফরোজ চৌধুরীর নেতৃত্বে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এই সময় প্রকল্প পরিচালক মঈনুদ্দিন, কাজী কাদের নেওয়াজ, দীপক বডুয়া, বিমান বডুয়া, তোফায়েল হোসেন, আবু জাফর পেশকার ফয়েজ আহমেদ, লিটন চন্দ্র দাস, মিথু চৌধুরী, সেনাবাহিনী এবং পুলিশ প্রশাসনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। কাল রোববার সকাল থেকে আবারো উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হবে।

সিডিএ’র প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ মঈনুদ্দীন জানান, খাল উদ্ধারে এখন থেকে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হবে। বৃহস্পতিবার আমরা অনেকগুলো ভবন ভেঙে দিয়েছি। ১৬ তলা, ১২ তলা এবং ১০ তলা ভবনের পাশাপাশি চার থেকে পাঁচতলা উচ্চতার ভবনও খালের উপর নির্মাণ করা হয়েছে। এসব ভবনের খাল দখল করে গড়ে তোলা অংশ ভেঙে ফেলা হবে। আজ আমরা ভাঙা শুরু করলে বাসিন্দাদের অনেকেই সময় প্রার্থনা করেন। তারা নিজেরাই ভবন ভেঙে খালের জায়গা খালি করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। যারা নিজেরা ভেঙে জায়গা পরিষ্কার করে দেবেন তাদের আমরা কয়েকদিন সময় দেবো। তবে আগামীকালের মধ্যে যারা নিজ উদ্যোগে ভাঙার কাজ শুরু করবে না সেগুলো আমরা নিজেরাই ভেঙে দেব।

সিডিএ কর্মকর্তারা জানান, নগরীর লাভলেন এলাকার স্মরণিকা কমিউনিটি সেন্টারের পাশ থেকে জামাল খান এবং সিরাজউদ্দৌলা রোড হয়ে চাক্তাই খালে যুক্ত হওয়া দুই কিলোমিটারের বেশি দৈর্ঘ্যরে খালটি নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই খালটির পানি প্রবাহ নিশ্চিত করা হবে। নগরীতে ৮১টি খাল ছিল। যেগুলো দখলের পর উধাও হয়ে গেছে। বর্তমানে খালের সংখ্যা ৫৭টি। জামাল খান খালটিও দখল হয়ে গেছে। সিডিএ’র দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, জামাল খান খালের দুইপাড়ে অনেক প্রভাবশালীর বাড়িঘর এবং বড় বড় অট্টালিকা রয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে এই উচ্ছেদ অভিযান থামানোর জন্য অতি প্রভাবশালীদের পক্ষ থেকে চাপ আসছিল। সিডিএ জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে সব চাপ উপেক্ষা করে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে। এতে যত বাধাই আসুক সব উপেক্ষা করে অভিযান পরিচালনা করা হবে।