ভোট-পরবর্তী সহিংসতা

টনক নড়েছে আওয়ামী লীগের

* ঐক্যের বার্তা নিয়ে মাঠে নামবে কেন্দ্র * বিভেদ চায় না তৃণমূলও

প্রকাশ : ২১ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  রাহাত হুসাইন

ভোটের আগে ছিল চোখরাঙানি। ভোট শেষ হতেই শুরু হয় হামলা-মারধর। ভোটপর্ব মিটতেই দেশজুড়ে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে নির্বাচনি বিরোধ। তৃণমূলে আওয়ামী লীগের দুইপক্ষের বিরোধে ভেঙে পড়তে শুরু করেছে দলটির সাংগঠনিক কাঠামো। পাল্টাপাল্টি হামলা-মামলা, মারধর, ভাঙচুরে জর্জরিত দলটির তৃণমূলের নেতকর্মীরা। জেলায় জেলায় আওয়ামী লীগ মনোনীত আর স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কর্মী ও সমর্থকরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে। এদিকে দ্বন্দ্ব-সংঘাতে ঘি ঢালছে নৌকাবঞ্চিত একাদশের এমপিদের লোকজনও। চেইন অব কমান্ডও মানছে না তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। দলীয় অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেওয়া হচ্ছে না সদ্য সাবেক এমপি ও তাদের অনুসারী নেতাকর্মীদের।

তথ্য মতে, ৭ জানুয়ারি ভোটের দিন থেকে এ পর্যন্ত সংঘাতে নোয়াখালী, মাদারীপুর, নেত্রকোনা ও ঝিনাইদহে চারজন নিহত হয়েছেন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পাল্টাপাল্টি হামলায় আহত হয়েছেন দুই শতাধিক। এছাড়া শারীরিক নির্যাতন ও লুটপাটের ঘটনাও ঘটেছে। তবে প্রশাসনের কঠোরতায় বিভিন্ন স্থানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও বিরাজ করছে নিবর উত্তেজনা। ভোট-পরবর্তী সহিংসতায় টনক নড়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের বিভেদ ঘুচাতে জেলায় জেলায় সফর করবেন দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। ভেদাভেদ ভুলে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের এক হয়ে কাজ করার বার্তা দেবেন তারা। সহিংসতার বিরুদ্ধে দলীয় প্রধানের কঠোর নির্দেশনা পৌঁছে দেবেন। তবে কেন্দ্রীয় নেতাদের জেলায় জেলায় সফরের সময়সূচি এখনও ঠিক করেনি দলটি। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ডাক্তার মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকাটা খুবই জরুরি। নির্বাচন নিয়ে কারো মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি থাকলেও তা দ্রুতই নিরসন করা হবে। কেন্দ্রীয় নেতারা জেলায় জেলায় যাবেন দলকে ঐক্যবদ্ধ ও সুসংগঠিত করতে। আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও তৃণমূলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার নিদের্শনা দিয়েছেন। তবে কেন্দ্রীয় নেতাদের জেলায় জেলায় সফরের সময়সূচি এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।  

তৃণমূলের নেতারাও দ্রুতই দ্বন্দ্ব-কোন্দল থেকে মুক্তি চায়। তারাও ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে আগ্রহী বলে জানা গেছে। জানতে চাইলে বগুড়া জেলার শেরপুর পৌর সভার কাউন্সিলর বদরুল ইসলাম পোদ্দার ববি আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, আমাদের এলাকায় ভোট-পরবর্তী সংহিসতার ঘটনা ঘটেনি। তবে বর্তমান ও সদ্য সাবেক এমপির নেতাকর্মীদের মধ্যে নিরব উত্তেজনা বিরাজ করছে। বগুড়া-৫ আসনের বর্তমান এমপি মজিবুর রহমান মজনু। তিনি ৭ জানুয়ারি ভোটে জয় লাভ করেছেন। এছাড়া তিনি জেলা আওয়ামী লীগেরও সভাপতি। বর্তমান এমপি ও তার সমর্থকরা সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান ও তার নেতাকর্মীদের এড়িয়ে চলছেন। আমরা বর্তমান এমপির জন্য ভোটের মাঠ চষে বেড়ালেও তিনি আমাদের পাত্তা দিচ্ছেন না। দলীয় সভা-সমাবেশে ডাকছেন না। তার অনুসারীরা আমাদের বাঁকা চোখে দেখছে, তিরস্কার করে কথা বলছে। আমি টানা পাঁচবার জনগণের ভোটে শেরপুর পৌর সভার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছি। এছাড়াও দলের দুঃসময়ে শেরপুর উপজেলায় যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকে দায়িত্ব পালন করেছি। বিএনপি-জামায়াত জোটের সময় আওয়ামী লীগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছি। আমাকেও দলীয় কর্মসূচিতে ডাকা হচ্ছে না। আমরা বিভেদ চাই না। ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে চাই।

নির্বাচনে নৌকা প্রতীক এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা আওয়ামী লীগ নেতাদের জয়-পরাজয়ের কষ্ট ভুলে আবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন দলটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গেল ১৫ জানুয়ারি রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে এ আহ্বান জানান তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা নির্বাচন করেছি সবার সঙ্গে। হয়তো কেউ হেরেছি অথবা কেউ জিতেছি, কষ্ট আছে কারো, কারো আনন্দ আছে। কিন্তু ওই আনন্দণ্ডদুঃখ-কষ্ট-হাসি-কান্না সব মিলিয়ে আমাদের চলতে হবে। সবাইকে আবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে, জনগণের স্বার্থে জনগণের কল্যাণে মানুষের জন্য। মানুষের যে আস্থা-বিশ্বাস আমরা অর্জন করেছি, সেটা যেন কোনোভাবে হারিয়ে না যায়। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম বলেন, ভোটে জয় বা পরাজয়ের কারণে কোনো ধরনের উস্কানিমূলক বক্তব্য বা একজন আরেকজনের ওপর হামলা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করা যাবে না, এ নিয়ে দলের স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।

দলের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী বলেন, তৃণমূলে দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ রাখতে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা কাজ করে যাচ্ছেন। বিভেদ মিটিয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলব। উল্লেখ্য, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটে অংশগ্রহণ করেনি বিএনপি-জামায়াত জোট। ভোটকে প্রতিযোগিতাপূর্ণ করতে এবার দলের নেতাকর্মীদের জন্য প্রার্থিতা উন্মুক্ত রাখে আওয়ামী লীগ। দল মনোনীত প্রার্থীদের পাশাপশি আওয়ামী লীগের নেতারাও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ভোটে অংশ নেন।