ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বাণিজ্য মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা

বাংলাদেশের কূটনীতি হবে অর্থনৈতিক

ক্ষমতা ভোগের বস্তু নয়
বাংলাদেশের কূটনীতি হবে অর্থনৈতিক

অর্থনৈতিক কূটনীতিতে জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের কূটনীতি এখন আর রাজনৈতিক নয়, কূটনীতি হবে অর্থনৈতিক। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার আমরা কীভাবে ঘটাব, সেটার ওপর আমাদের কূটনৈতিক মিশনগুলো কাজ করছে, কাজ করবে। সেটাই আমরা চাচ্ছি। আমরা প্রত্যেকটা কূটনৈতিক মিশনে আমাদের এই মেসেজ দিয়েছি।

গতকাল দুপুরে বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিভিশন সেন্টারে ২৮তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন নতুন পণ্য উৎপাদন এবং নতুন বাজার খুঁজে বের করতে হবে। একটা-দুইটা পণ্যের ওপর নির্ভরশীল থাকলে আমাদের চলবে না। আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের পণ্যের চাহিদা খুঁজতে হবে। আমরা রপ্তানিতে সুনির্দিষ্ট কয়েকটি পণ্যের ওপর নির্ভরশীল। আমাদের রপ্তানিকে বহুমুখী করতে হবে, এটা আমি বারবার বলছি। সে ক্ষেত্রে সুযোগ আরো দিতে হবে। আমরা যাদের পণ্যকে সবচেয়ে বেশি সুযোগ দিচ্ছি, তারাই সাফল্য অর্জন করছে। তাহলে আমাদের অন্যান্য পণ্যগুলো কেন বাদ যাবে। তাদেরও আমাদের সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে। যাতে তারাও সেভাবে সুযোগ পায়, ভালোভাবে ব্যবসা করতে। কারণ অনেক চড়াই উতরাই পার হয়েই আমাদের আসতে হয়। সেটা মাথায় রাখতে হবে।

সরকারপ্রধান বলেন, এবার যে নির্বাচন ইশতেহার দিয়েছি সেখানে আমরা লক্ষ্য স্থির করেছি ২০৩০ সালের মধ্যে আমাদের রপ্তানি আয় বাড়াব ১৫০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। যদিও এক্ষেত্রে সময় খুব কম, কিন্তু আমাদের নতুন নতুন বাজার ধরতে হবে। আর একটা লক্ষ্য স্থির থাকলে যে কোনো অর্জন সম্ভব হয়। আমরা সেভাবেই কাজ করতে চাই। আমরা সারা দেশে ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছি। যেখানে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ হবে এবং কোন অঞ্চলে কোন পণ্য ভালো হয় সেখানে সেই শিল্প গড়ে উঠবে। সেবা খাতেও আমাদের যথেষ্ট সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে এবং ভালো সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এই খাতে রপ্তানি আয় ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের কাছাকাছি পৌঁছেছে। সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছে এবং আইসিটি পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করার বিশাল সুযোগ সামনে রয়ে গেছে। আইটি খাতে ২০২২-২৩ অর্থ বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত রপ্তানি আয় ২৭ দশমিক ৫ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। অর্থাৎ দেশে পণ্যের চাহিদা মিটিয়ে আমরা বিদেশেও রপ্তানি করতে পারছি। যদিও বিশ্ব মন্দার অভিঘাতে ইউরোপ আমেরিকার অনেক উন্নত দেশেও পণ্যের চাহিদা হ্রাস পাচ্ছে। সেটা মাথায় রেখে নতুন বাজার আমাদের খুঁজতে হবে, নতুন জায়গায় যেতে হবে।

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, বর্তমান সরকার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করছে। সেই সাথে পণ্য রপ্তানি বাণিজ্যকে উৎসাহিত করতে সরকার জাতীয় ‘ট্যারিফ পলিসি ২০২৩’ প্রণয়ন করছে। এটা আমাদের রপ্তানিতে আরো সুযোগ-সুবিধা এনে দেবে। এখানে আমাদের দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী এবং বিদেশি অতিথিরা আছেন। আমি একটা অনুরোধ করব আমাদের আমদানি রপ্তানিতে ভারসাম্য বজায় রাখা একান্তভাবে দরকার। আপনারা রপ্তানি করেন, রপ্তানি করার সময় যে অর্থ ব্যবহার হয় তার যে রিটার্নটা আসবে ঠিক চাহিদা মতো তা আসে না। সেদিকে সবাইকে একটু যত্নবান হওয়ার আমি আহ্বান জানাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা প্রতিবছর একটা পণ্যকে বর্ষপণ্য হিসেবে সুনির্দিষ্ট করে দেই। পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, এভাবে প্রতিবছরই বর্ষপণ্য ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এবার আমি ঠিক করেছি ‘হস্তশিল্প পণ্যকে’ ২০২৪ সালের বর্ষপণ্য হিসেবে ঘোষণার। এবারের যে বর্ষপণ্য অর্থাৎ ‘হস্তশিল্প পণ্য’ সেটা আমাদের নারীদের কর্মসংস্থান বাড়াবে এবং এর মাধ্যমে নারীরা স্বাবলম্বীতা অর্জন করতে পারবে।

তিনি বলেন, আমার কাছে ক্ষমতা কোনো ভোগের বস্তু নয়। আমার কাছে ক্ষমতা হলো দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের একটা সুযোগ; মানুষের কল্যাণে কাজ করার সুযোগ; মানুষকে সেবা দেওয়ার একটা সুযোগ। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আপনাদের সামনে উপস্থিত হতে পেরেছি।

বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আমি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। তারা স্বতঃস্ফূতভাবে ভোটের মাধ্যমে আমাদের আবার সেবা করার সুযোগ দিয়েছে। ৯৬ সাল থেকে যখন সরকার গঠন করেছি সেখান থেকে একটা প্রচেষ্টা, আর্থসামাজিকভাবে বাংলাদেশকে উন্নত করা। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা। বাংলাদেশের মানুষ যেন বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলতে পারে, সেই পদক্ষেপ নেওয়া।

শেখ হাসিনা বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের যদি প্রসার না ঘটে, কোনো দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে না। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা দিয়েছিলাম, আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট আমরা উৎক্ষেপণ করেছি। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা। আমরা প্রমাণ করেছি, বাংলাদেশের জনগণকে কেউ চ্যালেঞ্জ দিয়ে দাবায়ে রাখতে পারবে না।

বৈদেশিক আয় বাড়াতে তৈরি পোশাকের মতো পাট ও চামড়াজাত পণ্য, ওষুধ, তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য এবং হস্তশিল্পসহ অন্যান্য রপ্তানি পণ্যে একই গুরুত্ব দিতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম। স্বাগত বক্তব্য দেন রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান এএইচএম আহসান। অনুষ্ঠানে ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ এবং স্থানীয় ও বিনিয়োগ আকর্ষণে গত ১৫ বছরে গৃহীত সরকারি পদক্ষেপের ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।

প্রতি বছর জানুয়ারির একদম শুরুতে ঢাকা আন্তর্জাতিক মেলা শুরু হলেও এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে পেছানো হয়েছিল। এবারে মেলার মূল গেট সাজানো হয়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও পদ্মা সেতুর আদলে। দেশীয় পণ্যের পাশাপাশি প্রতিবছর ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, হংকং, সিঙ্গাপুর, নেপালসহ বিভিন্ন দেশের পণ্য শোভা পাবে এ মেলায়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত