দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে বিএনপি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ছিল দলটির ঘুরে দাঁড়ানোর চ্যালেঞ্জ। কিন্তু ঘুরে দাঁড়ানো তো দূরের কথা, এই নির্বাচন বিএনপিকে আরো বেশি অস্তিত্বের সংকটে ফেলেছে। সংবিধান অনুযায়ী দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সম্পন্ন করেছে ক্ষমতাসীনরা। বিএনপির নেতাকর্মীরা আশা করেছিল, এবার হয়তো পটপরিবর্তন হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। আবারও আওয়ামী লীগই ক্ষমতায় এসেছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের আশা ছিল, অন্তত নির্বাচনের পর গণতন্ত্রকামী পশ্চিমা দেশগুলো ‘একতরফা’ নির্বাচনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু নির্বাচনের কয়েক দিনের মাথায় মার্কিনিদের অবস্থানও পরিষ্কার হয়ে গেছে। তারা এ সরকারের সঙ্গে কাজ করার কথা বলে দিয়েছে। গত শুক্রবার জাতিসংঘও শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছে। এ অবস্থায় বিএনপির সামনে রয়েছে পাঁচটি চ্যালেঞ্জ। বিএনপির নেতারাই মনে করছেন, এই নির্বাচনের পর বিএনপি টিকে থাকার সংগ্রামে পাঁচটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি পড়েছে। চ্যালেঞ্জগুলো হচ্ছে- দলকে সুসংগঠিত করা, নেতাকর্মীদের মনোবল ধরে রাখা, আইনি মোকাবিলা করে নেতাকর্মীদের কারাগার মুক্ত করা, কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করা ও ব্যর্থতা কাটিয়ে আন্দোলনে সফল হওয়া।
সূত্র মতে, বিএনপির সর্বশেষ জাতীয় নির্বাহী কমিটির কাউন্সিল হয় ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ। আগামী ১৯ মার্চ কাউন্সিলের ৮ বছর পূর্ণ হবে। ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর ৪৫ বছরে বিএনপিতে কাউন্সিল হয়েছে ছয়বার। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন বছর পর পর কাউন্সিল করার বিধান রয়েছে। কিন্তু দলের কেন্দ্রীয় ৫০২ সদস্যের ‘ঢাউস’ কমিটি ৫ বছর ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ। আপাতত কাউন্সিল করারও কোনো চিন্তাভাবনা নেই বিএনপির। এক্ষেত্রে উপেক্ষা করা হচ্ছে দলের গঠনতন্ত্র। দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের দাবি, আগামী দিনের আন্দোলন সংগ্রামকে গতিশীল করতে কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব জরুরি। এক্ষেত্রে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিও পুনর্গঠন করতে হবে। ঢাউস কমিটি থেকে বাদ দিতে হবে অযোগ্য ও বিতর্কিতদের। কমিটির আকার ছোট করতে হবে। আন্দোলন সংগ্রামে পরীক্ষিত যোগ্য ও ত্যাগী নেতাদের নিয়ে ঢেলে সাজাতে হবে কেন্দ্রীয় কমিটি। এজন্য ছোট পরিসরে হলেও কাউন্সিল করার তাগিদ মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের। অবশ্য দলের সিনিয়র একাধিক নেতা জানান, প্রতিকূল পরিবেশের কারণে কাউন্সিল করা যাচ্ছে না। কাউন্সিল করার উপযুক্ত পরিবেশ খুঁজছেন বলেও জানান তারা।
দলের নেতাকর্মীরা মনে করেন, এই মুহূর্তে দলকে সু-সংগঠিত করা জরুরি। দীর্ঘদিন ধরে দলের কাউন্সিল হচ্ছে না। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, হান্নান শাহ, তরিকুল ইসলাম, সাদেক হোসেন খোকাসহ অনেক সিনিয়র নেতা ইতোমধ্যে মারা গেছেন, বার্ধক্যজনিত কারণে অনেকে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়। এমতাবস্থায় আগামী দিনের আন্দোলন-সংগ্রামে সফল হওয়ার জন্য সাংগঠনিক তৎপরতা বাড়িয়ে দলকে চাঙা করা উচিত।
দলীয় সূত্র জানায়, সরকারবিরোধী আন্দোলনের ফসল তুলতে বিএনপিসহ প্রতিটি অঙ্গ সংগঠনের শীর্ষ পর্যায়ে একাধিক নেতৃত্ব তৈরিতে মনোযোগ দিচ্ছে নীতিনির্ধারকরা। যাতে গ্রেপ্তার কিংবা মামলা-হামলাও সংগঠনের কার্যক্রম অব্যহত রাখা যায়। এছাড়া যেসব সংগঠনের নেতৃত্বে শূন্যতা রয়েছে, তা শিগগিরই সমাধান করা। জানা যায়, ২০১৩ সাল থেকে ৩ মেয়াদে লাগাতার আন্দোলন করে আসছে বিএনপি। কোনো মেয়াদেই লক্ষ্য-অর্জনে সফল হয়নি। উল্টো নানাভাবে কোণঠাসা হয়েছে। দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ারও মুক্তি মেলেনি। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অনেক শীর্ষনেতা কারাবন্দি। এমতাবস্থায় বিগত সময়ের দুর্বলতাগুলো শনাক্ত করে সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধিতে মনোযোগ দিচ্ছেন শীর্ষ নেতারা। এ নিয়ে গত কয়েক দিন দুপুর থেকে রাত ২টা পর্যন্ত বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের র্শীষ নেতাদের সঙ্গে স্কাইপিতে বৈঠক করেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। পৃথকভাবে সাংগঠনিক বিভাগ ও জেলার শীর্ষ নেতাদের সাংগঠনিক দূর্বলতা শনাক্তের নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। অঙ্গ সংগঠনের নেতৃত্ব শক্তিশালী করতে পদ পুনর্গঠনের বার্তাও দিয়েছেন বিএনপি হাইকমান্ড।
জানা যায়, গত তিন মাসে অব্যাহত হরতাল-অবরোধের পর থেকে ঘরছাড়া অধিকাংশ নেতাকর্মী। গ্রেপ্তার এড়াতে অনেকে বাস-ট্রেন স্টেশন, এমনকি ধানক্ষেত ও সবজি বাগানেও দিন কাটান। এক প্রকার উদ্বাস্তু জীবনযাপন করেছেন তারা। নির্বাচনের সময়ও বিএনপির অনেক নেতাকর্মীর বাড়িঘরে হামলা হয়েছে। এখন যে মামলা পরিচালনা করবে, সেই সামর্থ্যও তাদের নেই। তারা বলছেন, নিজের টাকায় জামিনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কেন্দ্র থেকে সমন্বয়হীনতা রয়েছে। আইনজীবীরাও পর্যাপ্ত সহায়তা করছেন না। যদিও দায়িত্বশীল কেন্দ্রীয় নেতারা বলেছেন, আইনি সহায়তা সেল গঠন করেছে বিএনপি। দলের আইনজীবীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
গত তিন মাসে বিএনপির কয়েকশ’ নেতাকর্মীকে সাজা দিয়েছেন আদালত। তাদের জীবনমান এবং ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। সাজাপ্রাপ্তদের সিংহভাগই ফেরারি জীবনযাপন করছেন। তাদেরকেও আত্মসমর্পণ করতে হবে আদালতে। তবে এ মুহূর্তে আত্মসমর্পণ করা ঝুঁকিপূর্ণ। এ মুহূর্তে আত্মসমর্পণ করলে দীর্ঘদিন কারাগারে থাকতে হবে। তাই এই ঝুঁকিও নিতে চাচ্ছেন না তারা। বরং কারাগারে থাকা নেতাকর্মীদের মুক্তির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
এদিকে ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সারা দেশে দুই দিনের গণসংযোগ কর্মসূচি দেওয়া হয়েছিল। সেটি ছিল বিএনপির ভাষ্য অনুযায়ী ভোট বর্জনের আহ্বানে সাড়া দেওয়ায় জনগণকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রচারপত্র বিতরণের কর্মসূচি। এরপর এবার দুই দিনের কালো পতাকা মিছিলের ডাক দিয়েছে দলটি। এর আগে ভোটের দিন হরতালসহ কয়েক দফায় অবরোধ কর্মসূচি পালন করে দলটি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দলটির মাঠপর্যায়ের নেতারা তাকিয়ে রয়েছে কেন্দ্রের দিকে। আর কেন্দ্রের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা তাকিয়ে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দিকে। পরবর্তী করণীয় নিয়ে ৭ জানুয়ারির পর কয়েক দফা স্থায়ী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হলেও কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি দলটি। তবে একটি সূত্র জানায়, সারাদেশের কর্মীদের মনোবল ধরে রাখতে শিগগিরই ঢাকাসহ বিভাগীয় সমাবেশ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এ অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে কমপক্ষে এক বছর সময় লাগবে বিএনপির, এমনটিই বলেছেন দলটির একাধিক নেতা। তারা বলেছেন, বিএনপির মূল চালিকাশক্তি, বিশেষ করে যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল এবং জেলা ও মহানগরের সক্রিয় নেতারাই জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির পরিধি ৬০০-এর বেশি হলেও আন্দোলনে সরব নেতাদের নামে মামলা দিয়ে তাদের ‘দৌড়ের ওপর’ রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ দলটির নেতাদের।
বিএনপির মধ্যম সারির কয়েকজন নেতার সাথে কথা হলে তারা বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে আছি। দ্বাদশ নির্বাচনও শেষ। এবারও সরকারকে বিদায় করার জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত আন্দোলনে কাঙ্ক্ষিত সফলতা না আসায় হতাশ না হওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। আমাদের সবার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা আছে। আমরা ঘরে থাকতে পারি না। আমাদের অধিকাংশের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ। এমন পরিস্থিতিতে আবারও সরকার ক্ষমতায় এলো। কাজেই হতাশ হওয়া ছাড়া পথ নেই। তবে, আমাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে। ঘুরে দাঁড়াতে না পারলে দলে বড় ধরনের সংকটের শঙ্কা রয়েছে। তারা এও বলেন, এই মুহূর্তে দলটির বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। দলকে যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে তার মধ্যে অন্যতম হলো- সাংগঠনিক তৎপরতা বাড়িয়ে দলকে সু-সংগঠিত করে নেতাকর্মীদের মনোবল বাড়াতে হবে, কারাগারে থাকা নেতাকর্মীদের মুক্তির ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি কূটনৈতিক সম্পর্ক বাড়িয়ে জোরালো আন্দোলন করতে হবে, তাহলেই আগামী দিনের আন্দোলনে আমরা সফল হবো বলে আশা করি।
সূত্র মতে, প্রায় এক বছর দেশব্যাপী শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের চাঙা করার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয় বিএনপি। এ পরিস্থিতিতে ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে সারাদেশ থেকে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী ও সমর্থক জড়ো করে মহাসমাবেশ সফল করে আন্দোলনের শেষ ধাপে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিল তারা। ওই দিনই রাজধানীতে রাজনৈতিক শক্তির মহড়া দিয়ে কঠোর লাগাতার কর্মসূচি ঘোষণা করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কর্মসূচি শুরুর ১ ঘণ্টার মধ্যেই পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়ায় তাদের মহাসমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়।
বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা মনে করছেন, সরকারের নানামুখী নিপীড়নের কারণে কর্মসূচিতে কিছুটা শিথিলতা এসেছে। তবে এখনো সময় পার হয়ে যায়নি। সরকারের বিদায় করেই ঘরে ফিরব। এজন্য এই মুহূর্তে দলকে বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।
সূত্র মতে, বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে বিএনপি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও একই সিদ্ধান্ত বহাল রাখতে বদ্ধপরিকর দলের হাইকমান্ড। তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীর মধ্যে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে তেমন কোনো আগ্রহ নেই। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানে বিপর্যস্ত নেতাকর্মীরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন নিজেদের আত্মরক্ষায়। মামলা-হামলা আর কারা জীবন শেষ করে আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন তারা। একই সঙ্গে নির্দলীয় সরকারের অধীনে সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ ও সুষ্ঠু জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাবে বিএনপি।
বিএনপির শীর্ষ এক নেতা জানান, এই মুহূর্তে মূল ফোকাস নেতাকর্মীদের চাঙা রাখা। মনোবল বৃদ্ধি করা। সংগঠনকে গতিশীল করা। বিকল্প নেতৃত্ব তৈরি করা। সাংগঠনিক শক্তি সঞ্চার করেই গণমুখী কর্মসূচির দিকে অগ্রসর হওয়া। সাম্প্রতিক ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচি ঘোষণা আসছে, আরো আসবে। এর মাধ্যমে ক্রমেই নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ততা বাড়ানো হবে। পর্যায়ক্রমে ঢাকাসহ সারাদেশে সভা -সমাবেশের মতো কর্মসূচি আসবে।
দলের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, একদফা দাবিতে যুগপৎ ধারায় যে আন্দোলন চলছে, তা অব্যাহত থাকবে। দাবি আদায়ে তাদের সাংগঠনিক তৎপরতা আরও কীভাবে জোরদার করা যায়, সে বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। চলমান পরিস্থিতিতেও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
সরকারের পদত্যাগের দাবিতে রাজপথের কর্মসূচি বাস্তবায়নে আরো জোর দেওয়া হবে। এছাড়া দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা শনাক্ত করে গণমুখী কর্মসূচি দেওয়ার চিন্তাভাবনাও চলছে। লক্ষ্য পূরণে ধারাবাহিক বৈঠক ছাড়াও চলমান আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মীদের পাশে থাকবেন তারা- দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে তেমনটিই নির্দেশনা রয়েছে।
দলটির স্থায়ী কমিটির এক নেতা বলেন, নির্দিষ্ট সময়ে দাবি আদায় না হলেও জনগণ ভোট বর্জন করেছে। এরপর সরকারের পতনও ঘটবে। একতরফা নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়াই আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছে। এবার তাদের বিদায়ের পালা। বিএনপি আগের মতোই এখনো আন্দোলনে আছে। নেতাকর্মীদের চাঙা করে গণমুখী কর্মসূচি দিয়ে সরকারের পতন ঘটানো হবে। ৯ জানুয়ারি থেকে প্রতিদিনই বিএনপি ও তার অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বৈঠক চলছে। এসব বৈঠকে আন্দোলনে নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন হয়েছে। পাশাপাশি আন্দোলন চলাকালীন সময়ে নেতাকর্মী ও সাংগঠনিক দুর্বলতাগুলো শনাক্ত হচ্ছে। শিগগিরই সংকটগুলো সমাধান করে গণমুখী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘বিএনপি হতাশ নয়। সংগঠনও শক্তিশালী। বিএনপি আন্দোলনকে আরো জোরদার করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। অচিরেই আমরা সমমনা জোটগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব।’
বিএনপির শিশুবিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী বলেন, ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে জনগণ ভোট বর্জন করেছে। এটাই আমাদের সফলতা। সরকার গায়ের জোরে ক্ষমতায় টিকে আছে। এই মুর্হুতে দলের সাংগঠনিক কর্মকান্ড ও আন্দোলন একসঙ্গে চলবে। একটির জন্য আরেকটি থেমে থাকবে না। অচিরেই আমরা একদফার আন্দোলন আরো কঠোরভাবে জোরদার করব। আমাদের নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত আছেন। সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চলমান আছে। বিএনপি আন্দোলনেই আছে, এর মধ্যে যেখানে সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি করা দরকার দল তা করবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক নেতা বলেন, ‘আন্দোলনে আমরা ব্যর্থ হয়েছি, এটা বলব না। সরকার শত চেষ্টা করেও বিএনপির ক্ষতি করতে পারেনি। তবে, যতটুকু আশা করেছিলাম সেটা পারিনি। এই মুহূর্তে দলকে কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা প্রয়োজন। আন্দোলনের প্রশ্নে কেন্দ্র থেকে নিশ্চয়ই একটি সিদ্ধান্ত হবে।’
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ভোট বর্জন করে বিএনপি। ২০১৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিলেও ভোটে কারচুপির অভিযোগ তোলে দলটি। এবার ২০১৪ সালের মতো ২০২৪ সালের ভোটও বর্জন করেছে বিএনপি।