ঈদের পর সারা দেশে উপজেলা নির্বাচন

প্রকাশ : ২৩ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আরিফুল ইসলাম

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর এখন উপজেলা পরিষদ ভোট নিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। রোজার ঈদের পর প্রথম ধাপের উপজেলা ভোট করবে ইসি। এ ভোটে সংসদের বাইরের বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপির অংশগ্রহণ করার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। তারা ভোটে আসলে স্বাগত জানাবে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ইসি।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি। তাদের তৃণমূলকে চাঙ্গা করার জন্য হলেও আগামী নির্বাচনগুলোতে অংশগ্রহণ করার পরিকল্পনা নিচ্ছে দলটি। এছাড়া নেতাদের মামলাসহ বিভিন্ন কারণে চাপে আছে বিএনপি। তাই তাদের ভোটে আসা জরুরি বলে মনে করছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এছাড়া আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করলে তারা ইসির নিবন্ধন ঝুঁকিতে পড়বে। সব মিলিয়ে এখন থেকে বিএনপি ভোটমুখি হতে চায়। এদিকে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, উপজেলা নির্বাচনের বিষয়ে কমিশন কাজ করছে। সচিবালয়ের পক্ষ থেকে প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। প্রথম ধাপে নির্বাচন করা যায় এমন অন্তত ১০০ উপজেলার তালিকা প্রস্তুত রয়েছে।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে গতবার কোন উপজেলায় কবে ভোট হয়েছিল, কবে প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়, সেসব তথ্য দিতে বলা হয়েছিল। সে অনুযায়ী তারা ইসিকে তালিকা সরবরাহ করেছে।

দেশে বর্তমানে ৪৯৫টি উপজেলা পরিষদ রয়েছে। ২০১৯ সালের ১০ মার্চ নির্বাচন শুরু হয়ে পাঁচ ধাপে জুনে গিয়ে শেষ হয়।

আইন অনুযায়ী, উপজেলা পরিষদের মেয়াদ হচ্ছে প্রথম সভা থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর। আর নির্বাচন করতে হয় মেয়াদপূর্তির আগের ১৮০ দিনের মধ্যে। সে অনুযায়ী ইতিমধ্যে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু হয়ে গেছে। এবারও পাঁচ ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি পরীক্ষা, মার্চে রোজা শুরু ও এপ্রিলে ঈদের বিষয়টি বিবেচনায় রাখা হয়েছে। প্রথম ধাপের নির্বাচনের বিষয়ে চলতি সপ্তাহেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করবে ইসি।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি ইসির মাঠ কর্মকর্তাদেরও উপজেলা নির্বাচনসংক্রান্ত তথ্য দিতে বলেছে ইসি। এ সংক্রান্ত চিঠির অনুলিপি জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের দেওয়া হয়েছে।

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, উপজেলা পরিষদ আইন, ১৯৯৮-এর ১৭(১)(গ) ধারা অনুসারে পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ক্ষেত্রে ওই মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ থেকে পূর্ববর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে পঞ্চম উপজেলা পরিষদের শপথ গ্রহণ ও প্রথম সভার তারিখের তথ্য পাঠানোর সিদ্ধান্ত দিয়েছে ইসি।

উপজেলা পরিষদ চালুর পর ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ১৯৯০ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হলেও পরে উপজেলা কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর আবারও উপজেলা পরিষদ চালু করে। ওই বছর তৃতীয়বার নির্বাচন হয়।

নির্বাচন কমিশনার (ইসি) আনিছুর রহমান বলেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আমরা এখনও পর্যালোচনা করছি এবং দেখছি। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হবে এবং ১২ মার্চ শেষ হবে। আবার ১০ বা ১১ মার্চ রোজা শুরু হবে। এসব বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হচ্ছে। উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপে যেই নির্বাচনগুলো করতে হবে, সেগুলো ৩০ এপ্রিলের মধ্যে কিছু হবে। বাকিগুলো কয়েকটা ধাপে মে মাসে করা হবে। কারণ জুন মাসে আবার এইচএসসি পরীক্ষা। এজন্য আমরা এই সময়টাকে কাজে লাগাতে চাই। উপজেলার যেই তালিকাগুলো আমরা পেয়েছি, সেগুলো যাচাই-বাছাই করছি। ঈদের আগে উপজেলা পরিষদের নির্বাচন হওয়ার সম্ভবনা নেই। তবে ৩০ এপ্রিলের মধ্যেই কিছু সংখ্যাক নির্বাচন করব। প্রায় ১০০ উপজেলার নির্বাচনের জন্য এই সপ্তাহেই সিদ্ধান্ত হতে পারে।

জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনের নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সংরক্ষিত আসনের ভোট নিয়ে যাচাই-বাছাই হচ্ছে। সহসাই হয়ে যাবে। যেহেতু আইনের বাধ্যবাধকতা আছে যে, সংসদ নির্বাচনের এক মাসের মধ্যে করতে হয়।