ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ততা বেড়েছে ইসির

উপজেলা নির্বাচন আরো সুষ্ঠু ও সুন্দর হবে : ইসি আলমগীর
স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ততা বেড়েছে ইসির

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষ করার পর এখন স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। স্থানীয় সরকারের অধীনে সিটি কর্পোরেশন এবং উপজেলা ও পৌরসভায় একযোগে নির্বাচন করতে যাচ্ছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। সংসদ ভোটের মতো এসব ভোট সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে চায় ইসি।

ইসি সূত্র জানায়, ময়মনসিংহ সিটির সাধারণ নির্বাচন ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে উপনির্বাচন আগামী ৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত এসব সিটিতে ভোট হবে। একইদিনে তিন-চারটা পৌরসভায় নির্বাচন হবে। পৌরসভাগুলোও ইভিএমে ভোটগ্রহণ হবে। এছাড়া উপজেলা পরিষদ ও জেলা পরিষদে উপনির্বাচন হবে। এর বাইরেও মৃত্যুজনিত কারণে কিছু ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন হবে।

নির্বাচন পরিচালনা সাখার কর্মকর্তরা জানান, ঈদের পর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হবে। উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপে যেই নির্বাচনগুলো করতে হবে, সেগুলো ৩০ এপ্রিলের মধ্যে কিছু হবে। বাকিগুলো কয়েকটা ধাপে মে মাসে করা হবে। কারণ জুন মাসে আবার এইচএসসি পরীক্ষা। এজন্য আমরা এই সময়টাকে কাজে লাগাতে চাই। উপজেলার যেই তালিকগুলো আমরা পেয়েছি, সেগুলো যাচাই-বাছাই করছি। ঈদের আগে উপজেলা পরিষদের নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে ৩০ এপ্রিলের মধ্যেই কিছুসংখ্যক নির্বাচন করব। প্রায় ১০০ উপজেলার নির্বাচনের জন্য এই সপ্তাহেই সিদ্ধান্ত হতে পারে।

নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, আসন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনও আরো সুষ্ঠু ও সুন্দর হবে। তিনি বলেন, নির্বাচনে সহিংসতা কেন হয় সেটি গবেষণার বিষয়। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ম্যাজিস্ট্রেট, নির্বাচনের কর্মকর্তারা থাকবেন। যাতে কোনো সহিংসতা না হয়। সবার সহযোগিতায় জাতীয় নির্বাচনে সহিংসতা হয়নি। জাতীয় নির্বাচন যেহেতু আমরা শান্তিপূর্ণভাবে করতে পেরেছি, আমরা আশা করি যেহেতু এটা কয়েকটা ধাপে হবে, সেখানে আমাদের নির্বাচনটা আরো সুষ্ঠু ও সুন্দর হবে।

সংসদ নির্বাচনে যারা অংশগ্রহণ করেনি, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য তাদের প্রতি আপনারা আহ্বান জানাবেন কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের আহ্বান থাকবে সব রাজনৈতিক দলের যারা আছেন তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। কারণ, আমরা সংসদ নির্বাচন যেমন সুষ্ঠু, সুন্দর করার চেষ্টা করেছি, নিরপেক্ষভাবে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও একইভাবে আমরা সুষ্ঠু করার চেষ্টা করব। যেহেতু এটা কয়েকটা ধাপে হবে। সেখানে আমাদের মনোযোগটা আরো বেশি থাকবে। সেগুলো আরো সুষ্ঠু হবে বলে আমরা আশা করি।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের বিষয়ে মো. আলমগীর বলেন, যেহেতু সামনে এসএসসি পরীক্ষা আছে। এর পরই রোজা শুরু হবে। রোজার মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব নয়। ঈদের পরপরই যাতে নির্বাচন হয়, আমরা সেইভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি। এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু হয়ে ৩১ মে’র মধ্যে ধাপে ধাপে এই নির্বাচন শেষ করা হবে। আর মনোনয়নপত্র তোলা, জমা- এগুলো হয়তো রোজার শেষের দিকে হবে। কিন্তু নির্বাচনি প্রচারণা, নির্বাচন ঈদের পরে হবে। উপজেলা নির্বাচন ইভিএমে হতে আবার ব্যালটেও হতে পারে বা ব্যালট ও ইভিএমে মিক্সডও হতে পারে। এই ব্যাপারে এখনি চূড়ান্ত কিছু বলা যাচ্ছে না। কারণ, ইভিএম কি পরিমাণ ব্যবহারযোগ্য সেই হিসাবটা আমরা এখনো পাইনি। হিসাবটা পেলে আমরা এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারব।

ক্ষমতাসীন দল দলীয় প্রতীক দেবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। দলীয় প্রতীক থাকায় নির্বাচনটা কতটা জটিল হয়েছে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনো রাজনৈতিক দল যদি মনে করে তারা দলীয় প্রতীকে মনোনয়ন দেবে না। সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কোনো মন্তব্য নেই। এ নিয়ে কোনো সমস্যাও নেই। রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন নিয়ে ও স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়া যায়। কোনো রাজনৈতিক দল দলীয় প্রতীক না দিলে সে ক্ষেত্রে তারা স্বতন্ত্রদের নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচন করবে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে হলে সংশ্লিষ্ট উপজেলার ২৫০ জন ভোটারের সমর্থন রয়েছে- এমন প্রমাণ জমা দিতে হবে। আর যদি কেউ এর আগে উপজেলা চেয়ারম্যান বা ভাইস চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়ে থাকেন। তাহলে তাদের ভোটারের সমর্থনযুক্ত তালিকা জমা দিতে হবে না।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের কাছে দলীয় প্রতীক থাকলেও যে অবস্থা, না থাকলেও একই অবস্থা। নির্বাচন কমিশনের জন্য এটি আলাদা কোনো দায়দায়িত্ব নেই।

জানা যায়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে গতবার কোন উপজেলায় কবে ভোট হয়েছিল, কবে প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়; সেসব তথ্য দিতে বলা হয়েছিল। সে অনুযায়ী তারা ইসিকে তালিকা সরবরাহ করেছে।

দেশে বর্তমানে ৪৯৫টি উপজেলা পরিষদ রয়েছে। ২০১৯ সালের ১০ মার্চ নির্বাচন শুরু হয়ে পাঁচ ধাপে জুনে গিয়ে শেষ হয়।

আইন অনুযায়ী, উপজেলা পরিষদের মেয়াদ হচ্ছে প্রথম সভা থেকে পরবর্তী ৫ বছর। আর নির্বাচন করতে হয় মেয়াদপূর্তির আগের ১৮০ দিনের মধ্যে। সে অনুযায়ী এরই মধ্যে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু হয়ে গেছে।

এবারও পাঁচ ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি পরীক্ষা, মার্চে রোজা শুরু ও এপ্রিলে ঈদের বিষয়টি বিবেচনায় রাখা হয়েছে। প্রথম ধাপের নির্বাচনের বিষয়ে চলতি সপ্তাহেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করবে ইসি।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি ইসির মাঠ কর্মকর্তাদেরও উপজেলা নির্বাচন-সংক্রান্ত তথ্য দিতে বলেছে ইসি। এ সংক্রান্ত চিঠির অনুলিপি জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের দেওয়া হয়েছে।

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, উপজেলা পরিষদ আইন, ১৯৯৮-এর ১৭(১)(গ) ধারা অনুসারে পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ক্ষেত্রে ওই মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ থেকে পূর্ববর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে পঞ্চম উপজেলা পরিষদের শপথগ্রহণ ও প্রথম সভার তারিখের তথ্য পাঠানোর সিদ্ধান্ত দিয়েছে ইসি।

উপজেলা পরিষদ চালুর পর ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ১৯৯০ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হলেও পরে উপজেলা কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর আবারও উপজেলা পরিষদ চালু করে। ওই বছর তৃতীয়বার নির্বাচন হয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত