মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে শুরু হচ্ছে রোজা

ব্যস্ততা বেড়েছে পাইকারি বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে

প্রকাশ : ২৫ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  তামীম রহমান, চট্টগ্রাম

আসন্ন রমজান উপলক্ষ্যে দেশের সর্ববৃহৎ ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার চাক্তাই খাতুনগঞ্জে রমজানের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। প্রতি বছর রমজান মাসকে কেন্দ্র করে জমজমাট থাকে বৃহৎ এ পাইকারি বাজার। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা নানা ধরনের ভোগ্যপণ্যের সমারোহ থাকে খাতুনগঞ্জে। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, পণ্য আগাম বুকিং থেকে শুরু করে গুদামে আসা পর্যন্ত দেড় থেকে দুই মাস সময় লাগে। অনেক সময় বন্দর থেকে পণ্য ছাড় করতেও সময়ের প্রয়োজন হয়। হিসেব অনুযায়ী এ বছর রমজান শুরু হতে পারে মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে সেই হিসেবে সময় আছে দুই মাসেরও কম। তাই এখন থেকে পণ্য গুদামজাত না করলে পরবর্তী পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হবে। এরই মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ছোলা, মটর ও মসুর ডাল আমদানি হয়েছে। এছাড়া গত বছরের অনেক পণ্য গুদামে অবিক্রিত থেকে গেছে। সব মিলিয়ে রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় এসব পণ্যের দাম সহনশীল পর্যায়ে থাকবে। তবে ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে এ বছর আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে। তাই পণ্যের দাম গত বছরের তুলনায় কিছুটা বেশি। এদিকে রমজানের নিত্যপণ্যের তুলনামূলক বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত বছর এমন সময় অস্ট্রেলিয়ার ছোলার দাম ছিল কেজিপ্রতি ৯০ টাকা, বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৯৫ টাকায়। এছাড়া গত বছর ভারতীয় ছোলার দাম ৯২ টাকা এবং বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকা। খেসারি ডাল গত বছর ছিল ৯০ টাকা, বর্তমানে ৯৮ টাকা, মটর ডাল গত বছর বিক্রি হয়েছে ৫৫ টাকা, বর্তমানে ৬৫ টাকা, সাদা মটর গত বছর বিক্রি হয়েছে ৫২ টাকা এবং বর্তমানে ৬৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে মসুর ডাল গত বছর বিক্রি হয়েছে ৮২ টাকা, বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা এবং সয়াবিন তেল প্রতি মণ (৩৭.৩২ কেজি) গত বছর বিক্রি হয়েছে ৬ হাজার ৮০০ টাকা, বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার ৮০০ টাকা। এছাড়া পাম তেল প্রতি মণ গত বছর বিক্রি হয়েছে ৫ হাজার ৩০০ টাকা, বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৭৫০ টাকা, পেঁয়াজ গত বছর এমন সময়ে বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকা, বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকা, রসুন গত বছর ছিল ১২০ টাকা, বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ২০৫ টাকা, চীনা আদা গত বছর ছিল ১৬০ টাকা, বর্তমানে ১৭০ টাকা এবং মিয়ানমারের আদা গত বছর বিক্রি হয়েছে ৭০ টাকা, বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়। খাতুনগঞ্জের আড়তদাররা জানান, রমজানকে কেন্দ্র করে ভোগ্যপণ্যের আমদানি আগের চেয়ে বেড়েছে। ব্যবসায়ীদের দোকান ও গুদামে প্রচুর পরিমাণ পণ্য মজুত রয়েছে। সাধারণত রমজান এলে শরবতের চাহিদা বেড়ে যায়। তাই চিনির ব্যবহারও বাড়ে কয়েক গুণ। বর্তমানে বাজারে চিনির কোনো ঘাটতি নেই। এছাড়া সারা দেশে প্রায় ৮০ হাজার টন ছোলার চাহিদা থাকে। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া থেকে প্রচুর পরিমাণে ছোলা এসেছে। এছাড়া এর বাইরে রমজানে সাদা মটর ও মসুর ডালেরও চাহিদা বেড়ে যায়। ভোজ্যতেল, চিড়া এবং খেজুরের চাহিদাও বৃদ্ধি পায়। সাধারণত খেজুর আমদানি হয় ইরান, তিউনিসিয়া, দুবাই ও সৌদি আরব থেকে। চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির অন্য এক নেতা বলেন, গত তিন চার মাস আগে থেকে রমজানের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির জন্য এলসি (ঋণপত্র) খুলেন ব্যবসায়ীরা। এরই মধ্যে ওইসব পণ্য গুদামজাত হচ্ছে।

আমাদের দেশে প্রতি বছর ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বাড়ছে। আবার তার সাথে পাল্লা দিয়ে আমদানির পরিমাণও বাড়ছে। বর্তমানে যে পরিমাণ পণ্য আমদানি হয়েছে, তাতে রমজানে পণ্যের দাম বাড়বে না। চাক্তাই আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির এক নেতা জানান, রমজান উপলক্ষ্যে এরই মধ্যে ব্যবসায়ীরা আমদানিকৃত পণ্য গুদামজাত শুরু করছেন।

আমদানিকৃত পণ্য চট্টগ্রামের পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা উপজেলাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি করবেন ব্যবসায়ীরা। তবে এ বছর আমদানি ব্যয় বাড়ার কারণে কিছু কিছু পণ্যের দাম বেশি। যে পরিমাণ পণ্য মজুত আছে, আশা করি পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকবে।