রাশিয়ার সামরিক বিমান বিধ্বস্ত

ইউক্রেনের ৬৫ যুদ্ধ বন্দি নিহতের দাবি

প্রকাশ : ২৫ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

ইউক্রেন সীমান্তের কাছে রাশিয়ার একটি সামরিক বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। গতকাল রাশিয়ার বেলগোরোদ অঞ্চলে বিমানটি মাটিতে আছড়ে পড়ে। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তাসংস্থা আরআইএ। দুর্ঘটনায় বিমানটির ভেতরে থাকা ৬৫ জন ইউক্রেনীয় যুদ্ধবন্দির মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছে রাশিয়া। তবে ইউক্রেনের একটি ইংরেজি পত্রিকার দাবি, ওই বিমান ইউক্রেনের সেনারা ভূপাতিত করেছে এবং সেটিতে ইউক্রেনের কোনো বন্দি ছিল না। রাশিয়ার বার্তাসংস্থা আরআইএ নভোস্তি জানিয়েছে, বিমানটিতে রুশ বাহিনীর হাতে বন্দি ইউক্রেনীয় সেনারা ছিলেন। যাদের বন্দি বিনিময়ের জন্য বেলগোরোদে নিয়ে আসা হচ্ছিল।

বেলগোরোদের আঞ্চলিক গভর্নর ভায়াচেসলাভ গ্লাদকোভ জানিয়েছেন, তিনি বিমান দুর্ঘটনা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন এবং ঘটনাস্থলে গেছেন। তিনি আরো জানিয়েছেন, সেখানে উদ্ধারকারী দল পৌঁছেছে। বিমান বিধ্বস্তের কারণ অনুসন্ধান চলছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, স্থানীয় সময় সকাল ১১টার দিকে ইয়াবলোনোভো গ্রামে একটি বিমান খাড়াভাবে আছড়ে পড়ছে। বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার আগে একটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।

রুশ প্রেসিডেন্টের দপ্তর ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকোভ জানিয়েছেন, তারা বিমান বিধ্বস্তের ব্যাপারে জানতে পেরেছেন। তবে তিনিও বিস্তারিত কোনো কিছু জানাননি। বিমানটি তৈরি করা হয়েছে সেনা, কার্গো, সামরিক সরঞ্জাম এবং অস্ত্র পরিবহনের জন্য। বিমানটিতে সাধারণত পাঁচজন ক্রু থাকেন এবং এটি সর্বোচ্চ ৯০ জন যাত্রী বহন করতে পারে। রুশ বার্তাসংস্থা আরআইএ নভোস্তি আরো জানিয়েছে, বিমানটিতে ৬৫ জন যুদ্ধবন্দি ছাড়াও ৯ জন অন্য যাত্রী ছিলেন। যাদের মধ্যে ছয়জন ছিলেন ক্রু। ইউক্রেনের প্রভাবশালী ইংরেজি সংবাদমাধ্যম ইউক্রেনীয় প্রাভাদা অবশ্য জানিয়েছে, বিমানটি ইউক্রেনীয় সেনারা ভূপাতিত করেছে এবং এটির ভেতর কোনো যুদ্ধবন্দি ছিল না। বিমানটি বিধ্বস্তের সময় এস-৩০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ক্ষেপণাস্ত্র বহন করছিল বলে দাবি করে পত্রিকাটি।

ইউক্রেনে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত বেড়ে ১৮ : ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ ও দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভে মঙ্গলবার রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৮ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো ১৩০ জনের বেশি মানুষ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশকিছু বাড়িঘর ও অবকাঠামো। ওইদিন রাতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এই তথ্য জানিয়েছেন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এই খবর জানিয়েছে।

তিন বছরে গড়াতে চলল ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। এরই মধ্যে ইউক্রেনে হামলা আরও জোরদার করেছে রাশিয়া। খারকিভের পূর্বাঞ্চলীয় শহরে তিন দফায় হামলা চালিয়েছে রুশ সেনারা। কিয়েভ ও খেরসনের দক্ষিণাঞ্চলে অবিরাম গোলাবর্ষণ করা হয়েছে।

রাতের নিয়মিত ভিডিও বার্তায় গত মঙ্গলবার জেলেনস্কি বলেছেন, বিভিন্ন ধরনের প্রায় ৪০টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে রাশিয়া। এসব ক্ষেপণাস্ত্র ২০০টির বেশি স্থানে আঘাত হানে। এসব স্থানের ১৩৯টিই বেসামরিকদের আবাস্থল। এতে ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। সেখানে সাধারণ মানুষ বসবাস করত। খারকিভের মেয়র এবং গভর্নর বলেছেন, ২৩ মাস ধরে চলা এই যুদ্ধে ক্রমাগত হামলার শিকার হওয়া এ শহরটিতে সর্বশেষ রুশ হামলায় আটজন নিহত হয়েছেন। খারকিভের আঞ্চলিক গভর্নর ওলেহ সিনহুবভ বলেছেন, প্রথম দুটি হামলায় ১০০টিরও বেশি উঁচু ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওইদিন সন্ধ্যায় একটি অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক এবং অন্যান্য অবকাঠামোতে তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত করেছিল। এতে ৭ জন আহত হয়েছেন। ইউক্রেনের জেনারেল স্টাফ বলেছেন, বিভিন্ন ধরনের ৪৪টি ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যেম ২২টিই ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনী ধ্বংস করেছে।

এর আগে, রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রুস্তেম উমেরভ। কিয়েভের প্রতিরক্ষা খাতে সহায়তার বিষয়ে সর্বশেষ আন্তর্জাতিক মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে তিনি বলেছিলেন, রাশিয়া ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বাড়াচ্ছে। তখন তিনি আন্তর্জাতিক মন্ত্রীদের জানিয়েছিলেন, গত দুই মাসে ৬০০টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র এবং এক হাজারটিরও বেশি ড্রোন ব্যবহার করেছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। ওই বৈঠকের পর ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছিলেন জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্টোরিয়াস। তিনি বলেছিলেন, চলতি বছরের শেষের দিকে ইউক্রেনকে ছয়টি ‘সি কিং’ হেলিকপ্টার দেবে বার্লিন।