প্রশ্নবিদ্ধ নতুন শিক্ষাক্রম

প্রকাশ : ২৭ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আমিরুল ইসলাম অমর

নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে সারা দেশে চলছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। এই শিক্ষাক্রমে উপেক্ষিত থাকছে বিশেষায়িত শিক্ষা। নতুন এই শিক্ষাক্রম নিয়ে শিক্ষাবিদ, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। কেউ কেউ নতুন এই শিক্ষাক্রমকে সাধুবাদ জানালেও অনেকে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন। বিশেষ করে নবম শ্রেণি থেকে বিভাগ বিভাজন তুলে দেয়ায় বেশি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে এই নুতন কারিকুলাম। এছাড়া যৌন শিক্ষা ও শরীফ-শরীফার কাহিনী প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। সূত্রমতে, নবম শ্রেণি থেকে বিভাগ বিভাজন চালু হয়েছিল ১৯৫৯ সালে। সে হিসাবে ৬৫ বছর এ নিয়মে চলেছে শিক্ষাপদ্ধতি। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর দফায় দফায় শিক্ষাক্রম পরিবর্তন হলেও এ প্রথা কখনো ভাঙা হয়নি। অবশেষে এলো পরিবর্তন। দীর্ঘ ৬৫ বছর পর চলতি শিক্ষাবর্ষে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সবাই পড়ছে একই বিষয়। নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী চালু হয়েছে এ প্রক্রিয়া। যেখানে নেই বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য শাখার বিভাজন। সবার বই এক, ক্লাসরুম এক, মূল্যায়ন পদ্ধতিও এক। এ নিয়ে বেজায় খুশি শিক্ষার্থীরা। তবে বেশিরভাগ অভিভাবক বিষয়টি ভালোভাবে নিচ্ছেন না। তারা বিভাগ বিভাজনের পক্ষে মত দিয়েছেন। আবার কেউ কেউ একমুখী এ পদ্ধতিকে ভালো বলছেন। এমন মিশ্র প্রতিক্রিয়ার মধ্যেও প্রায় সব অভিভাবকের প্রশ্ন, নতুন শিক্ষাক্রমে বিভাগ বিভাজন কখন থেকে এবং কীভাবে?

অভিভাবকদের এমন প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর নেই জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কাছেও। এনসিটিবি কর্মকর্তারা বলেন, নতুন জাতীয় শিক্ষাক্রমের রূপরেখায় বিষয়টির ধারণা থাকলেও তা চূড়ান্ত নয়। চলতি বছর যেহেতু একাদশ-দ্বাদশে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হচ্ছে না, তাই এ নিয়ে তোড়জোড়ও করছেন না তারা। এ বিষয়ে অনুসন্ধান ও যাচাই প্রক্রিয়ায় ‘ধীরে চলা’র নীতি নিয়েছে এনসিটিবি। এ বছরের মাঝামাঝি সময়ে বিষয়টি নিয়ে সুস্পষ্ট রূপরেখা দাঁড় করানো হতে পারে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২৩ সালে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হয়। চলতি বছর আরও চার শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রমে পড়ানো হচ্ছে। সেগুলো হলো- দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম। আগামী বছর অর্থাৎ, ২০২৫ সালে চতুর্থ, পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালুর মাধ্যমে মাধ্যমিক পর্যন্ত স্তরে সব শ্রেণিতেই তা চালু হবে। ২০২৬ সালে একাদশ ও ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণিতে চালু হবে নতুন শিক্ষাক্রম।

নবম শ্রেণিতে এ বছর নতুন শিক্ষাক্রম চালু হওয়ায় বিভাগ বিভাজন প্রথা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এটিই এ বছরে শিক্ষায় বড় পরিবর্তন। নতুন নিয়মে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকে ১০টি অভিন্ন বিষয় পড়তে হবে। এতদিন অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সবাইকে অভিন্ন বিষয় পড়ে নবম শ্রেণিতে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা নামে আলাদা বিভাগ অর্থাৎ, বাধ্যতামূলক কয়েকটি বিষয়ের পাশাপাশি বিভাগভিত্তিক বিশেষায়িত কয়েকটি বিষয় পড়তে হতো। নতুন শিক্ষাক্রমে শুধু দশম শ্রেণির পাঠ্যবই থেকে এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি করা হবে। আগে এটি নবমণ্ডদশম শ্রেণি মিলিয়ে করা হতো। ২০২৬ সালে নতুন শিক্ষাক্রমে শুধু দশম শ্রেণির বই পড়ে শিক্ষার্থীরা এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবে।

উচ্চমাধ্যমিক তথা একাদশ শ্রেণিতে বিভাগ বিভাজনের একটি ধারণা নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখায় রয়েছে। তবে এর পূর্ণাঙ্গ পদ্ধতি এখনো দাঁড় করানো যায়নি বলে জানিয়েছেন এনসিটিবি কর্মকর্তারা। তাদের প্রাথমিক পরিকল্পনা হলো- উচ্চমাধ্যমিকে বিভাগ বিভাজন হবে। এক্ষেত্রে তিনটি বিষয় সবার জন্যই বাধ্যতামূলক থাকবে। নির্বাচিত বিষয়গুলো; যেমন- পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞান, অর্থনীতি ইত্যাদি থেকে একজন শিক্ষার্থী তার আগ্রহ অনুযায়ী যে কোনো তিনটি বিষয় নির্বাচন করতে পারবে।

বিজ্ঞান, মানবিক, বাণিজ্যের বিভাজন তুলে দেওয়ায় আমাদের শিক্ষা হুমকির মুখে পড়তে পারে। সবাই সব শিখতে গিয়ে দেখা যাবে কেউই কিছুই ঠিকভাবে শিখছে না। আর মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার এ অপূর্ণতার কারণে তারা উচ্চপর্যায়ে আর বিজ্ঞান শিক্ষায় আগ্রহীই হবে না।

কোনো শিক্ষার্থী চাইলে বিজ্ঞান বিষয়ের পাশাপাশি অন্য বিভাগের বিষয়ও নেওয়ার সুযোগ পাবে। যেমন- একজন শিক্ষার্থী চাইলে পদার্থ, রসায়নের পাশাপাশি অর্থনীতিও নেওয়ার সুযোগ পাবে। একইভাবে অন্য বিভাগের শিক্ষার্থীরাও মিশ্র বিষয় নেওয়ার সুযোগ পাবে। এছাড়া নতুন পদ্ধতিতে পেশাগত দক্ষতার জন্য আরেকটি বিষয় ঐচ্ছিকভাবে নেওয়ার সুযোগ রাখা হতে পারে।

জানতে চাইলে এনসিটিবির শিক্ষাক্রম ইউনিটের সদস্য অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন, উচ্চমাধ্যমিকে গিয়ে শিক্ষার্থীদের কীভাবে বিভাগ বিভাজনের সুযোগ দেওয়া হবে, তা এখনো চূড়ান্ত করিনি আমরা। এ বছরের মাঝামাঝি সময়, হয়তো মে-জুনের দিকে এটা চূড়ান্ত করা যেতে পারে। প্রাথমিক কিছু পরিকল্পনা আছে। সেগুলো আলাপ-আলোচনা করে পরিস্থিতি বিবেচনায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বিভাগ বিভাজনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের ‘ভালোর দিকটি বিবেচনায় রেখে’ করা হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় শিক্ষাক্রম উন্নয়ন ও পরিমার্জন কোর কমিটির সদস্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) অধ্যাপক এম তারিক আহসান। তিনি বলেন, বিষয়টি (একাদশ শ্রেণিতে বিভাগ বিভাজন) এখনো প্রাথমিক পরিকল্পনার স্তরে রয়েছে। যেভাবে পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে, তাতে সবার জন্যই ভালো হবে।

বর্তমানে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে একই নামের দুটি করে বই পড়েন শিক্ষার্থীরা। নাম এক থাকলেও এগুলো দুই পত্রে বিভক্ত। যেমন- একাদশে পড়েন বাংলা প্রথমপত্র। দ্বাদশে বাংলা দ্বিতীয়পত্র। দুই বছর একই বিষয়গুলোর দুই পত্র পড়ে চূড়ান্ত পাবলিক পরীক্ষা অর্থাৎ, এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন তারা।

নতুন শিক্ষাক্রমে এ প্রক্রিয়াও থাকছে না। নতুন নিয়মে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে প্রত্যেক বর্ষ শেষে বোর্ডের অধীন পরীক্ষা হবে। এরপর দুই পরীক্ষার ফলাফলের সমন্বয়ে এইচএসসির চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হবে।

উচ্চমাধ্যমিক অর্থাৎ, একাদশ-দ্বাদশে বইয়ের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আসবে। তখন বাংলা, ইংরেজি ও সমন্বিত আরেকটি বিষয় সব শিক্ষার্থীর জন্য বাধ্যতামূলক থাকবে। বাকি চারটি (তিনটি নৈর্বাচনিক ও একটি ঐচ্ছিক) শিক্ষার্থীরা পছন্দ অনুযায়ী বেছে নেওয়ার সুযোগ পাবেন।

নবমণ্ডদশম শ্রেণিতে বিভাগ বিভাজন বিলুপ্ত করায় বিজ্ঞান বিষয়ে গুরুত্বও কম দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন অনেক অভিভাবক। বিভাজন তুলে দেওয়ায় সন্তানের বিজ্ঞান বিষয় কম পড়া এবং উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্র নিয়ে চিন্তিত তারা। এমনকি শিক্ষক ও শিক্ষাবিদরাও বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন।

বিভাগ বিভাজন উঠে যাওয়ার বিষয় নিয়ে একজন অভিভাবকের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি সায়েন্সে (বিজ্ঞান) পড়েছি, ওর বাবাও সায়েন্সের। ছেলেকেও আমরা বিজ্ঞানে পড়াতে চেয়েছিলাম। এখন শুনি সবাই একই বিষয় পড়বে। সেখানে বিজ্ঞানের বিষয়ও কম। আমার ছেলে বেশ মেধাবী, পড়ালেখায়ও মনোযোগী। ওর জন্য বিজ্ঞান বিভাগই উপযুক্ত ছিল। এখন যে ১০টা বই সেটাতে বিজ্ঞান বলে কিছু আছে বলে আমার তো মনে হয় না।

শিক্ষাবিদরা বলছেন, বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা এতদিন নবমণ্ডদশমে পৃথকভাবে তুলনামূলক বড় পরিসরে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান ও উচ্চতর গণিতের মতো বিষয়গুলো পড়েছে। এসএসসির পর যত উপরের স্তরে গেছে, বিজ্ঞানে শিক্ষার্থীদের হার তত কমেছে। ফলে মাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞান শিক্ষার পরিসর সংকুচিত করা হলে পরের স্তরে তা আরও কমবে।

বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) প্রতিবেদন অনুযায়ী, সর্বশেষ তিন বছরে এসএসসির চেয়ে এইচএসসিতে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী অনেক কম। ২০২০ সালে এসএসসিতে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী ছিল মোট পরীক্ষার্থীর ৩০ দশমিক ৯২ শতাংশ, ২০২১ সালে ছিল ২৮ দশমিক ১৯ শতাংশ এবং ২০২২ সালে এ হার ছিল ৩১ দশমিক ৯৩ শতাংশ। অন্যদিকে ২০২০ সালে এইচএসসিতে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী ছিলেন ২৩ দশমিক ৪২ শতাংশ, ২০২১ সালে ২২ দশমিক ৫০ এবং ২০২২ সালে ছিল ২৪ দশমিক ৫৪ শতাংশ।

এ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন বলেছেন, বিজ্ঞান, মানবিক, বাণিজ্যের বিভাজন তুলে দেওয়ায় আমাদের শিক্ষা হুমকির মুখে পড়তে পারে। সবাই সব শিখতে গিয়ে দেখা যাবে কেউই কিছুই ঠিকভাবে শিখছে না। আর মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার এ অপূর্ণতার কারণে তারা উচ্চপর্যায়ে আর বিজ্ঞান শিক্ষায় আগ্রহীই হবে না।

বিষয়টি মানতে নারাজ নতুন শিক্ষাক্রম প্রণেতাদের অন্যতম, এনসিটিবি সদস্য অধ্যাপক মশিউজ্জামান দাবি করেন, নতুন শিক্ষাক্রমে দশম শ্রেণির সব শিক্ষার্থী বিজ্ঞানের বিষয়গুলো পড়ার সুযোগ পাবে। এর অর্থ হলো, শতভাগ শিক্ষার্থীর মধ্যেই বিজ্ঞানের প্রসারতা বাড়বে।

অধ্যাপক মশিউজ্জামান আরও বলেন, নবমণ্ডদশম শ্রেণিতে বিভাগ বিভাজন করে আমরা কয়জন বিজ্ঞানী তৈরি করতে পেরেছি? আমি মনে করি, নতুন এ শিক্ষাক্রমে বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ কোনোভাবেই কমবে না। বরং আগে অধিকাংশ শিক্ষার্থীর মধ্যে বিজ্ঞান নিয়ে যে স্বল্প ধারণা ছিল, তা কাটিয়ে ওঠা যাবে।

পরিকল্পিতভাবে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের দিকে এগিয়ে চলেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সর্বজনীন নয় বরং কোনো একটি দেশের শিক্ষাক্রম অনুকরণ করে নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকার জাতিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ‘নতুন শিক্ষানীতি ও কারিকুলামের মাধ্যমে বিজ্ঞান শিক্ষাকে সংকোচন করা হয়েছে’ বলে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, ধর্ম শিক্ষার নৈতিক মূল্যবোধ সৃষ্টির প্রয়াসকে চূড়ান্তভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে। স্বাস্থ্য সুরক্ষা শিক্ষার নামে যৌন শিক্ষা চালু করে কিশোর মনকে বিকৃত করার চেষ্টা চালানো হয়েছে।

সচেতন অভিভাবক সমাজের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আবু মুসলিম বলেন, আগের শিক্ষাক্রমে যে যার মতো গ্রুপ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারত। নতুন শিক্ষাক্রমে সেই সুযোগ নেই। নবম শ্রেণিতে বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য শাখার বিভাজন নেই। সবার বই এক, ক্লাসরুম এক, মূল্যায়ন পদ্ধতিও এক। যদিও বলা হয়, নতুন শিক্ষাক্রমে বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য শাখার সবই রাখা হয়েছে, শিক্ষার্থীরা সব বিষয়েই জ্ঞান অর্জন করতে পারবে। তবে, বাস্তবে ভিন্ন। নতুন কারিকুলামের মাধ্যমে বিজ্ঞান শিক্ষাকে সংকোচন করা হয়েছে। নতুন কারিকুলামে আগের তুলনায় সর্বোচ্চ ২০-২৫ শতাংশ বিজ্ঞান শিক্ষা রাখা হয়েছে। মানবিক বিভাগেরও একই অবস্থা। তবে বাণিজ্য শাখার কোনো চিহ্নও রাখা হয়নি নতুন শিক্ষাক্রমে। ফলে শিক্ষার্থীরা আরো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তারা বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান অর্জন থেকে দূরে থাকবে। এতে শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে নানা সমস্যার সম্মুখীন হবে। তিনি আরো বলেন, নুতন শিক্ষাক্রমে সপ্তম শ্রেণিতে যে শরীফ-শরীফার বিষয়টি আনা হয়েছে। এতে নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের নৈতিক অবক্ষয় হবে। এছাড়া বিভিন্ন শ্রেণিতে যে যৌন শিক্ষা রাখা হয়েছে তাতেও শিক্ষার্থীদের নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। কাজেই প্রশ্নবিদ্ধ এসব শিক্ষাব্যবস্থা নতুন শিক্ষাক্রমে রাখা ঠিক হবে না। বিশেষ করে নবম শ্রেণির শিক্ষাব্যবস্থা নতুনভাবে সাজানো উচিত, তা নাহলে এই নুতন শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর সংশোধন প্রয়োজন।

এদিকে, নতুন পাঠ্যবই মানেই যেন ভুল আর বিতর্ক এ যেন চিরায়ত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবার মাধ্যমিক স্তরে নতুন কারিকুলামের সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান পাঠ্যবইয়ে হিজড়া জনগোষ্ঠীদের নিয়ে একটি অধ্যায় নিয়ে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এ নিয়ে সরকারের বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন ও বিতরণের একমাত্র প্রতিষ্ঠান জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) বলছে, সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে এই অধ্যায়টি গতবছরও ছিল, সেখানে যতটুকু সংশোধন করা দরকার তা এবার করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় আইনের মাধ্যমে হিজড়াদের স্বীকৃতি দেয়ায় তাদের সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করার প্রয়োজন রয়েছে। তাই পাঠ্যবইয়ে এটি আনা হয়েছে বলে দাবি প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের।

জানামতে, সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে ট্রান্সজেন্ডার গল্প ‘শরীফ থেকে শরীফা’ প্রসঙ্গে নেতিবাচক বক্তব্য প্রদান করায় এবং জনসম্মুখে বইয়ের পাতা ছিঁড়ে ফেলায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের খণ্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাবকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। গত ১৯ জানুয়ারি একটি সেমিনারে বক্তব্য দিতে গিয়ে ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ক গল্প পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিবাদ জানান শিক্ষক আসিফ মাহতাব। তিনি বলেন, সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে ট্রান্সজেন্ডারের গল্প ঢুকিয়ে শিক্ষার্থীদের মগজধোলাই করা হচ্ছে। এ সময় তিনি সবার সামনে ওই পাঠ্যবই থেকে ‘শরীফ থেকে শরীফা’ গল্পের পাতা ছিঁড়ে ফেলেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আসিফ মাহতাবের এমন কর্মকাণ্ডের কারণেই তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়। বিষয়টি নিয়ে সারা দেশে চলছে সমালোচনার ঝড়!

তবে ফেসবুকে সমালোচকরা বলছেন, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দেশের শিক্ষার্থীদের শেখানো হচ্ছে জেন্ডার মনে মনে ধরে নেয়ার বিষয়। দেখতে ছেলে হলেও সে যদি মনে করে সে মেয়ে, তাহলে সে মেয়ে; দেখতে মেয়ের মতো হলেও সে যদি মনে করে সে ছেলে, তাহলে সে ছেলে। কৌশলে শিশুদের মস্তিষ্ক ধোলাই করার চক্রান্ত বলে মনে করছেন তারা। এজন্য এটি সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন তারা।

জানতে চাইলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সদস্য (শিক্ষাক্রম) প্রফেসর মো. মশিউজ্জামান বলেন, রাষ্ট্রের আইনের মাধ্যমে হিজড়া জনগোষ্ঠীকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এজন্য তাদের সম্পর্কে সমাজে সচেতনতা তৈরি করার প্রয়োজন আছে, তাদের বোঝার জন্য। তাই সপ্তম শ্রেণির বইয়ে বিষয়টি গতবছরও ছিল, সেখানে যতটুকু সংশোধন করা দরকার তা এবার করা হয়েছে।