ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিশ্বস্তরা পাচ্ছে পছন্দের অনুবিভাগ

ভাঙছে মন্ত্রণালয়ের সাংগঠনিক কাঠামো

ভাঙছে মন্ত্রণালয়ের সাংগঠনিক কাঠামো

প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে অবস্থিত গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়টির অর্গানোগ্রাম বা সাংগঠনিক কাঠামোতে অতিরিক্ত সচিবের কোনো পদ নেই। অথচ বছরের পর বছর পদোন্নতি পেয়ে অতিরিক্ত সচিবের দায়িত্ব পালন করে আসছেন কর্মকর্তারা। বর্তমানে মন্ত্রণালয়টিতে কমপক্ষে চারজন অতিরিক্তি সচিব রয়েছেন। আবার এক অতিরিক্ত সচিব দুটি অনুবিভাগের দায়িত্বে আছেন। কমবেশি একই অবস্থা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের। এই মন্ত্রণালয়ে অর্গানোগ্রামে একজন অতিরিক্ত সচিবের কথা উল্লেথ থাকলেও বর্তমানে পাঁচজন অতিরিক্ত সচিব রয়েছেন। কর্মকর্তাদের পদোন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অর্গানোগ্রামেও একজন অতিরিক্ত সচিবের স্থলে নয়জন দায়িত্বে। মন্ত্রণালয়গুলোর অর্গানোগ্রাম সংশোধনের পরিবর্তন না করে, এভাবেই চলছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে সাংগঠনিক কাঠামোতে কোনো অতিরিক্ত সচিবের পদ নেই। এরপরও পদোন্নতি পেয়ে একই মন্ত্রণালয়ে কয়েকজন অতিরিক্ত সচিব দায়িত্ব পালন করছেন। সেখানে কোন অতিরিক্ত সচিব, কোন অনুবিভাগ বা অধিশাখার দায়িত্বে থাকবেন তা নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। কিছু অধিশাখা রয়েছে, যেখানে দায়িত্ব পেতে অতিরিক্ত সচিবদের আগ্রাহ রয়েছে। সেখানে মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিবদের নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্তরা দায়িত্ব পান।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক অতিরিক্ত সচিব জানান, প্রায় দেড় মাস ধরে মন্ত্রণালয়ে এসেছি। বদলি হওয়ার পরও দপ্তরে কাজ সেখানে বুঝে পাইনি, এতে নিজেও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন তিনি। সেজন্য প্রশাসনের শৃঙ্খলা রক্ষার তাগিদে মন্ত্রণালয়গুলোর অর্গানোগ্রাম নতুন করে তৈরি করা জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জানা গেছে, বাংলাদেশ সার্ভিস রুলসে বলা আছে, কোনো সরকারি কর্মচারী নতুন পদে বা বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগদানের প্রস্তুতির জন্য ছয় দিন সময় পাবেন। সার্ভিস রুলসে বলা হয়েছে, কোনো সরকারি কর্মচারী যোগদানের সময়ের মধ্যে কাজে যোগদান না করলে বিলম্বিত সময়ের জন্য কোনো বেতন-ভাতা প্রাপ্য হবেন না। ইচ্ছাকৃত অনুপস্থিতিকে এফ আর ১৫/বিএস আর ২৪ মোতাবেক অসদাচরণ হিসেবে গণ্য করা হবে। বিলম্বিত সময়কে কর্মরত বলে গণ্য করা যাবে না বিধায় বার্ষিক বেতন বৃদ্ধির তারিখ পিছিয়ে যাবে বা ওই সময়ের জন্য বেতন বৃদ্ধি স্থগিত থাকবে এবং ওই বিলম্বিত সময় পেনশনের ক্ষেত্রে গণনা করা যাবে না।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, আমরা কিন্তু অর্গানোগ্রামগুলো পরিবর্তন করছি। এগুলো পরিবর্তন করতে হলে নিজ নিজ মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব আসতে হয়। আমরা চাইবো- নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ে প্রয়োজন অনুযায়ী প্রস্তাব আসুক। প্রায়ই প্রশ্ন করা হয়- পদের সংখ্যা হয়তো অল্প কিন্তু পদোন্নতি দিচ্ছি বেশি। তখন আমাদের বোঝাতে হয়- সংগঠন (মন্ত্রণালয়) অনেক বড় হয়ে গেছে। সেখানে কর্মকর্তাদের পদায়ন করতে হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের অধিকাংশ মন্ত্রণালয় ৪-৫ জন করে অতিরিক্ত সচিব আছেন। কিন্তু সেখানে হয়তো পদ আছে দুটি। তাই সেখানে আমাদের বেশি করে পদায়ন করতে হচ্ছে। আমরা এবার প্রথম দিকেই মন্ত্রণালয়গুলোকে আহ্বান করবো বাস্তবতার নিরিখে তারা যাতে আমাদের কাছে তাদের অর্গানোগ্রামে কী পরিবর্তন দরকার যুগোপযোগী করে সেটি যাতে বাস্তবভিত্তিক হয়, সেভাবে আমাদের কাছে প্রস্তাব পাঠালে দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা অর্গানোগ্রামটাকে আপডেট করব। সেটি করতে পারলে আমরা তখন প্রোপার অ্যাসেসমেন্টটা করতে পারব, কোন জায়গাতে কত লোক লাগবে এটা আমরা প্রথমে শুরু করব।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান আলোকিত বাংলাদেশকে বলেছেন, মন্ত্রণালয়ের অর্গানোগ্রাম পরিবর্তনের জন্য কাজ চলছে। আশা করছি- খুব শিগগিরই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের নতুন অর্গানোগ্রাম জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন পাবে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, দেশকে এগিয়ে নিতে মন্ত্রণালয়গুলোকে গঠনমূলক অনেক কাজ করতে হচ্ছে। এডিপি শতভাগ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী সকলকে নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছেন। এখানে সব মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি অধিদপ্তরগুলোর ওপর নির্ভর করতে হয়। যাবতীয় নক্সা তারা অনুমোদন করে থাকে। প্রকল্পের অগ্রগতি নির্ধারণ করা হয়। প্রকল্পে কতটা কাজ হলো, তা কতটা জনকল্যাণ বা সরকারের উদ্দেশ্য পূরণ হলো সেটিও বিবেচনায় রাখতে হয়। মন্ত্রণালয়ের কাজের পরিধি বেড়েছে, সেই অনুযায়ী সাংগঠনিক কাঠামো বাড়ানো হয়নি।

পদ না থাকলেও সুপার নিউমারারি পদ সৃষ্টি করে প্রতিবছর প্রশাসন ক্যাডারের অনেক বেশিসংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে। জনপ্রশাসনের জনবল কাঠামো হালনাগাদ করে স্থায়ী পদের সংখ্যা দ্বিগুণ করতে যাচ্ছে সরকার। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। তবে পদোন্নতি পেলেও পদ না থাকায় বেশিরভাগ কর্মকর্তাকে আগের দপ্তরে নিচের পদে কাজ করতে হচ্ছে। ছোটদের পদে কাজ করতে অনেকের মধ্যে রয়েছে অস্বস্তি।

পদের অতিরিক্ত পদোন্নতি দেয়ায় বেতন-ভাতা ও পেনশন বাবদ সরকারকে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করতে হচ্ছে। তা ছাড়া পদোন্নতির পর কর্মকর্তাদের নিচের পদে কাজ করতে হয় বলে জনপ্রশাসনের চেইন অব কমান্ড ভাঙছে। পদের চেয়ে বেশি সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়ায় তাদের বেতন স্কেল বেড়ে যাচ্ছে। ফলে তাদের বেতন-ভাতা, পেনশন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বাবদ সরকারকে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করতে হচ্ছে। সেজন্য মন্ত্রণালয়গুলোর সাংগঠনিক কাঠামো পরিবর্তন করে কাজের ধরন অনুযায়ী পদ সৃষ্টি হবে।

রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী, সিনিয়র সহকারী সচিব বা সহকারী সচিবদের ডেস্কের কাজগুলো করার কথা। কিন্তু তাদের বেশির ভাগ পদে বসে আছেন উপসচিবরা। উপসচিবদের সিনিয়র সহকারী সচিবের সঙ্গে কাজ করার কথা থাকলেও এখন তাদের ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাজ করতে হচ্ছে। সরকারের কাজের পরিধি বেড়ে যাওয়ায় মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোতে নতুন নতুন বিভাগ ও অনুবিভাগ সৃষ্টি করা হয়েছে। তবে সময়ে সময়ে সাংগঠনিক কাঠামো হালনাগাদ করা হয়নি। সাংগঠনিক কাঠামো হালনাগাদ করে পদের সংখ্যা বাড়াতে হবে। এ বিষয়ে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, পদের বিপরীতে অতিরিক্ত পদোন্নতি দিলে প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা হতে বাধ্য।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত