ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সিন্ডিকেটে ডুবছে তাঁত শিল্প

ছয় মাসেও আসেনি তদন্ত রিপোর্ট
সিন্ডিকেটে ডুবছে তাঁত শিল্প

অনিয়ম আর সিন্ডিকেটের কারণে দিন দিন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে দেশের তাঁত শিল্প। তাঁতিদের কল্যাণে কাজ করা তাঁত বোর্ড দীর্ঘদিন ধরে সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে। সিন্ডিকেটের কারণে ন্যায্যমূল্যে সুতা ও রং পাচ্ছে না তাঁতিরা। ফলে ডুবতে বসেছে দেশের ঐতিহ্যবাসী এ শিল্প। সুতা, রং ও রাসায়নিক দ্রব্য আমদানি ও বিতরণের পুরো পক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে এ সিন্ডিকেট। এর পেছনে রয়েছে জাতীয় তাঁতি সমিতি।

জানা গেছে, কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তার যোগসাজশে নির্বাচন ছাড়াই জাতীয় তাঁতি সমিতি নিয়ন্ত্রণ করছে একটি চক্র। গত ১০ বছর ধরে একই পদে থাকা তাঁত বোর্ডের জিএম কামনাশীষ দাশের নেতৃত্বে এ সিন্ডিকেট পরিচালিত হচ্ছে। কামনাশীষ দাশ জেনারেল ম্যানেজারের পদে ১০ বছর ধরে অবস্থান করার পাশাপাশি তাঁত বোর্ডের অধীন অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। আর জাতীয় তাঁত বোর্ডের সভাপতি মনোয়ার হোসেন নির্বাচন ছাড়া অ্যাডহক ভিত্তিতে পরপর দুইবার সমিতির সভাপতির পদ দখল করে আছেন। গত বছরের ২০ ডিসেম্বর সভাপতির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু তৃতীয়বারের মতো আবারো মেয়াদ বৃদ্ধি করে নেওয়ার পাঁয়তারা চালাচ্ছেন তিনি। যা সম্পূর্ণ অবৈধ এবং নিয়মবহির্ভূত। বারবার নির্বাচন ছাড়া সভাপতির পদ আঁকড়ে ধরে মনোয়ার হোসেন বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছেন। এছাড়া সুতা, রং ও রাসায়নিক দ্রব্য আমদানির সিন্ডিকেটের মূলহোতা মনোয়ার হোসেন বলে অভিযোগ রয়েছে তাঁতিদের। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মনোয়ার হোসেন আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, তাঁত বোর্ড আইন ও নিয়ম অনুযায়ী আমাকে এ পদে বসিয়েছে। তারা বে-আইনি কোনো কিছু করেনি। তাঁত বোর্ডে চেয়ারম্যনের সর্বময় ক্ষমতা রয়েছে, তিনি তার ক্ষমতা অনুযায়ী এডহক কমিটি করেছে। এখানে বে-আইনি কিছু হয়নি। সুতা, রং ও রাসায়নিক দ্রব্য আমদানির সিন্ডিকেটের বিষয়ে তিনি বলেন, এগুলো মিথ্যা কথা। তাঁতিরা বিপদে পড়ে আমার কাছে আসলে আমি তাদের সহযোগিতা করি।

বাংলাদেশ তাঁতি সমিতির বিভিন্ন নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাঁত বোর্ডের সিন্ডিকেটের দুর্নীতির বিষয় নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশ হলেও তাদের টনক নড়েনি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ সরাসরি লঙ্ঘন করে তাঁত বোর্ডের এই সুবিধাভোগীরা গত চার বছরে শত শত কোটি টাকা লুটপাট করেছে। লুটপাটের রহস্য উন্মোচন করতে বিভিন্ন তাঁতি সমিতির নেতারা বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় অভিযোগ করেন। তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে মন্ত্রণায়ল থেকে ৩ সদস্যর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তবে এর ৬ মাস অতিবাহিত হলেও এখনো রিপোর্ট দিতে পারেনি তদন্ত কমিটি।

গত ৬ মাসেও তদন্তের কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় দেশের তাঁতি সমাজের মধ্য চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের নতুন মন্ত্রী দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ১৬ জানুয়ারি মন্ত্রী বরাবর একটি অভিযোগ করেন নরসিংদী জেলার শিবপুর পুটিয়া ইউনিয়ন ৩নং ওয়ার্ড প্রাথমিক তাঁতি সমিতির সম্পাদক মো. ফজলুল হক। অভিযোগপত্রে তিনি বলেন, চার বছর পূর্বে নির্বাচিত কমিটি জাতীয় তাঁতি সমিতির সভাপতির মেয়াদ শেষে মোহাম্মদ মনোয়ার হোসেন নির্বাচন ব্যতীত সিন্ডিকেটের সহযোগিতায় এডহক কমিটি প্রথমবার সভাপতি নিয়োগ নেয়। কিন্তু কোনো নির্বাচনের প্রয়োজন মনে করেনি। দ্বিতীয়বার দুই বছর পর এই অনির্বাচিত কমিটিসহ পূর্বের ন্যায় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অবৈধভাবে পুনরায় মেয়াদ বৃদ্ধি করে। এই দুই বছরেও কোনো নির্বাচন করেনি।

তদন্তের বিলম্ব নিয়ে চাপা ক্ষোভ দেখা দিয়েছে তাঁতিদের মধ্যে। লুটপাটকারীদের রক্ষা করা, নাকি প্রকৃত তদন্ত প্রতিবেদন ধামাচাপা দেওয়া। তদন্ত কমিটির এমন মতলব নিয়ে তাঁতিরা নানা প্রশ্ন তুলছেন।

তাঁতিদের কাছ থেকে আরো জানা গেছে, দশ বছর ধরে একই পদে থাকা তাঁত বোর্ডের জিএম কামনাশীষ দাসের নেতৃত্বে এই সিন্ডিকেট পরিচালিত হচ্ছে। কামনাশীষ দাশ জেনারেল ম্যানেজারের পদে দশ বছর ধরে অবস্থান করার পাশাপাশি বোর্ডের অধীন অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির প্রধান উপসচিব আলমগীর হোসেন (অডিট) বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এ প্রতিবেদকের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, তাঁত বোর্ডের বিষয়টি জটিল টেকনিক্যাল বিষয়। এর সাথে অনেক কিছুই জড়িত। বিষয়টি আমাদের ভেবে দেখতে হচ্ছে। এর সাথে ব্যবসা, অর্থনীতি ও আইনসহ অনেক কিছু জড়িত। প্রকৃত ঘাপলা কোথায় এটা বুঝতে সময় লাগছে। তদন্তের প্রতিবেদন কত দিনে জমা দেওয়া যাবে তা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না।

বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের সিন্ডিকেট, দুর্নীতি এবং একই পদে জিএমের দশ বছর অবস্থান করার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড এর সদস্য দেবাশীষ নাগ এ প্রতিবেদককে বলেন, টেলিফোনে এসব প্রশ্নের উত্তর দেয়া যাবে না। অফিসিয়াল বিষয়ে জানতে হলে অফিসে আসতে হবে এবং সামনাসামনি আলোচনার মাধ্যমে বিষয়গুলো জানানো যাবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত