ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অমর একুশে বইমেলা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

ভাষা-সাহিত্যকে স্মার্ট ধারায় নিতে হবে

বাবার পথ অনুসরণ করেই জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দিই
ভাষা-সাহিত্যকে স্মার্ট ধারায় নিতে হবে

প্রকাশকদের ডিজিটালি বই প্রকাশের পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের পর এবার সরকারের লক্ষ্য স্মার্ট বাংলাদেশ। তাই ভাষা সাহিত্যসহ সবকিছুকে স্মার্ট করতে হবে। দেশ সর্বক্ষেত্রে স্মার্ট হবে। সমাজের সঙ্গে তাল মেলাতে গেলে ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি আমাদের ডিজিটালি নিয়ে যেতে হবে।’

গতকাল বিকালে বাংলা একাডেমির প্রাঙ্গণে অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলা সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিতে প্রকাশকদের এখন থেকে ডিজিটালি বই প্রকাশ করার আহ্বান জানাচ্ছি। আমাদের বাংলা ভাষা মধুর। এখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগ। এরপরও বই প্রকাশ হবে। তা কখনো যাবে না। বই পড়ার আনন্দ আছে। তবে এখনকার শিক্ষার্থীরা ট্যাবে ও ল্যাপটপে বই পড়ে। আমরা সেভাবে আনন্দ পাই না। ভাষার সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিতে হলে আমাদের যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা উচিত। তাই প্রকাশকদের বলব, এখন থেকে বই ডিজিটালি প্রকাশ করতে হবে। এতে শুধু দেশ নয়, বিদেশেও আমাদের ভাষার বই পৌঁছাতে পারব। অন্য ভাষাভাষীর লোকজনও আমাদের বই পড়ে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলা একাডেমি আমাদের অনেক আন্দোলন-সংগ্রামের সূতিকাগার। বইমেলা আমাদের প্রাণের মেলা। ফেব্রুয়ারি মাস আমাদের ভাষা আন্দোলনের মাস। এ আন্দোলনের মধ্যদিয়ে বাঙালির সত্তা জাগ্রত হয়। এই পথ বেয়েই আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা। আমারা বাঙালি, বাংলা ভাষায় কথা বলি, মায়ের ভাষায় কথা বলি। এই অধিকারটাও আমাদের রক্ত দিয়ে অর্জন করতে হয়েছে। আমরা বাঙালি, বাংলা ভাষায় কথা বলি, মায়ের ভাষায় কথা বলি। বইমেলার জায়গাটা ছোট হয়ে গেছে, কীভাবে বড় জায়গায় নেওয়া যায় সেটাও ভাবতে।’

উপজেলা পর্যায়ে বইমেলা করা হবে। যাতে আমাদের শিশুরা এই বইমেলা সম্পর্কে জানতে পারে এবং জ্ঞান আহরণ করতে পারে।

তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন বাংলা একাডেমির লাইব্রেরিটা খুব পছন্দ ছিল আমার। বান্ধবী বেবি মওদুদকে সঙ্গে নিয়ে টিএসসিতে প্লেটে ভাত ভাগাভাগি করে খেতাম। পরে লাইব্রেরিতে বসে বই পড়তাম। বইমেলার ব্যাপ্তি আরো বাড়ানো দরকার। তবে বাংলা একাডেমির একটা আলাদা গুরুত্ব রয়েছে স্থান হিসেবে।’

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘রক্তের বিনিময়ে যে ভাষার অধিকার আদায় করেছি, তা এখন আন্তর্জাতিকভাবে পালিত হচ্ছে। ৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর যখন প্যারিসে বংলা ভাষার স্বীকৃতি পেলাম তখন সেখানে মাতৃভাষার ইনস্টিটিউট করে দিতে চাইলাম। কাজও শুরু করি। কিন্তু ২০০১ সালে সরকারে এসে খালেদা জিয়া সেই কাজ বন্ধ করে দেয়। আমি ধন্যবাদ জানাই তাকে (খালেদা জিয়া), বন্ধ করে দিয়েছিলেন, ভালো হয়েছিল। কারণ, দ্বিতীয়বার যখন আমি সরকারে আসি, সেটা প্রতিষ্ঠা করি। এখন সেখানে সারা বিশ্বের বিভিন্ন ভাষা নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। এটা যেন আরো সমৃদ্ধ হয়, সেটা আমি চাই।’

বিদেশি ভাষা অনুবাদের বিপক্ষে অনেকে দাবি তুলেছেন উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, ‘আমি অনুবাদের পক্ষে। অনুবাদ না হলে পৃথিবীর এত ভাষা আমরা কীভাবে জানব? কোনো দেশকে জানতে হলে, তাদের সংস্কৃতিকে জানতে হলে ভাষা অনুবাদের মাধ্যমে সহজে জানা যায়।’

বাবার পথ অনুসরণ করেই জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দিই উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠকন্যা বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দিয়েছিলেন। বাবার সেই পথ অনুসরণ করে জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দিই। স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে জাতিসংঘ স্বীকৃতি দেয়ার পর ১৯৭৪ সালে ভাষণ দিতে যান বঙ্গবন্ধু। সেখানে কিন্তু তিনি বাংলায় ভাষণ দিয়েছিলেন। অর্থাৎ তিনি বাংলাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে গেছেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবিতার মধ্যে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির ভাষাকে নিয়ে এসিছেলেন, তেমনি বঙ্গবন্ধু তার বক্তব্যের মধ্যদিয়ে রাজনৈতিক, সামাজিক, আর্থিক ও মুক্তি সংগ্রামের কথা বাংলা ভাষায় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। বাবার পথ অনুসরণ করেই আমি জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দিই।’

এ সময় নিরাপত্তার বেড়াজালে স্বাধীনতা হারিয়ে গেছে বলে আফসোস করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বইমেলায় আসায় কোনো মজা নেই। কারণ, স্বাধীনতা নাই। ডানে তাকাব নিরাপত্তা, বায়েও নিরাপত্তা, পেছনে গেলে নিরাপত্তা, সামনে নিরাপত্তা; এই নিরাপত্তার বেড়াজালে স্বাধীনতাটাই হারিয়ে গেছে। এখানে আসলে মনে পড়ে স্কুল জীবনের কথা, ছোটবেলার কথা। এই প্রাঙ্গণের সঙ্গে সবকিছুই ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এখন সেই স্বাধীনতাটা নাই। জানি না কবে আবার স্বাধীনতা পাব।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতার পদ অনুসরণ করে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। স্বাধীনতার পর যখন জাতিসংঘ আমাদের স্বীকৃতি দিল, তিনি কিন্তু তখন সেখানে গিয়ে বাংলা ভাষায় ভাষণ দিয়েছিলেন। বাংলা ভাষায় ভাষণ অর্থাৎ বাংলাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া। আমি আমার বাবার পথ অনুসরণ করে এই পর্যন্ত যতবার ভাষণ দিয়েছি, বাংলায় ভাষণ দিয়েছি।’

বাংলা একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি মো. আরিফ হোসেন ছোটন।

এর আগে সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় অবদান রাখায় ১১টি শাখায় বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২৩ প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবার মোট ১৬ জন পেয়েছেন এই পুরস্কার।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত