উপজেলা পরিষদ নির্বাচন

নৌকা দেবে না আ.লীগ

প্রকাশ : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  রাহাত হুসাইন

মিটেছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আসছে উপজেলার ভোট। চার ধাপে উপজেলার ভোট সম্পন্ন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রথম ধাপে উপজেলার ভোট হতে পারে ঈদুল ফিতরের পর। এবারের উপজেলা ভোটে কাউকে নৌকার মনোনয়ন দেবে না আওয়ামী লীগ। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের মতোই উপজেলার ভোটে প্রার্থিতা উন্মুক্ত রাখবে দলটি।

জানা গেছে, ভোটে জনগণের অংশগ্রহণ বাড়াতে এবং প্রতিযোগিতাপূর্ণ নির্বাচনের জন্যই এমন কৌশল গ্রহণ করছে দলটি। সংসদ নির্বাচনের মতো উপজেলা পরিষদের ভোটেও বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের নেতারা। এছাড়া আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থিতা উন্মুক্ত রাখার বিষয়ে দলটির শীর্ষ সারির নেতারাও এরই মধ্যে একমত হয়েছেন। ২০১৫ সালের স্থানীয় সরকারের আইন সংশোধন করার পর এবারই প্রথম দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। এবার উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী না দিয়ে সবার জন্য প্রার্থিতা উন্মুক্ত রাখতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ।

এ বিষয়ে গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক থাকছে না। এবার উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থিতা উন্মুক্ত থাকবে। জাতীয় নির্বাচনে নেতাকর্মীদের যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে এটা সমাধানের জন্য উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থিতা উন্মুক্ত থাকবে।’

আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেই দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে পরামর্শ দিয়েছেন যেন উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না দেওয়া হয়। ওই নেতাদের মতে, একজনকে প্রতীক দিলে অন্য নেতারা নিজেদের বঞ্চিত ভাবেন। যাদের জনপ্রিয়তা আছে তারাই ভোটে পাস করে আসবে। তাই কাউকে মনোনীত করা হবে না। এতে জাতীয় নির্বাচনের পর এবার উপজেলা নির্বাচনও উৎসবমুখর ও প্রতিযোগিতামূলক হবে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য সাহাবুদ্দিন ফরাজি বলেন, ২০১৫ সালে স্থানীয় সরকার আইন সংশোধন করার পর এবারই প্রথম উপজেলা নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি করবে না আওয়ামী লীগ।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, এবার যেহেতু উপজেলা নির্বাচনে দল থেকে কাউকে মনোনীত করা হবে না, তাই দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি করবে না আওয়ামী লীগ। ২০১৫ সালের পর এবারই প্রথম দলীয় মনোনয়ন বিক্রি না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দলীয় প্রতীক ছাড়া উপজেলা নির্বাচন করাটা আওয়ামী লীগের একটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত বলেও জানান দলটির উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান। স্থানীয় সরকার (উপজেলা) (সংশোধন) বিল-২০১৫ এ বলা হয়েছে, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও দুটি ভাইস চেয়ারম্যান (সাধারণ ও সংরক্ষিত) পদের নির্বাচনের জন্য প্রার্থীকে রাজনৈতিক দল কর্তৃক মনোনীত অথবা স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে হবে। আইনটি পাস হওয়ার পর ২০১৭ সালের মার্চে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে ভোট হয় উপজেলায়। তারপর থেকে সকল স্থানীয় সরকারের নির্বাচন দলীয় প্রতীকেই হচ্ছে। তবে ২০১৯ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদ সবার জন্য উন্মুক্ত রাখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সেই সময়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে কোনো দলীয় প্রার্থী রাখা হয়নি। তবে চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীকেই নির্বাচন করেছিল।

বিএনপিসহ সরকারবিরোধী দলগুলোর বর্জনের মধ্য দিয়ে গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীর পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দেয়। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে দলের ৫৯ জন নেতা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ থেকেই উপজেলা নির্বাচন সবার জন্য উন্মুক্ত রাখার চিন্তা আসে বলে আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, বিএনপি পরে ভোটে এলে তখন পরিস্থিতি বুঝে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে প্রতীক দেওয়া না দেওয়া নিয়ে আলোচনা হতে পারে।