দেশি-বিদেশি লাখো মুসল্লির পদচারণায় মুখর তুরাগতীর

স্মরণকালের বড় জুমার নামাজের জামাত

প্রকাশ : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকার অদূরে তুরাগ নদের তীরে গতকাল থেকে শুরু হয়েছে মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় সমাবেশ তাবলিগ জামাতের তিন দিনব্যাপী বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। ইজতেমা ময়দানের কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে মুসল্লিদের আগমনে। গতকাল বাদ ফজর আমবয়ানের মধ্য দিয়ে ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের প্রথম দিন শুক্রবার হওয়ায় গতকাল স্মরণকালে সবচেয়ে বড় জুমার নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হয় ইজতেমা ময়দানে। দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে জুমার জামাত শুরু হয়। ওই নামাজের ইমামতি করেন বাংলাদেশের মাওলানা হাফেজ মোহাম্মদ জোবায়ের। ইজতেমায় যোগদানকারী মুসল্লি ছাড়াও জুমার নামাজে অংশ নিতে রাজধানী ছাড়াও ঢাকা-গাজীপুরসহ আশপাশের এলাকার লাখ লাখ মুসল্লি ইজতেমাস্থলে হাজির হন। ভোর থেকেই রাজধানীসহ আশপাশের এলাকা থেকে ইজতেমা মাঠের দিকে মানুষের ঢল নামে। দুপুর ১২টার দিকে ইজতেমা মাঠ উপচে আশপাশের খোলা জায়গা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। এছাড়া টঙ্গীর বিভিন্ন উঁচু ভবনের ছাদে থেকেও মুসল্লিরা জুমার নামাজে শরিক হন। মাঠে স্থান না পেয়ে মুসল্লিরা মহাসড়ক ও অলি-গলিসহ যে যেখানে পেরেছেন পাটি, চটের বস্তা, খবরের কাগজ বিছিয়ে জুমার নামাজে শরিক হন। ফলে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দূর-দূরন্ত থেকে আসা মুসল্লিরা জানান, বড় জামাতে নামাজ আদায় করার অনেক ফজিলত। তাই জুমার নামাজ আদায়ের জন্য ভোরে বাড়ি থেকে বের হয়েছি। রাস্তায় যানবাহনে প্রচুর ভিড় থাকায় ইজতেমা ময়দান পর্যন্ত পৌঁছাতে অনেক কষ্ট হয়েছে। এর আগে শুক্রবার ফজরের পর মাঠে আম-বয়ান করেন পাকিস্তানের মাওলানা আহমদ বাটলা। সকাল ১০টায় তালিম করেন পাকিস্তানের মাওলানা জিয়াউল হক। জুমার খুতবা পড়েন বাংলাদেশের মাওলানা জোবায়ের। তিনিই জুমার নামাজের ইমামতি করেন। তবে আগের দিন বৃহস্পতিবার বাদ ফজর থেকে শুরু হয় আঞ্চলিক বয়ান। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানে অবস্থান নিয়ে তাবলিগ জামাতের মুরব্বীদের বয়ান শুনতে থাকেন। মুসল্লিদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে তুরাগতীর। মুসল্লিদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রস্তুত রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। প্রথম পর্বের ইজতেমায় মাওলানা জোবায়ের অনুসারীরা অংশ নিয়েছেন। দ্বিতীয় পর্বে অংশ নেবেন মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীরা। ইজতেমাকে কেন্দ্র করে লাখো মুসল্লির উপস্থিতিতে ১৬০ একর জমির ওপর সুবিশাল প্যান্ডেল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে। নির্ধারিত খিত্তায় অবস্থান নিয়ে তাসবিহ-তাহলিল, জিকির-আসকার ও বিভিন্ন নফল ইবাদতে মশগুল রয়েছেন মুসল্লিরা। তবে বৃহস্পতিবার দিবাগত গভীর রাতে এক পশলা বৃষ্টিতে মুসল্লিদের ভোগান্তি বাড়ে।

ইজতেমায় যোগ দিতে ভারতের ত্রিপুরাসহ উত্তর-পূর্ব ভারতের সাতটি রাজ্য থেকে মুসল্লিরা এসেছেন বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এক হাজারের মতো ভারতীয় মুসল্লি এসেছেন বলে ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা গেছে। বিশ্ব ইজতেমায় সাত দেশের মুসল্লিরা একই খিমায় (তাঁবু) অবস্থান করছেন। অন্য দেশগুলো হলো আফগানিস্তান, ভুটান, নেপাল, মালদ্বীপ ও ইরান।

বৃহস্পতিবার ইজতেমা ময়দানের পাশে স্থাপিত বিভিন্ন ফ্রি চিকিৎসা ক্যাম্প উদ্বোধন করেন ধর্মমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে বিশ্ব ইজতেমার দুটি পর্ব সমাপ্ত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। এ সময় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ড. মো. বসিরুল আলম, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম, বিশ্ব ইজতেমার প্রধান সমন্বয়কারী প্রকৌশলী মাহফুজ হান্নান, সমন্বয়কারী আবুল হাসনাত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। র‌্যাবের মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন বলেছেন, ইজতেমাকে ঘিরে কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই। র‌্যাবের পাঁচটি ব্যাটালিয়নের সমন্বয়ে আকাশপথে হেলিকপ্টার টহল, ডগ স্কোয়াড টিম, ফুট প্যাট্রলিং, মোবাইল টিম, টহল টিম, নৌ টহল, সাইবার মনিটরিংসহ সাত স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকছে এবার বিশ্ব ইজতেমায়। ইজতেমায় আসা মুসল্লিদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে টঙ্গী আহসানউল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে কর্মরত সব চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সব ধরনের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জাহাঙ্গীর আলম। বৃহস্পতিবার রাতে ইজতেমায় দুই মুসল্লি অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন। তারা হলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের চৌহদ্দীটোলা গ্রামের জামান মিয়া (৪০) ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল থানার ধামাউরা গ্রামের ইউনুছ মিয়া (৬০)। তাদের টঙ্গী শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ডা. ফারহানা তাসনিম নিতু বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই তারা মারা যান।