ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

হানিফ ফ্লাইওভারে লেগেই থাকছে যানজট

যাত্রাবাড়ী সড়কের বেহালদশায় বাড়ছে জনদুর্ভোগ

যাত্রাবাড়ী সড়কের বেহালদশায় বাড়ছে জনদুর্ভোগ

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের একপাশের সড়ক সংস্কার হলেও অন্যপাশে খানাখন্দে বেহাল দশা। এতে যানজট লেগেই আছে। ভাঙা সড়কে চলাচল করতে গিয় বছরের পর বছর ভোগান্তিতে পড়ছেন যাত্রীরা। গুরুত্বপূর্ণ সড়কটিতে খানাখন্দে ভরা থাকায় আসন্ন রমজানে চরম ভোগান্তি পোহাতে হবে যাত্রীদের।

সরেজমিন দেখা গেছে, হানিফ ফ্লাইওভারের নিচের সড়ক কয়েক বছর ধরে বেহাল দশা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন থেকে হানিফ ফ্লাইওভারের নিচের সড়কের একপাশ মেরামত করলেও অন্যপাশের কাজ করেনি। এ কারণে ক্ষোভেরও যেন শেষ নেই মানুষের। যানবাহন একটা সারিতে অত্যন্ত ধীরগতিতে চলাচল করে। পথিমধ্যে কখনও একটা গাড়ি বিকল হলে পেছনে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়।

যাত্রীবাড়ী এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, কিছুদিন আগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন যাত্রাবাড়ী সড়কের একাংশের কাজ করেছে। আরেক অংশের কাজ হয়নি। যাত্রাবাড়ী সড়কে দীর্ঘ যানজট লাগছে। অথচ এই সড়ক দিয়ে ঢাকা থেকে দৈনিক হাজার হাজার গাড়ি চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছে। চালকদের অভিযোগ, যাত্রাবাড়ী সড়কে যেসব গাড়ি চলাচল করে সেসব গাড়ির আয়ু কমছে। এ অবস্থার কারণে ফ্লাইওয়ারে চাপ বাড়ছে। নিচের সড়ক এড়িয়ে চলছে অনেকেই। ফ্লাইওভারের ওপর দুর্ঘটনাও বাড়ছে।

ভোগান্তির কথা জানিয়ে কাজল সরকার নামে এক মৎস্য ব্যবসায়ী বলেন, অবহেলিত এ সড়কের মতো ঢাকা শহরে আর কোনো সড়ক নেই। এটি ঢাকার বুকে গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর একটি। কয়েক বছর ধরে সড়কটির এ অবস্থা। বর্তমানে এ সড়কে ব্যবসায়পণ্য আনা-নেওয়া করতে ব্যাপক সমস্যা হয়। ভাঙনের গর্তে পড়ে মাঝেমধ্যে যানবাহন উল্টে যায়।

সরেজমিন দেখা যায়, হানিফ ফ্ল্যাইওভারের নিচে যাত্রাবাড়ী মাছ ও কাঁচাবাজারের সামনের সড়কে খানাখন্দ রয়েছে। বৃষ্টি এলেই পানি জমে যায়। সড়কটি ভাঙা থাকায় যাত্রীবাহী যানবাহন দোলনার মতো দুলতে থাকে। ভাঙা সড়কে হেঁটে আসা-যাওয়া করাও কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এ পথে রিকশাচালকরা যেতে চান না। ভাড়া বেশি দাবি করেন।

অটোরিকশাচালক সাজেদুল হক বলেন, যাত্রাবাড়ী থেকে কাজলা পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার পুরো সড়ক ছোট ও বড় গর্ত। বিভিন্ন স্থানে পিচের আস্তরণ উঠে মাটি বের হয়ে গেছে। সামান্য বৃষ্টি হলে গর্তগুলোতে পানি জমে কাদার সৃষ্টি হয়। গর্তে গাড়ি আটকে থাকে। তখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। প্রতিদিন অসহনীয় ভোগান্তি নিয়েই আমাদের এ সড়ক দিয়ে চলাচল করতে হয়। অনাবিল বাসচালক শহীদুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে এই সড়ক দিয়ে চলাচল করা খুবই কষ্টকর। বৃষ্টি আসলে গাড়ি বড় বড় গর্তের মধ্যে পড়ে যায়। আবার বৃষ্টি না আসলে কাদা শুকিয়ে ধুলার সৃষ্টি হয়। ধুলার কারণে সড়ক দিয়ে চলাচল করতে কষ্ট হয়। ফ্লাইওভারের দুই পাশের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, রাতের বেলায় নিচের অংশ বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। অনেক গণপরিবহনের রাতের ঠিকানা এখানে।

যাত্রাবাড়ী হানিফ ফ্লাইওভারের নিচের সড়কের অবস্থা বেহাল। সময়মতো সংস্কার না হওয়া এবং যান চলাচলে চরম বিশৃঙ্খলার কারণে প্রতিনিয়ত যানজট লাগছে। গুলিস্তান থেকে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা, কাজলা পর্যন্ত সড়কটি দিয়ে যাতায়াত না করলে এর দুর্দশা বোঝার উপায় নেই। প্রায় এক কিলোমিটার সড়কে পদে পদে বিড়ম্বনা ও ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের।

ফ্লাইওভারের নিচে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় ট্রাফিক পুলিশের অন্তত চারজন কর্মকর্তা এখানে দায়িত্ব পালন করলেও পরিস্থিতির উন্নতি নেই। গুলিস্তান থেকে কোনো গাড়ি যানজটবিহীন যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা অতিক্রম করতে পারে না।

প্রসঙ্গত, মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছিল যাত্রাবাড়ী ও সায়েদাবাদ এলাকায় যানজট নিরসনের জন্য। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে (পিপিপি) নির্মিত ১১ দশমিক ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ দেশের সর্ববৃহৎ এ ফ্লাইওভার ২০১৩ সালের ১১ অক্টোবর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চার লেনবিশিষ্ট এ ফ্লাইওভারে প্রবেশের জন্য ৬টি এবং বের হওয়ার জন্য ৭টি পথ রয়েছে, যা আশপাশের প্রধান প্রধান সড়ক ও বাস টার্মিনালের সঙ্গে সংযুক্ত। এছাড়া চালু হওয়ার পর থেকে ২৪ বছরে প্রাপ্ত টোলে নির্মাণব্যয় তুলে নেয়ার চুক্তিতে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ফ্লাইওভারের ব্যবস্থাপনা, টোল আদায় ও রক্ষণাবেক্ষণ করার কথা। অবশ্য প্রতিদিন আদায় হওয়া টোলের ৫ শতাংশ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের তহবিলে জমা হচ্ছে। কিন্তু হানিফ ফ্লাইওভারের নিচের সড়কের বেহাল দশা দূর হচ্ছে না। ফলে ফ্লাইওভারে গাড়ির চাপ বেড়েছে, এতে প্রতিদিন গুলিস্তান টোলপ্লাজা থেকে ফ্লাইওভারের ওপর এক কিলোমিটার যানজট লেগেই থাকছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত