ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শতবর্ষের টার্গেটে এগিয়ে যাচ্ছে ঢাকা ওয়াসা

একটানা সপ্তমবারের মতো ঢাকা ওয়াসার এমডি পদে নিয়োগ পেয়েছেন প্রকৌশলী তাকসিম এ খান। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সর্বশেষ ২০০৯ সালের ১৫ অক্টোবর ঢাকা ওয়াসার এমডি পদে নিয়োগ পান। এরপর থেকে ওয়াসার এমডি হিসেবে তার যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতা দেখিয়েছেন। যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতার কারণে বারবার তাকে ঢাকা ওয়াসার দায়িত্ব দেওয়া হয়। সংস্থাটির এমডি হিসেবে তার কর্মপরিকল্পনা ও অনুভূতি জানতে চেয়েছে আলোকিত বাংলাদেশ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ফারুক আলম।
শতবর্ষের টার্গেটে এগিয়ে যাচ্ছে ঢাকা ওয়াসা

আলোকিত বাংলাদেশ : আসন্ন পবিত্র রমজানে ঢাকা শহরে পানি সরবরাহ কেমন থাকবে?

প্রকৌশলী তাকসিম এ খান : রমজানে পানি সরবরাহ নিশ্চিতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ঢাকা ওয়াসার সব পানি শোধনাগার ও পানির পাম্প নিরবচ্ছিন্নভাবে ২৪ ঘণ্টা চালু থাকবে। জনসমাগম স্থান গুলিস্তান, ফার্মগেট, গাবতলী, যাত্রাবাড়ী, কমলাপুর, সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডসহ জোনের বিভিন্ন স্থানে ইফতার ও সেহরির সময় প্লাস্টিক ট্যাংক, ট্রলি স্থাপন করে পানি সরবরাহ করা হবে। এছাড়া রাজধানীর মসজিদে পানি সরবরাহ নিশ্চিতের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে পানি সরবরাহের জন্য ঢাকা ওয়াসায় ৪৮টি পানির গাড়ি এবং ১৭টি ট্রাক্টর প্রস্তুত রাখা হয়েছে। লোডশেডিংয়ের সময় স্ট্যান্ডবাই পাওয়ার সোর্স হিসেবে ৩৮০টি ফিক্সড জেনারেটর এবং ১৯টি মোবাইল জেনারেটরের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। অভিযোগ গ্রহণের জন্য ‘ওয়াসা লিংক-১৬১৬২’ এবং ১১টি অভিযোগ কেন্দ্র ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখা হবে। মডস জোনের পানির পাম্প মনিটরিং করার জন্য বিদ্যমান ১০টি অ্যাডভাইজরি ও মনিটরিং টিম তৎপর থাকবে।

আলোকিত বাংলাদেশ : ডিজিটালাইজেশনে ঢাকা ওয়াসা কোন অবস্থানে রয়েছে?

প্রকৌশলী তাকসিম এ খান : বর্তমানে ই-সেবায় যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে ই-বিলিং, ই-জিপি, ই-পানি ও পয়োসংযোগ, ই-নথি, ই-রিক্রুটমেন্টসহ প্রায় সবক্ষেত্রেই ডিজিটাল সিস্টেম তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে ঢাকা ওয়াসা। এছাড়া পানির পাম্পে এসসিএডিএ স্থাপন করে ওয়েব ও মোবাইল অ্যাপ দ্বারা গভীর নলকূপের অপারেশন, কন্ট্রোল ও মনিটরিংয়ের কার্যক্রম পরিচালনা করে ঢাকা ওয়াসা পরিচালন ব্যয় কমিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। অন্যদিকে এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স প্ল্যানিং বাস্তবায়নের পদেক্ষপ গ্রহণ করা হয়েছে। আইওটি ও জিআইএস ব্যবহার করে স্মার্ট ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম প্রক্রিয়া চলমান। এর মাধ্যমে সব মিটার, বাল্বসহ অন্যান্য সবকিছুর ডিজিটালাইজেশন সম্পন্ন করবে ঢাকা ওয়াসা।

আলোকিত বাংলাদেশ : ঢাকা ওয়াসা একটানা সপ্তমবারের মতো দায়িত্ব পালন করছেন। এই দীর্ঘ সময়ে কোন অর্জনকে বড় করে দেখছেন?

প্রকৌশলী তাকসিম এ খান : বর্তমানে ঢাকায় পানির সংকট যেমন দূর হয়েছে, তেমনি দুর্নীতি কমেছে। দুর্নীতি দূরীকরণে পানির বিল দেয়ার ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিল পরিশোধে অ্যানালগ থেকে ডিজিটালাইজেশনে (মোবাইলে বিল পরিশোধ) রূপান্তর করা হয়। সংস্থা মানুষকে সেবা দেবে এবং সংস্থার ভেতরে দুর্নীতি দূর করবে, এর চেয়ে বড় অর্জন কিছু হতে পারে না।

আলোকিত বাংলাদেশ : শীতকালে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পানি সংকট দেখা দেয়? এর কারণ কী?

প্রকৌশলী তাকসিম এ খান : শীতকালে নদীতে পানি কমে যাওয়া এবং গভীর নলকূপের পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় কিছু এলাকায় পানির সমস্যা হয়। কিন্তু এবার শীতের মৌসুমে কোথাও পানি সংকট দেখা যায়নি। পানির পাম্পগুলোয় যাতে সমস্যা না হয়, সেজন্য বিশেষ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কোনো এলাকায় পানির সংকট হলে তাৎক্ষণিকভাবে ওয়াসার কর্মকর্তা-কর্মচারী ছুটে যাচ্ছেন। এছাড়া ওই এলাকায় পানির সংকট দূর করতে দ্রুত পানির গাড়ি পৌঁছে যাচ্ছে।

আলোকিত বাংলাদেশ : ডলার সংকটের মধ্যে পানি সরবরাহে কোন বিঘ্ন হচ্ছে কি না?

প্রকৌশলী তাকসিম এ খান : ঢাকা ওয়াসার পুরোপুরি সিস্টেমের উন্নতি হয়েছে, সেজন্য ২৪ ঘণ্টা পানি সরবরাহে সাংগঠনিক ভিত্তি তৈরি হয়েছে। তবে ছোটোখাটো সমস্যা ছাড়া শতভাগ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর পানি সরবরাহে যে পদ্ধতি রয়েছে, সেসবের চেয়ে ভালো আছে। এই অবস্থায় আমাদের রাজস্ব আদায় শতভাগ হয়েছে। ডলার সংকটের মধ্যে ওয়াসার পানি সরবরাহে কোনো ধরনের বিঘ্ন হয়নি, হয়তো প্রজেক্টগুলোতে কিছু ডলার সংকটের প্রভাব পড়েছে।

আলোকিত বাংলাদেশ : চলমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে পানির উৎপাদনের খরচ বেড়েছে কি না?

প্রকৌশলী তাকসিম এ খান : চলমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে পানির উৎপাদন খরচ অবশ্যই বেড়ে গেছে। আগে ১ হাজার লিটার পানি উৎপাদনে ২৫ থেকে ২৬ টাকা খরচ পড়ত, বর্তমানে ২৮ থেকে ২৯ টাকা খরচ পড়ছে। ১ হাজার লিটার পানি উৎপাদনে বর্তমানে ২ থেকে ৩ টাকা বেড়ে গেছে। আর ওয়াসা গ্রাহক ১ হাজার লিটার পানির জন্য ১৫ টাকা দিচ্ছেন। এরপরও পানির বিল বাড়ানো হয়নি। পানির উৎপাদন খরচ ও গ্রাহকের কাছে পানির বিলের মধ্যে বিরাট ফারাক রয়েছে। এখানে সরকার আমাদের। পানির পাম্ব সরবরাহের মাধ্যমে কিছুটা ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার। ২০ বছরে ঢাকা ওয়াসার ২ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়েছে। আর সেই ঋণ ঢাকা ওয়াসা পরিশোধ করছে। গত বছরে ৬৮০ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ করেছে। সুশাসন নিশ্চিত করে রাজস্ব আয় বাড়ানো হয়েছে।

আলোকিত বাংলাদেশ : প্রতিনিয়ত কোটি মানুষের পানি সরবরাহে পাম্পের যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে। বর্তমানে এসব যন্ত্রাংশ আমদানিতে কী ধরনের প্রভাব পড়ছে?

প্রকৌশলী তাকসিম এ খান : বর্তমানে বাজেটে মেরামত খরচ বেড়ে গেছে। পাম্পের যন্ত্রাংশ আগেভাগেই আমদানি করা হয়েছে। সেজন্য খুব বেশি সমস্যা হচ্ছে না, তবে যেসব যন্ত্রাংশ বর্তমানে সরবরাহ করার প্রয়োজন সেগুলোতে একটু বিলম্ব হচ্ছে। কারণ রাশিয়া-ইউক্রেন, গাজা-ইজরাইল যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বে অস্থিরতা চলছে। এ সময়ে যন্ত্রাংশ সরবরাহকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের খরচ ও সময় কিছুটা বেড়েছে।

আলোকিত বাংলাদেশ : ঢাকা ওয়াসা এমডি পদে নিয়োগের আগমুহূর্তে বরাবরই আপনাকে নিয়ে আলোচনা হয়, এটি কীভাবে দেখছেন?

প্রকৌশলী তাকসিম এ খান : বিএনপি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ঢাকাজুড়ে কোটি মানুষের পানি সরবরাহে সংকটে হাড়িপাতিল-ঝাঁড়ু মিছিল ও মানববন্ধনের মতো কর্মসূচি লেগেই ছিল। ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এলে ঢাকায় পানি সংকট নিরসনে নজর দেওয়া হয়। তবে, দীর্ঘ বছরের ঘুণেধরা জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠান ঢাকা ওয়াসাকে স্বল্পসময়ে ঘুরে দাঁড়ানোটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে মন্ত্রিসভা গঠনের পরেই ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) নিয়োগ পান প্রকৌশলী তাকসিম এ খান। ঢাকা ওয়াসাকে জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রস্তুত করতে ‘ঘুরে দাঁড়াও ওয়াসা’ কার্যক্রমের মাধ্যমে আজকে সফলতার সঙ্গে ঘুরে দাঁড়িয়েছে ঢাকা ওয়াসা। বর্তমানে পানি সরবরাহে শতভাগ সফলতা দেখিয়েছে।

পাশ্বর্বতী রাষ্ট্র ভারতের চেন্নাই ও পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশের পানি সরবরাহকারী সংস্থাগুলো ঢাকা ওয়াসার এই সাফল্য দেখে অবিভূত। ঢাকা ওয়াসা আরো নতুন কিছু করার চেষ্টা করছে। যেখানেই একটা কিছু শেষ হয়, সেখানেই নতুন একটা কিছু করছে ঢাকা ওয়াসা। এটাই সংস্থাটির নিয়ম হয়ে দাাঁড়িয়েছে।

আগামী ১০০ বছরের টার্গেট নিয়ে পানি সরবরাহ ও পয়ঃবর্জ্য শোধন নিশ্চিতে নতুন নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছে ঢাকা ওয়াসা। ঢাকা ওয়াসার মাধ্যমে তিনি সরকারের সফলতার স্বপ্ন দেখেন। আর এসব যোগ্যতার কারণেই ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে বরাবর নিয়োগ পাচ্ছেন। বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার বড় শহরগুলোয় পানি সরবরাহকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে ঢাকা ওয়াসা রোল মডেল। এরপরও যারা সমালোচনা করছেন, তাদের নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চান না এমডি তাকসিম এ খান।

প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালের ১৫ অক্টোবর থেকে ঢাকা ওয়াসার এমডি দায়িত্ব পালন করে আসছেন প্রকৌশলী তাকসিম এ খান। দীর্ঘ এই সময়ে রাজধানীর সব বাড়িতে পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশনের দায়িত্ব নিরলসভাবে পালন করে যাচ্ছেন। এর মধ্যে ২০২৩ সালের ৩ আগস্ট সপ্তমবারের মতো ঢাকা ওয়াসার এমডি পদে নিয়োগ পেয়েছেন প্রকৌশলী তাকসিম এ খান।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত