বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের আজ আখেরি মোনাজাত

ধর্মীয় নগরীর রূপ পেয়েছে টঙ্গী

প্রকাশ : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকার অদূরে টঙ্গীতে তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব আজ শেষ হচ্ছে। আজ আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হবে এই পর্বটি। সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে বলে ইজতেমা সূত্রে জানা গেছে। এর আগে হেদায়েতি বয়ান করা হবে। তাবলীগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় মুরুব্বিদের পরামর্শের ভিত্তিতে বিশ্ব তাবলিগ জামায়াতের শীর্ষ মুরুব্বি বাংলাদেশের হাফেজ মাওলানা জুবায়ের আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। আখেরি মোনাজাতে প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি অংশ নেবেন বলে আয়োজকদের ধারণা। ইজতেমার প্রথম পর্বে শিল্প নগরী টঙ্গী ইতোমধ্যেই ধর্মীয় নগরীতে পরিণত হয়েছে। গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো আমবয়ান চলে সারা দিন। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য নিজের ইমান, আমল ও আখলাককে পরিপূর্ণ শুদ্ধরূপে গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বয়ান করেন ইজতেমার শীর্ষ আলেম ও মুরুব্বিরা। টঙ্গী শহর এবং ইজতেমাস্থল ও এর আশপাশের এলাকা যেন জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমায় আগত লাখ লাখ মুসল্লির আগমনে মুখরিত হয়ে উঠেছে। টঙ্গী অভিমুখী বাস, ট্রাক, ট্রেন, লঞ্চসহ বিভিন্ন যানবাহনে মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত মানুষের এ ঢল অব্যাহত থাকবে।

ধুলা, ময়লা, শীত, বৃষ্টিসহ নানা প্রতিকূলতা উপক্ষো করে সবারই মনোযোগ আলেমদের বয়ানের দিকে। আর আল্লাহু আকবর ধ্বনিতে টঙ্গীর তুরাগ তীর মুখিরত। ফজরের নামাজের পর থেকে রাত পর্যন্ত অবিরাম চলে বিভিন্ন ভাষায় বয়ান। দেশ-বিদেশের বিশিষ্ট আলেমগণ বিভিন্ন বিষয়ের উপর বয়ান করতে থাকেন। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা মনোনিবেশ করে ঈমান, আখলাক ও দ্বীনের বিভিন্ন বয়ান শুনেন। গতকাল বাদ ফজর থেকে তুরাগ তীরে টঙ্গীর ইজতেমা মাঠে লাখ-লাখ মুসল্লির উদ্দেশ্যে চলে পবিত্র কোরআন-হাদিসের আলোকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বয়ান করেন আলেম ওলামায়ে কেরাম।

বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের দ্বিতীয় দিনের শুরুতে গতকাল বাদ ফজর মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে বয়ান করেন ভারতের মাওলানা আব্দুর রহমান। তার বয়ান বাংলায় তরজমা করেন বাংলাদেশের মাওলানা আব্দুল মতিন। বাদ জোহর বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ইসমাইল গোদরা। বাদ আসর বয়ান করেন ভারতের মাওলানা জুহাইরুল হাসান। বাদ মাগরিব বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা। বয়ানে ওলামায়ে কেরামগণ বলেন, পরকালের চিরস্থায়ী সুখ শান্তির জন্য আমাদের প্রত্যককে দুনিয়াতে জীবিত থাকা অবস্থায় দ্বীনের দাওয়াতের কাজে জানমাল দিয়ে মেহনত করতে হবে। ঈমান আমলের মেহনত ছাড়া কেউ হাশরের ময়দানে কামিয়াব হতে পারবে না। বয়ানে বলা হয়, দাওয়াতের মেহনত হলো নবুওয়াতি মেহনত। এ মেহনত খুলুসিয়াত ও আজমতের সাথে যারা করবে তাদের যেকোন আমলের ফজিলত বহুগুণ বেড়ে যায়। ইজতেমায় মূল বয়ান উর্দুতে হলেও অংশ নেওয়া বিভিন্ন ভাষাভাষি মুসল্লিদের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে বাংলা, ইংরেজি, আরবি, তামিল, মালয়, তুর্কি ও ফরাসিসহ বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করা হয়।

বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় দিনে গতকাল যৌতুকবিহীন বিয়ের আয়োজন করা হয়। বাদ আসর ইজতেমাস্থলে বয়ান মঞ্চের পাশে হযরত ফাতেমা (রা.) ও হযরত আলী (রা.) এর বিয়ের দেনমোহর অনুসারে এ বিয়ে সম্পন্ন করা হয়। গতকাল শতাধিক যুগলের যৌতুকবিহীন বিয়ে অনুষ্ঠিত হলেও প্রতিবছর ৮০ থেকে ১৩০ যুগল পর্যন্ত যৌতুকবিহীন বিয়ে হয়ে থাকে। গত বছরও ৭০টি বিয়ে পড়ানো হয়। এর আগে, বিয়ের জন্য বর ও কনে পক্ষের লোকদের তালিকা সংগ্রহ করা হয়। বিয়ের আগে বাদ আসর বিয়ের খুতবা প্রদান করা হয়। বয়ান শেষে ওইসব বর-কনের অভিভাবকদের সম্মতিতে বিয়ে পড়ানো হয়। বিয়ে শেষে উপস্থিত দম্পতিদের স্বজন ও মুসল্লিদের মধ্যে খোরমা-খেজুর বিতরণ করা হয়।

আখেরি মোনাজাত উপলক্ষ্যে বন্ধ থাকবে যেসব রাস্তা : বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাত উপলক্ষ্যে গত রাত ১২টার পর ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর থেকে গাজীপুর মহানগরীর ভোগড়া বাইপাস ও টঙ্গীর স্টেশন রোড থেকে কামারপাড়া পর্যন্ত সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার ইব্রাহিম গতকাল সকালে ইজতেমা ময়দানে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

তিনি আরো বলেন, ইজতেমার আখেরি মোনাজাত উপলক্ষ্যে জিএমপির ট্রাফিক বিভাগকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। যেহেতু দূর-দূরান্ত থেকে মোনাজাতে অংশগ্রহণের জন্য মুসল্লিরা আসবেন, সেহেতু শনিবার রাত ১২টার পর থেকে কয়েকটি সড়ক বন্ধ রাখা হবে। তিনি জানান, আখেরি মোনাজাতে দেশ-বিদেশের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি অংশ নেবেন। এ কারণে তাদের সুবিধার জন্য শনিবার রাত ১২টা থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের রাজধানীর আবদুল্লাহপুর থেকে গাজীপুর মহানগরীর ভোগড়া বাইপাস, আবদুল্লাহপুর থেকে কামারপাড়া রোড হয়ে গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী স্টেশন রোড পর্যন্ত সড়ক, আবদুল্লাহপুর থেকে আশুলিয়ার বাইপাইল পর্যন্ত এবং মিরের বাজার থেকে টঙ্গী পর্যন্ত সড়কে সকল ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। সেক্ষেত্রে ঢাকাগামী লোকজন ও যানবাহনগুলোকে ভোগড়া বাইপাস দিয়ে ৩০০ ফিট রাস্তা ব্যবহার করে চলাচল করতে বলা হয়েছে। যেসব লোকজন ময়মনসিংহ বা গাজীপুর যাবেন, তারা বাইপাইল থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা হয়ে চলে যাবেন।