মার্কিন প্রতিশোধমূলক হামলায় সিরিয়া ও ইরাকে নিহত ৩৪

মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা নিয়ে বাড়তে পারে উদ্বেগ

প্রকাশ : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

ইরাক ও সিরিয়ায় প্রতিশোধমূলক হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে সিরিয়ায় ১৮ জন ও ইরাকে ১৬ জন নিহত হয়েছে। ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড বাহিনী ও তাদের সঙ্গে সম্পর্কিত মিলিশিয়াদের ৮৫টির বেশি লক্ষ্যবস্তুতে এ হামলা চালানো হয়েছে। গত রোববার সিরিয়া সীমান্তবর্তী জর্ডানের একটি মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ড্রোন হামলার জবাবে যুক্তরাষ্ট্র এ হামলা চালাল। প্রাণঘাতী সেই হামলায় তিন মার্কিন সেনা নিহত এবং আরও ৪০ জনেরও বেশি সেনা আহত হয়েছিলেন। খবরে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী সিরিয়া এবং ইরাকে বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালিয়েছে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে আসা খবর নিশ্চিত করেছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। জর্ডানের প্রত্যন্ত সেই মার্কিন ঘাঁটিতে ড্রোন হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের এটিই প্রথম প্রতিশোধমূলক কোনও হামলা। গত শুক্রবারের হামলায় ইরাক ও সিরিয়ার মধ্যে সাতটি অবস্থানের এসব লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করা হয়েছে বলে মার্কিন সামরিক সূত্র জানিয়েছে।

গত রোববার জর্ডান-সিরিয়া সীমান্তের কাছে ড্রোন হামলায় তিন মার্কিন সেনা নিহত এবং আরও ৪০ জন আহত হয়েছিলেন। পরে সামরিক ঘাঁটিতে হামলার দায় স্বীকার করে ইসলামিক রেজিস্ট্যান্স ইন ইরাক নামে একটি গ্রুপ। ‘সেই হামলার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র বলেছিল যে, এর সামরিক জবাব দেওয়া হবে এবং প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের মতো মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছিলেন, এই প্রতিক্রিয়া একাধিকভাবে হবে। সুতরাং পাল্টা এই হামলা খুব ভালোভাবে মার্কিন প্রতিক্রিয়ার প্রথম পর্যায় হতে পারে। মূলত সেই প্রতিশোধমূলক মার্কিন বিমান হামলাই এখন শুরু হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটি প্রথম পদক্ষেপ, আমি মনে করি না, প্রতিক্রিয়া এখানেই শেষ হবে।’ প্রেসিডেন্ট বাইডেনসহ অন্যান্য শীর্ষ মার্কিন নেতারা কয়েকদিন ধরে সতর্ক করে আসছেন, যুক্তরাষ্ট্র পাল্টা আঘাত হানবে। এ সময় তারা স্পষ্ট করে দেন, প্রতিক্রিয়া কেবল একটি আঘাতে হবে না, সময়ের সাথে সাথে বেশ কয়েকটি ‘স্তরে প্রতিক্রিয়া’ দেখানো হবে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার ইরাক এবং সিরিয়ায় ইরান-সম্পর্কিত লক্ষ্যবস্তুগুলোতে প্রতিশোধমূলক হামলার অনুমোদন দেয় যুক্তরাষ্ট্র। গাজায় হামাসের সাথে ইসরায়েলের চার মাসের যুদ্ধের মধ্যে হওয়া এই হামলা মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা নিয়ে উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। মার্কিন সামরিক বাহিনী এক বিবৃতিতে জানায়, হামলায় কমান্ড ও কন্ট্রোল সেন্টার, রকেট, ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন স্টোরেজ সুবিধা, সেইসাথে লজিস্টিক এবং যুদ্ধাস্ত্র সরবরাহ চেইন সুবিধাসহ বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করা হয়েছে।

সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, সাতটি অবস্থানে বিস্তৃত ৮৫টিরও বেশি লক্ষ্যবস্তুতে এসব হামলা চালানো হয়েছে। এই সাত স্থানের মধ্যে সিরিয়ার চারটি এবং ইরাকের স্থান তিনটি। এবং এই হামলা চালানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে উড়ে আসা দূরপাল্লার বি-১ বোমারু বিমানও ব্যবহার করা হয়েছে। এদিকে শুক্রবার, সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় মিডিয়া বলেছে, সিরিয়ার মরুভূমি অঞ্চলে এবং সিরিয়া ও ইরাকি সীমান্তের বেশ কয়েকটি স্থাপনায় ‘আমেরিকান আগ্রাসনের’ ফলে অনেক লোক নিহত এবং আহত হয়েছেন।

প্রসঙ্গত, ইরাক ও সিরিয়াজুড়ে ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়াদের অগণিত সংখ্যক ঘাঁটি, অস্ত্রের গুদাম এবং প্রশিক্ষণ ডিপো রয়েছে। এই মিলিশিয়ারা ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডস কর্পসের (আইআরজিসি) কুদস ফোর্সের হাতে প্রশিক্ষিত, সজ্জিত। এছাড়া তারাই এগুলোর অর্থায়ন করে। কিন্তু তারা সবসময় আইআরজিসির মাধ্যমে পরিচালিত হয় না। এছাড়া জর্ডানের সেই সামরিক ঘাঁটিতে হামলার দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক রেজিস্ট্যান্স ইন ইরাক নামে একটি গ্রুপ। মূলত ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়াদের বেশ কয়েকটি গোষ্ঠীকে একত্রিতভাবে বোঝাতে এই নামটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যার মধ্যে কিছু গোষ্ঠী আবার অপ্রত্যাশিতভাবে এই অঞ্চলে সবার অভিন্ন শত্রু ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের পাশে থেকে অতীতে লড়াইও করেছে।

সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশোধমূলক হামলায় ১৮ ইরানপন্থি যোদ্ধা নিহত হয়েছে। এছাড়া এই হামলায় দেশটিতে ইরানপন্থি দলগুলোর আবাসস্থল হিসেবে ব্যবহৃত স্থাপনাসহ অন্তত ২৬টি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাও ধ্বংস করা হয়েছে। সিরিয়ার মানবাধিকার পর্যবেক্ষণকারী একটি গোষ্ঠীর বরাত দিয়ে গতকাল এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন সামরিক বাহিনী শুক্রবার ইরাক এবং সিরিয়ায় ইরানি বাহিনী এবং তেহরান সমর্থিত মিলিশিয়া গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক বিমান হামলা চালিয়েছে।

এদিকে ইরাকে ইরানপন্থী লক্ষ্যবস্তুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশোধমূলক বিমান হামলায় বেসামরিক নাগরিকসহ অন্তত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলায় আহত হয়েছেন আরও অন্তত ২৫ জন। শনিবার ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানির কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের চালানো হামলাকে ‘ইরাকের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে নতুন আগ্রাসন’ হিসেবে উল্লেখ করে এর নিন্দা জানিয়েছেন মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানি। একই সঙ্গে বাগদাদ সরকারের সাথে সমন্বয় করে ওয়াশিংটন এই হামলা চালিয়েছে বলে যে দাবি করা হয়েছে, তা ‘মিথ্যা’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এই অঞ্চলে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের উপস্থিতি ইরাকের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকির কারণ হয়ে উঠেছে।’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমাদের প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। এটি (প্রতিক্রিয়া) আমাদের পছন্দের সময়ে এবং জায়গায় চলতে থাকবে।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্য বা বিশ্বের অন্য কোথাও সংঘাত চায় না। তবে যারা আমাদের ক্ষতি করতে চায় তাদের সবাইকে এটি জানাতে হবে- আপনি যদি একজন আমেরিকানকেও ক্ষতি করেন তবে আমরা জবাব দেব।’ সাম্প্রতি সময়ে উত্তেজনার বৃদ্ধির পরও ওয়াশিংটন এবং তেহরান উভয়ই সর্বাত্মক যুদ্ধ এড়াতে চেয়েছে। আর তাই নিজেদের ওপর আরও হামলা এড়াতে পাল্টা হামলা চালানোর সময় তেহরানের সাথে সরাসরি সংঘর্ষ এড়াতে ইরানের ভূখণ্ডে আঘাত করেনি যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন সামরিক বাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, হামলায় ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের কুদস ফোর্স এবং সেইসাথে তাদের ‘সংশ্লিষ্ট মিলিশিয়া গোষ্ঠীকে’ লক্ষ্য করে আমেরিকান বাহিনী ‘৮৫টিরও বেশি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করেছে। এই হামলায় বহু যুদ্ধবিমান অংশ নিয়েছে, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে উড়ে আসা দূরপাল্লার বোমারু বিমানও রয়েছে’।

সেন্টকম বলেছে, ‘বিমান হামলায় ১২৫টিরও বেশি নির্ভুল অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে’। ইরানি বাহিনী ও তাদের সমর্থিত মিলিশিয়াদের যারা মার্কিন বাহিনীর ওপর হামলায় সহায়তা করেছিল তাদের কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার এবং গোয়েন্দা কেন্দ্রের পাশাপাশি রকেট, মিসাইল এবং ড্রোন স্টোরেজ অবকাঠামোতেও হামলা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সেন্টকম।

এদিকে সিরিয়ার মানবাধিকার পর্যবেক্ষণকারী ব্রিটেনভিত্তিক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ‘অন্তত ১৮ জন ইরানপন্থি যোদ্ধা’ নিহত হয়েছেন।

পর্যবেক্ষণকারী এই সংস্থাটি জানিয়েছে, দেইর এজর শহর থেকে ১০০ কিলোমিটার ইরাকি সীমান্তের কাছে আলবু কামালের কাছ পর্যন্ত বিস্তৃত পূর্ব সিরিয়ার বিশাল অংশে চলমান অভিযানে অস্ত্রের ডিপোসহ ইরানপন্থি গোষ্ঠীগুলোর আবাসস্থল হিসেবে ব্যবহৃত অন্তত ২৬টি গুরুত্বপূর্ণ স্থান ধ্বংস করা হয়েছে। এছাড়া শুক্রবার সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় মিডিয়া বলেছে, সিরিয়ার মরুভূমি অঞ্চলে এবং সিরিয়া ও ইরাকি সীমান্তের বেশ কয়েকটি স্থাপনায় ‘আমেরিকান আগ্রাসনের’ ফলে অনেক লোক নিহত এবং আহত হয়েছেন।

প্রসঙ্গত, ইরাক ও সিরিয়াজুড়ে ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়াদের অগণিত সংখ্যক ঘাঁটি, অস্ত্রের গুদাম এবং প্রশিক্ষণ ডিপো রয়েছে। এই মিলিশিয়ারা ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডস কর্পসের (আইআরজিসি) কুদস ফোর্সের হাতে প্রশিক্ষিত, সজ্জিত। এছাড়া তারাই এগুলোর অর্থায়ন করে। কিন্তু তারা সবসময় আইআরজিসির মাধ্যমে পরিচালিত হয় না। এছাড়া জর্ডানের সেই সামরিক ঘাঁটিতে হামলার দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক রেজিস্ট্যান্স ইন ইরাক নামে একটি গ্রুপ। মূলত ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়াদের বেশ কয়েকটি গোষ্ঠীকে একত্রিতভাবে বোঝাতে এই নামটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যার মধ্যে কিছু গোষ্ঠী আবার অপ্রত্যাশিতভাবে এই অঞ্চলে সবার অভিন্ন শত্রু ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের পাশে থেকে অতীতে লড়াইও করেছে।

সূত্র: বিবিসি ও আল জজিরা।