নৌপথে রাজত্ব বাড়ছে মেয়াদোত্তীর্ণ জলযানের

প্রকাশ : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ফারুক আলম

নদীপথে মেয়াদোর্ত্তীণ জলযানের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এরপরও নদী পারাপারে এসব জলযান ব্যবহার করা হচ্ছে। যার ফলে বছরের পর বছর দুর্ঘটনা বাড়ছে। তবে কিছুদিন আগে রজনীগন্ধা ফেরি ডুবির ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে নৌমন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)। তদন্ত কমিটির তদন্তে বেরিয়ে এসেছে কিছু তথ্য।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশেষ করে ফেরির মাস্টারদের নিয়োগে অনিয়ম। সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর থেকে পরীক্ষার মাধ্যমে দক্ষতা অনুযায়ী তিন শ্রেণির সনদ দেয়া হয়ে থাকে জলযানের মাস্টার-ড্রাইভারদের। নৌপরিবহন অধিদপ্তরের চিফ ইঞ্জিনিয়ার অ্যান্ড শিপ সার্ভেয়ার মো. মনজুরুল কবীরের কাছ থেকে জানা যায়, নিয়ম অনুয়ায়ী তৃতীয় শ্রেণির সনদধারীরা ১-২৫০ হর্সপাওয়ার, দ্বিতীয় শ্রেণির সনদধারীরা ২৫০-৬০০ হর্সপাওয়ার এবং প্রথম শ্রেণির সনদধারীরা ৬০০-এর অধিক হর্সপাওয়ার ইঞ্জিনের ফেরি বা জলযান চালাতে পারবেন। অর্থাৎ তৃতীয় শ্রেণির সনদধারীরা বড় ধরনের কোনো ফেরি বা জাহাজ পরিচালনা করতে পারেন না। এ ধরনের সনদধারীদের ফরি চালানোর অনুমতি নেই। তারপরেও সে নিয়মের তোয়াক্কা না করে কেবল নানা-নাতির যোগসাজশে ফেরি চলছে তৃতীয় শ্রেণির চালকদের দিয়ে।

এখন প্রশ্ন কীভাবে সেটি সম্ভব হলো : গত ১৭ জানুয়ারি ডুবে যাওয়া ফেরি রজনীগন্ধার ইঞ্জিন ছিল ৪৫০ হর্সপাওয়ারের। তাই তৃতীয় শ্রেণির সনদধারী মাস্টার এই ফেরি পরিচালনার জন্য সম্পূর্ণভাবে অযোগ্য। অথচ দ্বিতীয় শ্রেণির স্থানে তৃতীয় শ্রেণির সনদধারী মো. আঞ্জুমান নামের অদক্ষ মাস্টারকে পোস্টিং দেয়া হয়।

জানা গেছে, দুর্ঘটনার দিন প্রথম মাস্টার মেহের আলী ডিউটি শেষে আঞ্জুমানের কাছে ফেরি বুঝে দিয়ে বিশ্রামে ছিলেন। আঞ্জুমান পাটুরিয়া অঞ্চলের ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের (সাবেক) সভাপতি ফয়েজ আহমেদের নাত জামাই। সেই সুবাদেই নিয়মবহির্ভূতভাবে তিনি ওই ফেরিতে নিয়োগ পেয়েছিলেন, সংশ্লিষ্টদের কথা থেকে এমনটিই বেরিয়ে এসেছে। এদিকে ফয়েজ আহাম্মেদের ছোট ছেলে মোহাম্মদ জবরুল হোসেনও তৃতীয় শ্রেণির সনদধারী। তারপরও পাটুরিয়া- দৌলতদিয়া অঞ্চলের ইমার্জেন্সি উদ্ধারকারী জাহাজ (আইটি-৮-৩৮৯) তে ১ম শ্রেণির ড্রাইভারের দায়িত্ব পালন করলেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এদিকে ফয়েজ আহমেদের নাতি ইমন হাসান তৃতীয় শ্রেণির সনদধারী মাস্টার হয়ে দ্বিতীয় শ্রেণির মাস্টার হিসেবে ইউটিলিটি ফেরি হাসনাহেনায় দায়িত্ব (পোস্টিং) পালন করছে। যা নিয়মের বরখেলাপই নয়, একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এমনিতেই ফেরিগুলো তাদের মেয়াদকাল পেরিয়েছে। অনেক বছরের পুরোনো ফেরি, তার ওপর অদক্ষ মাস্টার দিয়ে ফেরির দায়িত্ব পালন করানোর কারণেই দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টদের অনেকে। চোখের সামনে এমন অনিয়ম ঘটলেও কর্তৃপক্ষ নিজেদের গা বাঁচাতে বলছেন তারা এর বিন্দু-বিসর্গ জানেন না। এই দাবি বিআইডব্লিউটিসির আঞ্চলিক কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের।

গত ১৭ জানুয়ারি পাটুরিয়া ঘাটের কাছে নোঙর করা অবস্থায় রজনীগন্ধা নামক ফেরিটি ডুবে যায়। এতে একজনের প্রাণহানি ঘটে। ওই ফেরিডুবির ঘটনায় তদন্ত কমিটি হয়েছে। তবে প্রতিবেদন এখনও প্রকাশ বা জমা পড়েনি। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, এই নৌরুটের চলাচলকারী প্রায় সবগুলো ফেরিই ৩৫ থেকে ৪০ বছরের পুরোনো। তার ওপর আছে ফেরির মাস্টারদের নিয়োগে অনিয়ম। সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর থেকে পরীক্ষার মাধ্যমে দক্ষতা অনুযায়ী তিন শ্রেণির সনদ দেয়া হয়ে থাকে জলযানের মাস্টার-ড্রাইভারদের।

ফেরি চালকদের বিষয়ে নৌপরিবহন অধিদপ্তরের চিফ ইঞ্জিনিয়ার অ্যান্ড শিপ সার্ভেয়ার মো. মনজুরুল কবীরের কাছ থেকে জানা যায়, নিয়ম অনুয়ায়ী তৃতীয় শ্রেণির সনদধারীরা ১-২৫০ হর্সপাওয়ার, দ্বিতীয় শ্রেণির সনদধারীরা ২৫০-৬০০ হর্সপাওয়ার এবং প্রথম শ্রেণির সনদধারীরা ৬০০-এর অধিক হর্সপাওয়ার ইঞ্জিনের ফেরি বা জলযান চালাতে পারবেন। অর্থাৎ তৃতীয় শ্রেণির সনদধারীরা বড় ধরনের কোনো ফেরি বা জাহাজ পরিচালনা করতে পারবেন না। তাদের ফেরি চালানোর অনুমতি দেয়া হয় না। কিন্তু রজনীগন্ধ্যার ক্ষেত্রে ঘটেছে তার উল্টোটি। ডুবে যাওয়া ফেরিটির ইঞ্জিন ছিল ৪৫০ হর্সপাওয়ারের। তাই তৃতীয় শ্রেণির সনদধারী মাস্টার এই ফেরি পরিচালনার জন্য সম্পূর্ণভাবে অযোগ্য। অথচ দ্বিতীয় শ্রেণির স্থানে তৃতীয় শ্রেণির সনদধারী মো. আঞ্জুমান নামের অদক্ষ মাস্টারকে পোস্টিং দেয়া হয়। এ বিষয়ে আঞ্জুমানের বক্তব্য, দুর্ঘটনার দিন প্রথম মাস্টার মেহের আলী ডিউটি শেষে তার কাছে ফেরি বুঝে দিয়ে বিশ্রামে ছিলেন। আঞ্জুমান পাটুরিয়া অঞ্চলের ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের (সাবেক) সভাপতি ফয়েজ আহমেদের নাত জামাই। সেই সুবাদেই নিয়মবহির্ভূতভাবে তিনি ওই ফেরিতে নিয়োগ পান। এদিকে প্রভাবশালী ফয়েজ আহাম্মেদের ছোট ছেলে মোহাম্মদ জবরুল হোসেনও তৃতীয় শ্রেণির সনদধারী। তারপরেও তার হাতে সঁপে দেওয়া হয়েছে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া অঞ্চলের ইমার্জেন্সি উদ্ধারকারী জাহাজ (আইটি-৮-৩৮৯)। যেখানে তিনি প্রথম শ্রেণির ড্রাইভারের দায়িত্ব পালন করছেন। আবার ফয়েজ আহমেদের নাতি ইমন হাসান তৃতীয় শ্রেণির সনদধারী মাস্টার হয়ে দ্বিতীয় শ্রেণির মাস্টার হিসেব ইউটিলিটি ফেরি হাসনাহেনায় দায়িত্ব (পোস্টিং) পালন করছে। যদিও অদক্ষ ব্যক্তিদের দিয়ে ফেরি চালানোর বিষয়ে কোনো কিছুই জানা নেই বলে দাবি বিআইডব্লিউটিসির আঞ্চলিক কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের। সংস্থাটির বাণিজ্যিক বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) শাহ মোহাম্মদ খালেদ নেওয়াজের কাছে জানতে চাইলে তিনি সরাসরি কোনো মন্তব্য না করে মেরিন বিভাগে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। বিষয়টি নিয়ে কথা হয় বিআইডব্লিউটিসির আঞ্চলিক কার্যালয়ের এজিএম আহম্মদ আলীর সঙ্গে। তিনি যেমনটি বলছিলেন। ফেরিতে মাস্টার ড্রাইভার নিয়োগ দেয় হেড অফিসের প্রশাসনিক বিভাগ। এখানে আমাদের কোনো হাত নেই। এদিকে ফেরি কর্তৃপক্ষ বিআইডব্লিউটিসির জিএম মেরিন ক্যাপ্টেন হাসেমুর রহমান চৌধুরীকে ফোন করলে তিনি কথা না বলে, ব্যস্ত আছেন বলে ফোনকলটি কেটে দেন।

কোথায় উন্নতমানের উন্নত ফগলাইট : দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাট সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলতি মাসের ১৬ জানুয়ারি রাত থেকে ভারি কুয়াশা শুরু হয়। এই কারণে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও আরিচা-কাজিরহাট নৌপথে ঘন কুয়াশায় নৌপথে চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত আলো বা উন্নত প্রযুক্তির সুবিধা না থাকায় ভারি কুয়াশা পড়লেই রাতে আট থেকে নয় ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়।