ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পাল্টে গেল রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

পাল্টে গেল রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগমুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্র যে অবস্থায় ছিল, বর্তমানে সেই অবস্থা থেকে সরে এসে নমনীয়ভাব দেখাচ্ছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতোই যুক্তরাষ্ট্র বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে কাজ করার ঘোষণা দেওয়ায় এখন বিএনপির পায়ের তলায় মাটি নেই বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

জানা গেছে, নির্বাচনের পর পরই ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস সচিবালয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সঙ্গে দেখা করেন। আবার গত রোববার পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে সচিবালয়ে সাক্ষাৎ করেন পিটার ডি হাস। সর্বশেষ গত রোববার বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের অবস্থা থেকে ধাপে ধাপে সরে আসছে। যার মধ্যদিয়ে দেশের রাজনৈতিক পেক্ষাপট পাল্টে যাচ্ছে। এতে আরো চাপে পড়েছে সংসদের বাইরে থাকা রাজনৈতিক দল বিএনপি। তারা সব দিক থেকে সমর্থন হারাচ্ছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

সূত্র জানায়, বিএনপি বিদেশি শক্তির উপর ভর করে ভোট থেকে সরে গিয়ে আন্দোলন করে। কিন্তু আন্দোলনের মতো বিদেশি সমর্থন নিয়েও হতাশায় পড়ে দলটি। আগে শক্তিশালী দেশ রাশিয়া চীন ও ভারতের রাজনৈতিক সমর্থন হারা বিএনপি। এখন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন হারাতে বসছে বিএনপি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ থেকে আগে বলা হয়েছে তারা সব দশের সঙ্গে তলে তলে সমঝোতা করেছে। গত রোববার বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ওই চিঠি মার্কিন দূতাবাসের মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ‘খালি চোখে’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ‘সহযোগিতা বাড়াতেই’ চিঠি দিয়েছেন মনে হলেও সাবেক কূটনীতিকরা মনে করেন, চিঠির মূল বক্তব্য হচ্ছে, বাংলাদেশের সঙ্গে আরও বেশি রাজনৈতিক সম্পর্ক তৈরি করতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়ে আরও মনোযোগী হওয়ার জন্য শেখ হাসিনাকে তাগিদ দিয়েছেন জো বাইডেন।

চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার মো. শহীদুল হক বলেন, এ অঞ্চলের স্থিতিশীলতা রক্ষায় বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, আঞ্চলিক নিরাপত্তা রক্ষায় বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম। এই প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের যে বড় লক্ষ্য আছে, তা অর্জনে বাংলাদেশের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে চাইবে, এটি স্বাভাবিক।

তিনি আরো বলেন, একই সঙ্গে মনে রাখতে হবে সম্পর্ক রক্ষার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব কিছু নীতি আছে এবং সেটি তারা মেনে চলার চেষ্টা করে। ওই নীতিগুলোর মধ্যে নাগরিক অধিকার সংক্রান্ত বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ এবং সেগুলো তাদের পররাষ্ট্র নীতির মূল কাঠামোর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

চিঠির যে বার্তা দেয়া হচ্ছে: অত্যন্ত দক্ষতার (কেয়ারফুলি ড্রাফটেড) সঙ্গে লেখা ওই চিঠিতে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র অংশীদারত্বের নতুন অধ্যায়ের কথা বলা হয়েছে। সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলোর প্রথমে উল্লেখ রয়েছে ‘আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তার’ বিষয়টি। এছাড়া সহযোগিতার আরেকটি ক্ষেত্র হচ্ছে, রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু এবং শেষ দিকে অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিকের অভিন্ন লক্ষ্যের কথা বলা হয়েছে। এর মাঝে রয়েছে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন, জ্বালানিসহ অন্যান্য সহযোগিতা।

দুই দেশ তাদের মধ্যে সমস্যা একযোগে সমাধান করে থাকে এবং ‘মানুষে মানুষে সম্পর্ক’ এই দুই দেশের সম্পর্কের ভিত্তি বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সাবেক কূটনীতিক বলেন, দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক সম্পর্ক তৈরি হয় সংশ্লিষ্ট সরকারের মধ্যে ঘনিষ্ঠতার ওপর। তবে বাইডেনের পুরো চিঠিতে কোথাও সরকার শব্দটি উল্লেখ করা হয়নি এবং এটি তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেন, কূটনীতিতে প্রথা অনুযায়ী নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পর অন্য দেশগুলো অভিনন্দন জানিয়ে থাকে। এ চিঠির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এখানে সহযোগিতার কথা বলা হলেও অভিনন্দন জানানো হয়নি। দুই সরকারের মধ্যে রাজনৈতিক বোঝাপোড়ার যে ঘাটতি রয়েছে, সেটি দূর করার বিষয়ে ইঙ্গিত করা হয়েছে বলে আমি মনে করি’, বলেন সাবেক এই কূটনীতিক। তিনি বলেন, চিঠিটির আরেকটি দিক হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র তাদের উদ্বেগের বিষয়গুলো উল্লেখ না করেও ইঙ্গিতে বিষয়গুলো তুলে ধরেছে। অন্যভাবে বলতে গেলে নাগরিক অধিকার সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে তাদের অবস্থানের পরিবর্তন হয়নি। এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, অর্থনীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার করে চিঠি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বিএনপি এখন কী বলবে?

ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি নেতারা পালিয়ে গেছে, কেউ গাঢাকা দিয়েছে। এখন আপনাদের ক্ষমতায় আসার শক্তির উৎসটা কি? জনগণ আপনাদের কাছ থেকে সরে গেছে। জনগণও নেই বিদেশি বন্ধুরাও বিএনপিকে ছেড়ে চলে গেছে। যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি বেশি ভরসা ছিল সেই যুক্তরাষ্ট্রও শেখ হাসিনার সরকারের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার করেছে। এখন ক্ষমতায় যেতে বিএনপি কোন আশায় বসে থাকবে?

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের পাঠানো চিঠি নিয়ে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, আমেরিকাসহ পশ্চিমা বিশ্ব বাংলাদেশের অবৈধ, ডামি নির্বাচনকে বৈধতা দেয়নি।

আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্ট কয়েকদিন আগেও ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে যে জালিয়াতি হয়েছে সেটা স্পষ্টভাবে বলেছে। গণতন্ত্রের প্রশ্নে তারা কোনো ছাড় দিয়েছে বলে আমার জানা নেই।

রিজভী আরো বলেন, বহু কর্তৃত্ববাদী দেশের সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বের সম্পর্ক রয়েছে। একটি রাষ্ট্রের সঙ্গে আরেকটি রাষ্ট্রের যে সম্পর্ক থাকে, অর্থনীতি, বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক। দেশের জনগণ তো স্বাধীনতাকে জিম্মি করেনি। তারা দেশের জনগণের সঙ্গে কাজ করার কথা বলেছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত