ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শিক্ষা কর্তৃপক্ষের প্রতি প্রধানমন্ত্রী

তৃণমূলে খেলাধুলার আয়োজন করুন

তৃণমূলে খেলাধুলার আয়োজন করুন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিভা অন্বেষণে এবং দেশের তরুণ সমাজকে ক্রীড়ানুরাগে উদ্বুদ্ধ করতে শিক্ষা কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্টদের তৃণমূলে খেলাধুলার বিভিন্ন প্রতিযোগিতা আয়োজনের আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘স্থানীয় প্রতিভাবানদের সামনে আসার সুযোগ তৈরি করতে সব ধরনের আন্তঃস্কুল, আন্তঃকলেজ, আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয়, আন্তঃজেলা এবং আন্তঃ-উপজেলা ক্রীড়া প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করুন।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সকালে তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি ‘৫২তম শীতকালীন জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ২০২৪’র চূড়ান্ত পর্বের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, রাজশাহীর, সার্বিক তত্ত্বাবধানে রাজশাহী শহরে এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যেখানে সারাদেশের স্কুল, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৮২৪ জন ক্রীড়াবিদ এই চুড়ান্ত পর্বে অংশগ্রহণ করছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ক্রিকেট স্টেডিয়াম আছে, ফুটবল স্টেডিয়াম আছে সেগুলো আলাদা। কিন্তু উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত আমি মিনি স্টেডিয়াম করেছি একটা লক্ষ্য নিয়ে, সেখানে যেকোনো ধরনের স্পোর্টস হবে, খেলাধুলা চলবে, আন্তঃস্কুল, আন্তঃকলেজ, আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় এবং জেলা, উপজেলা পর্যন্ত খেলাধুলা হবে, যা আমাদের ছেলেমেয়েদের আরো সুযোগ করে দেবে নিজের দেশে ও বিদেশে নিজেদের দক্ষতা তুলে ধরতে।’ প্রতিটি উপজেলায় মিনি স্টেডিয়াম তৈরির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি তৈরি হয়ে গেছে আরো কিছু বাকি আছে সেগুলোও তৈরি হয়ে যাবে। এটা তৈরি করার উদ্দেশ্য হলো সারা বছরই আমাদের ছেলেমেয়েরা যেন কোনো না কোনো খেলাধুলার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি যে লেখাপড়ার সাথে সাথে খেলাধুলা, শরীরচর্চা এবং সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন হলে আমাদের ছেলেমেয়েরা মন মানসিকতার দিক থেকে আরো উদার হবে, উন্নত হবে, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হবে। সেভাবেই তাদের গড়ে তুলতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমি আজকে সত্যিই আনন্দিত যে আমাদের সম্মানিত শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা এই খেলাধুলার আগ্রহ দেখাচ্ছেন এবং এর জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। আজকের এই প্রতিযোগিতাটা শুরু হয়েছে সেই জানুয়ারি মাস থেকে। যেখানে সকল স্কুল, মাদ্রাসা এবং কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেছেন। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিজয়ী ৮২৪ জন খেলোয়াড় রাজশাহীতে মূল পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছেন। সবাইকে আমার আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। এত ছেলেমেয়ের একসঙ্গে অংশগ্রহণ এবং প্রতিযোগিতা করাটা সত্যিই খুব আনন্দের বিষয়। আর এর ভেতর থেকে যারা শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করবে, তাদের জন্য আমার আগাম অভিনন্দন থাকল।’

তিনি রাজশাহীতে এই শীতকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজনে আয়োজকদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি এই অঞ্চলে আরো বেশি খেলাধুলার একটা সুযোগ রয়েছে। কাজেই আপনারা আরো বেশি আন্তরিকতার সাথে কাজ করবেন।’

দেশীয় খেলাকে আরো বেশি গুরুত্ব প্রদানের আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের ছেলেমেয়েরা অনেক ভালো এবং মেধাবী। একটু সুযোগ করে দিলে তারা আরো ভালো করতে পারবে। তাছাড়া ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, ভলিবল, টেনিস, বাস্কেটবল, বেসবল, দৌড় প্রতিযোগিতা, হার্ডল রেস অথবা রিলে রেস অথবা ভারউত্তোলন বা যে খেলাধুলাগুলো রয়েছে সেগুলোতে আমাদের যেমন উৎকর্ষ অর্জন করতে হবে, তেমনি দেশীয় যে খেলাগুলো রয়েছে যেমন ডাংগুলী, হাডুডু থেকে শুরু করে বিভিন্ন খেলাধুলা যেগুলো আগে প্রচলিত ছিল সেগুলোও আমাদের চালিয়ে যেতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘এভাবে আমাদের নিজস্ব দেশীয় খেলাগুলো হাডুডু থেকে শুরু করে দেশীয় খেলাগুলোকে সামনে নিয়ে আসতে হবে এই কারণে যে এই খেলাগুলো যেন হারিয়ে না যায়। কাজই আমাদের ছেলেমেয়ে সবাইকে নিয়েই আপনারা এই উদ্যোগটা নেবেন, সেটাই আমি চাই।’

খেলাধুলার মধ্যদিয়ে আমাদের ছেলেমেয়েরা যাতে মেধা বিকাশের সুযোগ লাভ করতে পারে, সে আশাবাদ ব্যক্ত করে সরকারপ্রধান বলেন, সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দিয়েছিল, বাংলাদেশ আজকে ডিজিটাল হয়েছে। ২০৪১ সালের বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। আজকের যে শিশু-কিশোর তরুণ এরাই হবে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার সৈনিক, যারা খেলাধুলার পাশাপাশি লেখাপড়া এবং সবদিক থেকেই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত স্মার্ট সোনার বাংলাদেশ আমরা ইনশাআল্লাহ গড়ে তুলব, যে স্বপ্ন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব দেখেছিলেন।’

রাজশাহী প্রান্ত থেকে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এবং রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের ক্রীড়াঙ্গনের উন্নয়নে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন এবং দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই শীতকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার প্রচলন করেছিলেন। আজকে আমাদের ছেলেমেয়েরা দেশের সীমানা পেরিয়ে বিদেশে খেলাধুলায় ভালো সম্মান অর্জন করছে, যেটা স্বাধীনতার পর পরই শুরু হয়েছিল।’

তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ওই সময় রাশিয়া ভারত এবং ভিয়েতনামে পর্যন্ত আমাদের যুব টিম পাঠিয়েছিলেন। তিনি যুবকদের বিভিন্ন যুব উন্নয়ন কর্মক্রম এবং যুব উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করতে পাঠাতেন। খেলাধুলাকে আমাদের সামনের দিকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তিনি এজন্য উন্নত প্রশিক্ষণের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘কাজেই উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য ভালো প্রশিক্ষক তৈরি করাটা একান্তভাবে দরকার। আমরা প্রত্যেকটা বিভাগে, আটটি বিভাগে আটটি ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিকেএসপি গড়ে তুলব। যেখানে ছোটবেলা থেকেই আমাদের ছেলেমেয়েরা খেলাধুলায় পারদর্শিতা অর্জন করতে পারবে।’ এ সময় ভারতকে হারিয়ে আগেই ফাইনাল নিশ্চিত করা সাফ অনূর্ধ্ব ১৯ নারী ফুটবলে গতকাল ভুটানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের নারীদের ৪-০ গোলে জয় লাভের প্রসঙ্গ টেনে আনেন তিনি।

তিনি বলেন, কাজেই ফুটবলে কিন্তু আমাদের মেয়েরা খুবই ভালো করছে। আর খেলাধুলার দিক থেকেও মেয়েরা একটু বেশি এগিয়ে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। তবে ছেলেরাও পিছিয়ে নেই, তারাও আরো এগিয়ে যাবে হয়তো অংশগ্রহণ কম হতে পারে। কিন্তু ভবিষ্যতে আর কম হবে না। কাজেই প্রত্যেক খেলাধুলার জন্য আমাদের ছেলেমেয়েদের ছোটবেলা থেকেই যদি আমরা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারি তাহলে তারা আরো দক্ষতার পরিচয় দিতে পারবে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার পরিবার ক্রীড়াপ্রেমী, কারণ তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যই খেলাধুলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং আছেন।

তিনি বলেন, তার বাবা ও দাদা ফুটবলার ছিলেন, তার তিন ভাই শেখ কামাল ও শেখ জামাল এবং শেখ রাসেল খেলাধুলায় জড়িত ছিলেন। শেখ কামাল ও শেখ জামালের স্ত্রীরাও খেলাধুলায় জড়িত ছিল। তাদের নাতি-নাতনিরা খেলাধুলায় জড়িত।

তিনি বলেন, ‘খেলাধুলার মধ্যদিয়ে শরীর চর্চা হয়, এই খেলাধুলার মধ্যেদিয়ে বাচ্চাদের মধ্যে ছোটবেলা থেকে একটা ঐক্যের বন্ধন সৃষ্টি হয়, প্রতিযোগিতামূলক মনোভাবের পাশাপাশি বন্ধুত্বসুলভ একটি পরিবেশ সৃষ্টি হয় অর্থাৎ স্পোর্টসম্যান স্পিরিটটা গড়ে ওঠে। সেজন্য আমি মনে করি, খেলাধুলার দিকে আমাদের আরো দৃষ্টি দেয়া উচিত। তাই আমরা সরকার গঠন করার পর থেকেই এই খেলাধুলার দিকে আরো বেশি মনোযোগী হয়েছি। যে কারণে আমরা প্রাইমারি স্কুলে ছেলে এবং মেয়েদের বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট এবং ছেলেদের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট দিয়ে শুরু করি পাশাপাশি আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতা যেমন শুরু হয়েছে আমি বলব, আমাদের শিক্ষামন্ত্রী মাধ্যমিক পর্যায়ে প্রতিযোগিতার কথা বলেছেন এবং আমি নিজেও এটাকে আন্তরিকতার সঙ্গে সমর্থন করি। মাধ্যমিক পর্যায়ে এই প্রতিযোগিতা সেটা শুধু ফুটবল এবং ক্রিকেটই না, সব ধরনের স্পোর্টস যে যে খেলাগুলো রাখা দরকার, সেগুলোকে অন্তঃর্ভুক্ত করতে হবে।’ আন্তঃস্কুল, আন্তঃকলেজ ও আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতার পরিবেশ গড়ে তোলার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘তাহলে এই খেলাধুলার মধ্যদিয়ে আমাদের ছেলেমেয়েদের যেমন শরীর চর্চা হবে, মন-মানসিকতা আরো সুন্দরভাবে গড়ে উঠবে এবং সমাজকে ও দেশের মানুষকে ভালোবাসতে শিখবে আর পরিবারের জন্য এবং দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনতে পারবে।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত