ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ অধিবেশন

কাঙ্ক্ষিত সক্রিয় পর্যায়ে নেই বিরোধী ও স্বতন্ত্র এমপিরা

কাঙ্ক্ষিত সক্রিয় পর্যায়ে নেই বিরোধী ও স্বতন্ত্র এমপিরা

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর নতুন সংসদে জাতীয় পার্টি (জাপা) এবং স্বতন্ত্র এমপিরা খুব একটা সক্রিয়তা দেখাচ্ছে না। আগের সংসদের মতো এবারও বিরোধী দলের তেমন একটা তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। জাপার ১১ জন সংসদ সদস্য বিরোধী দলের আসনে বসেছেন। অধিবেশন চলাকালে তাদের মধ্যে তেমন একটা সক্রিয়তা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। অন্যদিকে ৬২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগের হওয়ায় তারাও সংসদে বিরোধী দলের মতো বক্তব্যে দিচ্ছেন না।

সূত্র জানায়, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের নেতা। সংসদে তাদের নিয়ন্ত্রণ থাকছে ক্ষমতাসীন দলের কাছে। সে কারণে স্বতন্ত্র সদস্যরা নিজেরা যে স্বাধীনভাবে অবস্থান নেবেন, সেটাও অনেকটা সম্ভব হচ্ছে না। সংরক্ষিত নারী আসনের জন্য স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের যে কোটা আছে, তারও মনোনয়ন দেবে আওয়ামী লীগ।

স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের নিয়ে বৈঠকে করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবশ্য বলেছেন, আওয়ামী লীগের দলীয় ও স্বতন্ত্র সব সংসদ সদস্যই তার। একটা ডান হাত, অন্যটা বাঁ হাত।

আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, তাদের চিন্তাও একই রকম। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদেরও বেশির ভাগ এমনি মনোভাব পোষণ করেন। কারণ, তারা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে থেকে দলের কৌশল অনুযায়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছেন। তারা দলেই বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থান ধরে রেখে আরো ভালো করতে চাইবেন। এমনটা জানিয়েছেন জেলা পর্যায়ে আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা দুজন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য।

এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদে ৫০টি সংরক্ষিত আসনের মধ্যে ৪৮টিই এবার যাচ্ছে আওয়ামী লীগের ভাগে। সংসদে নৌকা প্রতীকে জয় পাওয়া ২২৫ এমপির হিসেবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী আনুপাতিক হারে নিজেরা পচ্ছে ৩৮টি সংরক্ষিত আসন। ৬২ স্বতন্ত্র এমপির সঙ্গে মতৈক্য হওয়ায় তাদের ভাগের ১০ আসনেও আওয়ামী লীগই প্রার্থী দেবে। বাকি দুটি সংরক্ষিত আসন পাচ্ছে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি।

১৪ দলীয় শরিকদের জোটবদ্ধ করার এবং স্বতন্ত্রদের সমর্থনের চিঠি গত বুধবার নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলটির প্রতিনিধি দলের প্রধান হুইপ স্বপন বলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের স্বতন্ত্র ৬২ জন সংসদ সদস্য সমর্থন দেবেন। সেই সমর্থনসূচক আলাদা আালাদা চিঠি তাদের স্বাক্ষরসহ আওয়ামী লীগের মাধ্যমে সন্নিবেশিত করে ইসি সচিবের কাছে জমা দিয়েছি। কমিশন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।

সরকারে থাকতে আগ্রহী বরিশাল-৪ (মেহেন্দীগঞ্জ-হিজলা) আসনের টানা তিনবারের এমপি পঙ্কজ নাথ। তিনি বলেন, আমরা আওয়ামী লীগ অনুমোদিত স্বতন্ত্র এমপি। আওয়ামী লীগের উন্নয়নের সহযোগী হিসেবে সংসদে কাজ করব। সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত জনস্বার্থবিরোধী হলে কী করবেন প্রশ্নে তিনি বলেন, অবস্থা বুঝে তখন সিদ্ধান্ত হবে। যতটুকু পারমিট করে, ততটুকু বিরোধিতা করব।

ময়মনসিংহ-৮ (ঈশ্বরগঞ্জ) আসনের স্বতন্ত্র এমপি মাহমুদ হাসান সুমনও সরকারে থাকতে চান জানিয়ে বলেন, আওয়ামী লীগের কারও সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করিনি। জাপার প্রার্থী ছিল প্রতিদ্বন্দ্বী। আওয়ামী লীগের সঙ্গে থেকে উন্নয়নে কাজ করে যাব।

জানা যায়, এবার জয়ী ৬২ স্বতন্ত্র এমপির ৫৯ জন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত। দু’জন বাদে সবার দলীয় পদপদবি রয়েছে। নৌকা না পেয়ে তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। জাপার সঙ্গে সমঝোতার কারণে গাইবান্ধা-১ আসনের নৌকার প্রার্থী আফরোজা বারী প্রার্থিতা প্রত্যাহার করায় তার মেয়ে আবদুল্লাহ নাহিদ নিগার স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। আফরোজা বারী সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি; নাহিদ নিগারের দলীয় পদ নেই। আর পিরোজপুর-৩ আসনে জয়ী শামীম শাহনেওয়াজেরও আওয়ামী লীগে পদ নেই। তার ভাই উপজেলার সাধারণ সম্পাদক আশরাফুর রহমান মনোনয়ন পেয়েছিলেন। জাপাকে আসন ছাড়ায় নৌকা হারান। শামীম শাহনেওয়াজ স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে এমপি হয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ্? এই সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকা নিয়ে বলেন, সংসদে বিরোধী দল দেখছি না। কারণ, জাপাকে বিরোধী দল হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও তারা ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সমঝোতার আসনে ভোট করে জিতে এসেছে। আসন সমঝোতার সংসদের যে অবয়ব দাঁড়িয়েছে, তাতে জাপার পক্ষে সত্যিকারের বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করা সম্ভব নয়। সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক এম সাখাওয়াত হোসেন মনে বলেন, কোনো সরকারই সংসদকে জবাবদিহিমূলক করার সদিচ্ছা দেখায়নি। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি যখন বিরোধী দলের আসনে বসেছে, তখনো সংসদে জবাবদিহি নিশ্চিত করা যায়নি। ফলে এখন একপক্ষীয় সংসদে বিরোধী দলের নামে যারা থাকছে, তারা কার্যকর ভূমিকা রাখবে, এ নিয়ে তার সন্দেহ রয়েছে।

গত একাদশ জাতীয় সংসদের সঙ্গে তুলনা করলে ২০১৮ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত ওই সংসদে বিএনপির অন্তত পাঁচজন সংসদ সদস্য ছিলেন। ওই নির্বাচন নিয়ে অনেক প্রশ্ন থাকলেও বিএনপির পাঁচজন সদস্যই সংসদে যোগ দিয়েছিলেন। সরকারবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত বছরের ডিসেম্বরে বিএনপি সদস্যরা সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন। এর আগ পর্যন্ত তারা সংসদে সোচ্চার ছিলেন। গত সংসদে ২২টি আসন নিয়ে জাতীয় পার্টিই ছিল বিরোধী দলের আসনে। তখন তারা বিরোধী দল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল। এবার সংসদেই নেই বিএনপি। এর আগে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদের শাসনামলেও চতুর্থ সংসদে বিরোধী দলের ক্ষেত্রে ‘গৃহপালিত’ বিশেষণ জুটেছিল। ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ সেই সংসদের নির্বাচন হয়েছিল। আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ওই নির্বাচন বর্জন করেছিল। নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল মাত্র ছয়টি দল। জাতীয় পার্টি ২৫২টি আসন পেয়ে সংসদ বসেছিল। তখন সংসদ নেতা হয়েছিলেন মওদুদ আহমদ। আ স ম আব্দুর রবের নেতৃত্বে জাসদের একাংশ ও বিভিন্ন ছোট ছোট দল ১৮টি আসন পেয়েছিল। এই দলগুলোর সমন্বয়ে সম্মিলিত বিরোধী দলের নেতা হয়েছিলেন আ স ম আব্দুর রব। চতুর্থ সংসদের এই বিরোধী দল তখন ‘গৃহপালিত’ বিশেষণ পেয়েছিল। ২১ বছর পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে ১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে। সেই সরকারে আ স ম আব্দুর রবকে নৌপরিবহনমন্ত্রী করা হয়েছিল। কারণ, নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ১৪৬টি আসন। আর বিএনপি ১১৬টি, জেনারেল এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি ৩২টি আসন এবং জাসদের একাংশের নেতা আ স ম আব্দুর রব ১টি আসন পেয়েছিলেন। তখন আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টি ও জাসদের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করেছিল। সেই সরকারে জাতীয় পার্টির আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে করা হয়েছিল যোগাযোগ মন্ত্রী।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত