ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পাকিস্তানে নির্বাচনে ভোট

বোমা হামলা ও গুলির ঘটনায় নিহত পাঁচ

বোমা হামলা ও গুলির ঘটনায় নিহত পাঁচ

পাকিস্তানে গতকালের জাতীয় নির্বাচন চলাকালে বোমা ও বন্দুক হামলায় কমপক্ষে পাঁচজন নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। দেশটির খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে এসব ঘটনা ঘটেছে। খাইবার পাখতুনখাওয়ার ডেরা ইসমাইল খান জেলার পুলিশপ্রধান রউফ কাইসরানি জানিয়েছেন, কুলাচি এলাকায় পুলিশের একটি টহল দলকে লক্ষ্য করে গুলি ও বোমা হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এতে চার পুলিশ সদস্য নিহত হন। পরে কুলাচির প্রায় ৪০ কিলোমিটার উত্তরে ট্যাংক নামক শহরে নিরাপত্তা বাহিনীর একটি গাড়ি লক্ষ্য করে ছোড়া গুলিতে একজন নিহত হন। পাকিস্তানের মাকরান ডিভিশনের পুলিশ কমিশনার সাইদ আহমেদ উমরানি জানান, বেলুচিস্তান প্রদেশের বিভিন্ন জায়গায়তেও গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব ঘটনায় কেউ হতাহত হননি। এর আগের দিন বুধবার বেলুচিস্তান প্রদেশে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় পাকিস্তানজুড়ে নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ সৃষ্টি হয়। চার প্রদেশের মুখ্য সচিব ও পুলিশের মহাপরিদর্শকদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার সিকান্দার সুলতান রাজা। ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে নিরাপত্তা বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলো।

গতকাল সকালে ভোটগ্রহল শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশজুড়ে বিভিন্ন সড়কে ও ভোটকেন্দ্রে হাজার হাজার সৈন্য মোতায়েন করা হয়। একই সঙ্গে ইরান ও আফগানিস্তানের সঙ্গে পাকিস্তানের সীমান্ত সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

এছাড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পাকিস্তানজুড়ে সাময়িক স্থগিত রাখা হয়েছে ইন্টারনেট সংযোগ ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থাও। এরপরও খাইবার পাখতুনখোয়ায় বোমা হামলা ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটলো।

এছাড়া উত্তর ওয়াজিরিস্তানের কিছু ভোটকেন্দ্র পাকিস্তানি তালেবানরা দখলে নিয়েছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয় প্রার্থীরা। দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের এই এলাকার নির্বাচনি প্রার্থী মহসিন দাওয়ার পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের (ইসিপি) কাছে লেখা চিঠিতে জানিয়েছেন, তার নির্বাচনি এলাকার কিছু ভোটকেন্দ্র স্থানীয় তালেবান জঙ্গিরা দখলে নিয়েছে; যারা ভোটার ও স্থানীয়দের ভোটের আগে থেকেই হুমকি দিয়ে আসছিল। তবে এই অভিযোগের বিষয়ে দেশটির নির্বাচন কমিশন বা নিরাপত্তা বাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। স্থানীয় সময় সকাল ৮টা থেকে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা চলে বিকাল ৫টা পর্যন্ত।

দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পিটিআই নেতা ইমরান খানকে কয়েকটি মামলায় কারাবন্দি করে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। ইমরান খান একাধিক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে বন্দি রয়েছেন। নির্বাচনি প্রচারণাকালে পাকিস্তানের কিছু এলাকায় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। বুধবার পৃথক বোমা ও গ্রেনেড হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হয়।

এ কারণে ভোট চলাকালে আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় দেশজুড়ে মোবাইল টেলিফোন সেবা বন্ধ রাখা হয়। মোতায়েন করা হয় ৬ লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি সেনা, আধা সামরিক ও পুলিশ সদস্য।

এদিকে নির্বাচনের আগের রাজনৈতিক অস্থিরতা, ইমরান খানকে সাজা প্রদান, তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) নেতাদের আদালতের বারান্দায় ছোটাছুটি ও দলীয় প্রতীক কেড়ে নেয়াসহ এমন নানা কারণে এবারের নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম হবে বলে আশঙ্কা করা হয়। দেশটিতে মোট ভোটারের সংখ্যা ১২ কোটি ৮০ লাখ। এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে মোট আসন ৩৪২টি। এর মধ্যে ২৭২ আসনে সরাসরি ভোট হয়।

এবারের নির্বাচনে এগিয়ে আছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) ও বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)। জমিয়ত উলেমা-ই-ইসলাম ফজলের (জেইউআই-এফ) নির্দিষ্ট ভোটব্যাংক রয়েছে। পিটিআইয়ের প্রধান ইমরান খানসহ শীর্ষস্থানীয় অনেক নেতা কারাবন্দি। দলীয় প্রতীকে ভোট করতে পারছে না পিটিআই।

এই পরিস্থিতি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের লড়াইয়ে আছেন দলটির নেতারা। ভোটে হস্তক্ষেপ হতে পারে, সেটা মাথায় রেখেই কৌশল সাজানোর কথাও জানান পিটিআই কর্মী-সমর্থকরা। বিশ্লেষকরা বলেছেন, যিনিই জয়ী হয়ে আসুক তাকে বিপর্যস্ত অর্থনীতিসহ গভীর বিভক্তি মোকাবিলা করতে হবে।

সূত্র : এএফপি, দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত