ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নয়াদিল্লিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী

বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও দেশের গণতন্ত্র শক্তিশালী হয়েছে

বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও দেশের গণতন্ত্র শক্তিশালী হয়েছে

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নস্যাৎ করার জন্য বিএনপি এবং তার চরমপন্থি জামায়াতে ইসলামী মিত্রদের ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও বাংলাদেশে গণতন্ত্র শক্তিশালী হয়েছে। তিনি বলেন ‘বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে প্রতিনিয়ত ব্যাহত করার চেষ্টা করছিল। তারা সহিংসতার আশ্রয় নিয়ে ২০১৪, ২০১৮ এবং তারপর ২০২৪ সালের নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু, জনগণ তাদের জনবিরোধী কার্যকলাপ প্রত্যাখ্যান করায় তারা সফল হতে পারেনি।’

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফরেন করেসপন্ডেন্টস ক্লাব অব সাউথ এশিয়া এ (এফসিসি, সাউথ এশিয়া) সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে মন্ত্রী এ মন্তব্য করেন। ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. মুস্তাফিজুর রহমান এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। এফসিসি সভাপতি ও প্রবীণ সাংবাদিক ভেঙ্কট নারায়ণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন এবং ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ নন্দ সূচনা বক্তব্য রাখেন। এ সময় বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপিকে ‘রাস্তার বিরোধী’ হিসেবে উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচন বানচালের জন্য বিএনপি ও তার সহযোগীরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ (সরকারি) স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। এমনকি, তারা প্রধান বিচারপতির বাসভবন এবং গণপরিবহনে অগ্নিসংযোগ করেছে, যার ফলে দুইজন নিহত হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, তাদের ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এমনকি ইউরোপের কিছু দেশে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বৈশ্বিক পরিপ্রেক্ষিতে ভোটারদের উপস্থিতির উপস্থিতি ভালো ছিল।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেহেতু বাংলাদেশ একটি মুক্ত সমাজ সেহেতু সবার স্বাধীনভাবে কথা বলার অধিকার রয়েছে। এই সুযোগ নিয়ে কিছু মহল ভারত, চীন এমনকি আওয়ামী লীগবিরোধী স্লোগান দিতে পারে। কিন্তু, এই ট্যাবলেট এখন আর কাজ করে না। ‘ধর্মান্ধরা নির্বাচনের আগে বাংলাদেশে ভারতবিরোধী তাস খেলেছে।’

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমলে দুই বন্ধুপ্রতীম দেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালে দেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অনেক ভারতীয় সাধারণ জনগণ এবং সৈন্যরা তাদের জীবন উৎসর্গ করায় ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক রক্তের বন্ধনে আবদ্ধ। কাজেই, এই সম্পকর্কে অন্য কোনো দেশের সঙ্গে তুলনা করা যায় না।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারতের সঙ্গে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে রাজি হয়েছিল, কিন্তু রাজ্য সরকার এতে আপত্তি করে। তিনি বলেন, ‘যেহেতু আপনারা (ভারত) মার্চ বা এপ্রিল বা মে মাসে নির্বাচন করছেন, তাই নির্বাচনের পর আমরা আবার সরকারের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাব এবং আমি আশা করি যে আমরা এর একটি সমাধান খুঁজে পাব।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান বলেন, বাংলাদেশ একটি বহুত্ববাদী সমাজ হওয়ায় আমরা গণতন্ত্রের মূল্যবোধকে সমুন্নত রাখি। ‘অবশ্যই, বাংলাদেশ একটি একদলীয় রাষ্ট্র নয়, এটি একটি বহুদলীয় গণতান্ত্রিক দেশ। গত নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৪৪টির মধ্যে ২৯টি রাজনৈতিক দল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল।’

সীমান্তে হত্যার বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারতীয় ভূখণ্ডে একজন বিজিবি সদস্যের লাশ পাওয়া যাওয়ার পর তারা বিষয়টি ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরেছেন। আমরা সীমান্তে হত্যা বন্ধের দাবি জানিয়েছিলাম এবং ভারতীয় পক্ষ এর জন্য ক্ষমা চেয়েছে এবং ঘটনাটি উদ্ঘাটনের জন্য তদন্ত চলছে। চীন সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যদিও চীন আমাদের পাশের প্রতিবেশী নয়, তবে এটি আমাদের দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী এবং চীনের সাথে আমাদের খুব ভালো সম্পর্ক রয়েছে কারণ, দেশটি বাংলাদেশের একটি প্রধান উন্নয়ন সহযোগী।

এছাড়া তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের ভালো সম্পর্ক রয়েছে এবং আমরা আমাদের জনগণের স্বার্থে ভবিষ্যতে আমাদের সম্পর্ক আরও জোরদার করার অপেক্ষায় রয়েছি। এরআগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত এক দশকে দেশের আর্থ-সামাজিক খাতে বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা উল্লেখ করেন।

ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রীর কাছে যে আশ্বাস পেলেন হাছান মাহমুদ : ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। গতকাল দিল্লিতে এই বৈঠক হয়। সেখানে ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য তার দেশ ‘প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’।

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ ঠিক রাখারও আশ্বাস দেন তিনি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, হাছান মাহমুদ বৈঠকে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার নতুন যাত্রা শুরু করেছে। এর অন্যতম অগ্রাধিকার হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকা। রমজান মাসে ভারত থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ থাকার অনুরোধ করেন মন্ত্রী।

পীযূষ গোয়েল জানান, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য ভারত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহের জন্য বাংলাদেশের অনুরোধ রক্ষা করার বিষয়েও আশ্বস্ত করেন ভারতীয় মন্ত্রী। হাছান মাহমুদ জানান, রমজানের আগে ভারত থেকে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ এবং এক লাখ টন চিনি বাংলাদেশে আনার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনার জন্য নিয়মিত বাণিজ্যমন্ত্রী ও কর্মকর্তা পর্যায়ের বৈঠকের বিষয়টি নিয়েও দুই মন্ত্রী আলোচনা করেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত