ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিশেষ বর্ধিত সভায় শেখ হাসিনা

নির্বাচন উন্মুক্ত না হলে গণতন্ত্র কেড়ে নেয়া হতো

অবৈধ মজুতদারি-চাঁদাবাজি বন্ধের নির্দেশ
নির্বাচন উন্মুক্ত না হলে গণতন্ত্র কেড়ে নেয়া হতো

সকলের জন্য সংসদ নির্বাচন উন্মুক্ত না হলে দেশের গণতন্ত্র কেড়ে নেয়া হতো বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সকালে গণভবনে দলটির বিশেষ বর্ধিত সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘নির্বাচন বানচালের জন্য অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছিল। প্রার্থিতা উন্মুক্ত না থাকলে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পাশাপাশি দেশের গণতন্ত্রকে হরণ করা হতো। বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদার অর্জন নস্যাৎ হয়ে যেত। নির্বাচন নিয়ে বারবার চক্রান্ত হয়েছে। সব চক্রান্ত মোকাবিলা করে আমরা ক্ষমতায় এসেছি। ২০১৪ সালে নির্বাচন ঠেকাতে চেষ্টা করেছে কিন্তু পারেনি। ২০১৮ সালেও এসে আবার পরাজয় জেনে সরে গেছে। ভোটাররা যেন কেন্দ্রে না আসেন, নির্বাচনটা যেন অবাধ না হয়, নির্বাচনটা যেন হতে না পারে বা নির্বাচন হওয়ার পরে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলবে- এই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি... কাজেই নিষেধাজ্ঞা দাও, ওইটা দাও। আমাদের যখন বলেছিল, নিষেধাজ্ঞা দেবে। তখন আমিও বলে দিয়েছি, দরকার হলে আমরাও নিষেধাজ্ঞা দেব, আমারও দিতে পারি, আমি নিষেধাজ্ঞার রীতিনীতি জানি বলেই বলেছি।’

তিনি বলেন, ‘দ্বাদশ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ হয়েছে। যারা বলে নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ হয়নি তাদের সুস্পষ্টভাবে বলতে হবে, কী কী ক্ষেত্র দেখে বলছে; নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি, এটা তাদের বলতে হবে। সেটা বলে না, বলেই যাচ্ছে নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ হয় নাই। কিছু দেশীয়-আন্তর্জাতিক পর্যায় হতে এ ধরনের কথা বলা হয়। যে দেশই বলুক, তাদের কাছে আমার প্রশ্ন- কীভাবে, কোথায় সমস্যা? তাদের বলতে হবে। পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশে নির্বাচন হয়েছে, সেটা এখনো তাদের বিরোধীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। এমনকি নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় খুনোখুনি হয়ে গেছে। কিন্তু বাংলাদেশে নির্বাচনটা অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবে হয়েছে। জনপ্রশাসন, সশস্ত্র বাহিনী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করেছে।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘নির্বাচন যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে এবার উন্মুক্ত করে দিয়েছি। কারণ, অন্তত প্রতিপক্ষ থাকুক, নির্বাচনে প্রতিযোগিতা হোক, ভোটার আসবে, নিজেদের পছন্দমতো ভোট দেবে, যাকে খুশি তাকে দেবে, সেই অধিকারটুকু জনগণ পাক। সেইভাবে নির্বাচন করেছি বলেই আজকে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারছে না।’

নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কারণে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সৃষ্ট দূরত্বে বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘এবারের নির্বাচন স্বতন্ত্র ও দলীয়ভাবে করতে গিয়ে অনেকের মন কষাকষি, নানারকম কিছু হয়ে গেছে। যেটা হয়ে গেছে, সেটা হয়ে গেছে, এখন ভুলে যেতে হবে। সবাই এক হয়ে কাজ করতে হবে। জনগণের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখে কাজ করতে হবে। যদি কোথাও কোনো সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে সেটা সমাধানের জন্য আমরা আছি, কেন্দ্রীয় কমিটি করবে। কিন্তু নিজেদের মধ্যে কোনো আত্মঘাতী সংঘাত যেন না হয়। সেদিকে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। দোষারোপ করার অর্থ হয় না। সংঘাতে যিনি জড়িত থাকবেন, সে যে-ই হোক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

উপজেলা নির্বাচন উন্মুক্ত রাখার বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৫ বছর ক্ষমতায় সাধারণ মানুষের জন্য কতটুকু কাজ করেছেন, কারা করতে পারেনি সেটাও যাচাই-বাছাই হয়ে যাবে। এর মধ্যদিয়ে। জনগণের কাছে কার গ্রহণযোগ্যতা কেমন, সেটাই দেখব। কোনো রকম সংঘাত চাই না।’

জনগণের ভোটে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হবে জেনেই বিএনপি নির্বাচন বানচাল করতে চেয়েছিল বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেই সঙ্গে তারা কিছু প্রভু জুগিয়েছিল। তাদের নির্দেশ মতো আন্দোলন করে। এখনো কিছু কিছু লম্ফঝম্প করছে, করতে পারে কিন্তু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এ দেশের জনগণের সংগঠন, এটা তাদের মনে রাখতে হবে। আওয়ামী লীগ ভেসে আসেনি, কিংবা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী জেনারেল পকেট থেকে এ সংগঠন বের হয়নি। এটা মাটি-মানুষের ভেতর থেকে সংগঠন বেড়ে উঠেছে। মানুষই এ সংগঠনের বড় শক্তি।’

বিশেষ বর্ধিত সভাকে জাতীয় নির্বাচনের পর দলীয় নেতাদের ‘মিলন মেলা’ হিসেবে বর্ণনা করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। এতে তৃণমূলের নেতাদের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র, আগামী উপজেলা নির্বাচন ও ‘দ্রব্যমূল্য কমানো’র বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেন তিনি। দ্রব্যমূল্য কমাতে সবাইকে উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বিশেষ করে পরিবহনের ক্ষেত্রে বা পাইকারি বাজারে, অথবা মজুতদারি, এসব জায়গায় চাঁদাবাজি ও অবৈধ মজুতদারি বন্ধ করতে হবে। মাল এলে পাইকারি বাজারে চাঁদাবাজি, চলার পথের চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। আপনারা এখানে আছেন বিভিন্ন এলাকার প্রতিনিধি, এখানে আপনাদের দৃষ্টি দিতে হবে। কৃষক যাতে ন্যায্য মূল্য পায়, সেটার দিকে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা দেন তিনি।

বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মনে রাখতে হবে, যে অর্থ আমরা ব্যয় করি তার অর্ধেক দামে বিদ্যুৎ দিচ্ছি। কাজেই এখন থেকে যে যত বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করবে তাকে তত বেশি দাম দিতে হবে। আমরা সেভাবে ব্যবস্থা নিচ্ছি। আর যারা একেবারে পারবেন না, তাদের জন্য ছাড় আছে। কিন্তু অতিরিক্ত বিদ্যুৎ যারা ব্যয় করবেন, তাদের অতিরিক্ত মূল্য দিতে হবে।’

বিশেষ বর্ধিত সভায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছাড়াও উপদেষ্টা পরিষদ, জাতীয় পরিষদ, মহানগর, জেলা, উপজেলা ও পৌরসভার নেতা, দলীয় ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য, সিটি ও পৌর মেয়র, জেলা ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের পাশাপাশি সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনগুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত