ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস

শাহবাগে ২০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির প্রত্যাশায় ব্যবসায়ীরা

শাহবাগে ২০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির প্রত্যাশায় ব্যবসায়ীরা

আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। একই দিনে বসন্তের শুরু, পহেলা ফাল্গুন। বছরের অন্যান্য সময়ের চাইতে এ সময়টাতে ভালো ব্যবসার আশা করেন ব্যবসায়ীরা। দিবসটিকে কেন্দ্র করে বাড়তি প্রস্তুতিও নিয়ে রাখেন অনেকে। ক্রেতার চাপ সামলাতে অনেক দোকানি দুই-তিন দিনের জন্য নেন বাড়তি কর্মচারী। ফুল মার্কেটে বছরের অন্য সময়ের চেয়ে এখন ক্রেতা সমাগম কিছুটা বেশি। কারণ, হিসেবে বিক্রেতারা বলেছেন, এ সময় বিবাহসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান বেশি হয়ে থাকে। তাই ক্রেতার সংখ্যাও বেশি। তবে ভালোবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে বাড়তি লাভের আশা দেখছেন ব্যবসায়ীরা। সাধারণ একটি দিনের তুলনায় এদিন কয়েকগুণ বেশি বিক্রির প্রত্যাশা তাদের।

শাহবাগে ফুলের দুটি মার্কেট রয়েছে। একটি খুচরা ফুল বিক্রির মার্কেট। আরেকটি পাইকারি মার্কেট। খুচরা মার্কেটে মোট দোকান ৫০টি। পাইকারি ফুলের মার্কেট সরগরম থাকে রাত ১টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত। দিনের বেলা এ মার্কেটে তেমন ক্রেতা-বিক্রেতা থাকেন না। মূলত ঢাকা শহরের ক্ষুদ্র ফুল ব্যবসায়ীরা এ পাইকারি মার্কেট থেকে ফুল কিনে সেগুলো দোকানে বিক্রি করেন। ঢাকার আশপাশের অনেক কৃষক সরাসরি এ মার্কেটে এসে ফুল বিক্রি করে থাকেন। সব মিলিয়ে প্রতি রাতে কয়েকশ’ বিক্রেতা এখানে ফুল বিক্রি করতে বসেন। এসব ফুল মার্কেটের ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভালোবাসা দিবসে বাড়তি বিক্রি হবে এ আশায় তারা বাগানে আগেভাগেই ফুলের অর্ডার দিয়ে রেখেছেন।

শাহবাগের এ ফুল মার্কেটের দোকানিরা জানান এখন দিনে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকার ফুল বিক্রি হয়। বছরের অন্য সময়ে বিক্রি মোটামুটি থাকে। তবে এখন বিক্রি ভালো। আসছে ভালোবাসা দিবসে ভালো বিক্রি হবে বলে আশা করছি। সেদিন ২ লাখ টাকার ফুল বিক্রি করতে পারব। এখন প্রতিটি গোলাপের দাম ২০ টাকা, ভালোবাসা দিবসে এটার দাম হবে সর্বনিম্ন ৫০ থেকে ৬০ টাকা। তারা জানান, ক্রেতার চাহিদা মেটাতে বাগানে অগ্রীম ফুলের অর্ডার দিয়ে রেখেছি। এখন ভালো মানের গোলাপ ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভালোবাসা দিবসে এটা ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হবে। গোলাপি রঙের বিদেশি গোলাপ এখন প্রতি পিস ১০০ টাকায় বিক্রি করছি। ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৫০ টাকার বেশি দামে বিক্রি হবে। বাগান মালিকরাও দাম বাড়িয়েছে। আগের চাইতে বেশি দামে অর্ডার করতে হচ্ছে। তারা বলেন, অন্য বছরের চাইতে এবার ব্যবসা ভালো হবে, রাজনৈতিক অস্থিরতা নেই। এজন্য বিক্রি ভালো হবে আশা করছি। অন্য দিনের চাইতে বিশেষ দিবসে কয়েকগুণ বেশি বিক্রি হয়। ক্রেতা সামাল দিতে দোকানে আমরা অতিরিক্ত কর্মচারী রাখি।

শাহবাগ বটতলা ক্ষুদ্র ফুল ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ জানান এবার বাগান মালিকরা ফুলের দাম বাড়িয়ে রেখেছে। তাই আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হবে। আমাদের টার্গেট প্রায় ১৫ কোটি টাকার ফুল বিক্রি করা। দেখা যাক কী হয়। আশা করি এবার ভালো ব্যবসা হবে। শাহবাগে অবস্থিত পাইকারি ফুল মার্কেটে ঢাকা ফুল ব্যবসায়ী কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি বাবুল প্রসাদ জানান এমনিতেই প্রতিদিন আমাদের এখানে ৩৫ থেকে ৪০ লাখ টাকার ফুল পাইকারি বিক্রি হয়। ১৪ ফেব্রুয়ারিতে ৫ কোটি টাকার বেশি ফুল বিক্রি হবে বলে আশা করছি। আমাদের এ মার্কেটে যশোর, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, রংপুর, সিলেট, কক্সবাজারসহ মোট ২৪টি জেলা থেকে ফুল আসে। অনেকেই আগে থেকে ফুলের অর্ডার করে রাখে। যেগুলো কম উৎপাদন হয় এবং চাহিদা বেশি, সেগুলোর অর্ডার বেশি থাকে। অনেক চাষি সরাসরি এখানে এসে পাইকারি মূল্যে ফুল বিক্রি করে।

পাঁচ দিবসে শত কোটি টাকার ফুল বাণিজ্যের প্রস্তুতি নিচ্ছে গদখালী

ফেব্রুয়ারি-মার্চের পাঁচ দিবস ঘিরে শত কোটি টাকার ফুল বাণিজ্যের স্বপ্ন বুনছেন ফুলের রাজধানীখ্যাত যশোরের গদখালীর চাষিরা। ফেব্রুয়ারিতে বসন্তবরণ, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এবং মার্চে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও মহান স্বাধীনতা দিবস ঘিরে গোটা দেশেই থাকে অঢেল ফুলের চাহিদা, যার সিংহভাগ পূরণ করে যশোরের গদখালী। কৃষি বিভাগ বলেছে, ফেব্রুয়ারি-মার্চের পাঁচ দিবস ঘিরে গদখালী এলাকা থেকে শত কোটি টাকার ফুল সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়ার প্রস্তুতি রয়েছে। যদিও কৃষকদের প্রত্যাশা, ফেব্রুয়ারিতেই তারা শত কোটি টাকার ফুল বিক্রি করতে সক্ষম হবেন। এরই মধ্যে গোলাপ খেতের পচন রোগ থেকে কৃষক ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছেন। আর এবার গদখালীতে ফুলের দামও বেশি। এরই মধ্যে দরজায় কড়া নাড়তে শুরু করেছে বসন্তবরণ উৎসব। একই দিনে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস এবং সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সরস্বতী পূজা। এর পরই আসছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এই দিবসগুলো উদযাপনে ফুলের বিকল্প নেই। তাই ফুলের রাজধানীখ্যাত যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী-পানিসারা-হাড়িয়া অঞ্চলের ফুলচাষিরা নিচ্ছেন শেষ সময়ের প্রস্তুতি। ক্ষেতের ফুলগাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।

মূলত এই তিন দিবস ঘিরে জমে উঠতে শুরু করেছে গদখালী ফুলবাজার। অন্য সময় থেকে বেশি দামে ফুল বিক্রি হওয়ায় এ সময় ফুলগাছের বাড়তি যত্ন নেন কৃষকরা। সময় যত ঘনিয়ে আসছে, পাইকারি বাজারে ফুলের দামও তত বাড়ছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ফুলের দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। ফুলচাষের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সামনের এই তিন দিবসে অন্তত ১০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে। ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী, নাভারণ ও পানিসারা ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে রয়েছে নানা জাতের ফুল। এই অঞ্চলের কৃষকরা বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছেন গোলাপ, জারবেরা, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, গাঁদা, লিলিয়াম, জিপসি, চন্দ্রমল্লিকাসহ অন্তত ১১ ধরনের ফুল।

যশোর ফুল উৎপাদক ও বিপণন সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম জানান, সারা বছর ফুল বিক্রি হলেও মূলত বসন্তবরণ, ভালোবাসা দিবস আর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘিরে বেচাকেনা বেশি হয়। এ মৌসুমে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে বিশেষ করে গোলাপ ফুলের উৎপাদন কম হয়েছে। তবে আসন্ন তিন দিবস ঘিরে অন্তত শত কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে বলে আমরা আশা করছি।

যদিও কৃষি বিভাগ বলেছে, ফেব্রুয়ারি-মার্চের পাঁচ দিবস ঘিরে গদখালী এলাকা থেকে শত কোটি টাকার ফুল সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন কৃষকরা। ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুদ হোসেন জানান, ঝিকরগাছা উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নে ৬৩০ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হয়ে থাকে। এরই মধ্যে ফেব্রুয়ারিতে বসন্তবরণ, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এবং মার্চে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও মহান স্বাধীনতা দিবস ঘিরে ফুলের বাজার ধরার জন্য স্থানীয় ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এবার ফুলের আবাদ ভালো হয়েছে, বাজারে দামও ভালো। এ কারণে এই দুই মাসে এই এলাকা থেকে শত কোটি টাকার ফুল সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

এদিকে আসন্ন দিবসগুলোর বাজার ধরতে প্রতিদিন কাকডাকা ভোরেই চাষিরা বিভিন্ন যানবাহনে তাদের উৎপাদিত ফুল নিয়ে আসছেন ফুলের পাইকারি গদখালী বাজারে। ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাকে সরব হয়ে উঠছে ফুলবাজার। যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের দুই ধারে বিভিন্ন জাতের ফুলের পসরা সাজিয়ে বসছেন কৃষকরা। কেউ ভ্যান, কেউ সাইকেল, মোটরসাইকেল বা ঝুড়ির মধ্যে ফুল রেখে ঢাকা ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দরদামে ব্যস্ত। গত শুক্রবার গদখালি বাজারে প্রতিটি গোলাপ বিক্রি হয়েছে ১৪ থেকে ২০ টাকা দরে। এক সপ্তাহ আগে যা বিক্রি হয়েছে ১০ থেকে ১২ টাকায়। প্রতিপিস রজনীগন্ধা বিক্রি হয়েছে ১০ থেকে ১২ টাকায়, যা আগে ছিল ৮ থেকে ১০ টাকা। রঙিন গ্লাডিওলাস প্রতিটি মানভেদে বিক্রি হয়েছে ১২ থেকে ১৬ টাকা, যা আগে ছিল ৮ থেকে ১০ টাকা। জারবেরা বিক্রি হয়েছে ৮ থেকে ১০ টাকা। তবে কৃষক বলেছেন, এ বছর জারবেরার উৎপাদন বেশি হওয়ায় দাম অপরিবর্তিত আছে। ফুল বাঁধাইয়ের জন্য কামিনীর পাতা বিক্রি হয়েছে প্রতি আঁটি ২০ টাকায়। জিপসির আঁটি বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকায়, যা আগে ছিল ২০-২৫ টাকা। মালা গাঁথার জন্য চন্দ্রমল্লিকা বিক্রি হয়েছে প্রতি ১০০ ফুল ২০০ টাকা। গাঁদা ফুল বিক্রি হয়েছে প্রতি হাজার ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়, যা আগে ছিল ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। লিলিয়াম প্রতি পিস বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকা। দুই দিন আগেও যার দাম ছিল ১০০ টাকা। গদখালীর ফুল ব্যবসায়ী রনি আহমেদ বলেন, বাজারে গোলাপের খুবই সংকট। ভালোবাসা দিবসের আগের বাজারে ২৫ টাকায় ফুল পাওয়াও মুশকিল হয়ে যাবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত