ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শান্ত সীমান্ত, তবুও কমেনি উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা

শান্ত সীমান্ত, তবুও কমেনি উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা

মিয়ানমারের রাখাইনে টানা কয়েকদিনের চলমান সংঘর্ষ ও লড়াইয়ের আতঙ্ক, অস্থিরতা এবং উত্তেজনা পরিবেশের রেশ কেটেছে সীমান্তে। গতকাল রোববার সীমান্ত ছিল শান্ত। গুলি কিংবা মর্টারশেলের শব্দ শোনা যায়নি। ক্ষণিকের স্বস্তি ফিরলেও তবে কাটেনি আতঙ্ক সীমান্তবাসীর। যে কোনো সময় পরিস্থিতি বেগবান হতে পারে। ক্রমেই উত্তরাংশ হতে দক্ষিণের দিকে অগ্রসর হচ্ছে মিয়ানমারের বিদ্রোহী আরাকান আর্মি (এ.এ), রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন, আরাকান রোহিঙ্গা সকভেশন আর্মি (আরসা) ও অন্যান্য বিদ্রোহীদের সঙ্গে সেনাদের লড়াই। ওইসব দলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এএ’র টুয়ে সুমে নাইন, আরএসওর মাস্টার আয়ুব, কুকলিং, কলিম, জিয়াউর, মৌ মো, নুর, আরসার আতাউল্লাহ আবু আহমেদ জুনুনি, ওস্তাদ খালেদ, মৌলভী মোস্তাক, লাল মোহাম্মদ ও আকিজ, ফজুল কবির প্রকাশ আবু আনাস, মৌ. হামিদ হোসেন প্রকাশ শোয়াইবসহ অন্যরা বলে জানা গেছে। বুচিডংয়ের পুইমালি, চিনডং, কানডং, শীলকাটা, নাসেরপাড়া পেতুরপাড়া এলাকার বেশ কিছু রোহিঙ্গা এ পারে আসার চেষ্টা করছে। কিছু কিছু রোহিঙ্গা গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করছে বলে জানিয়েছেন রোহিঙ্গা নেতারা। কিছু রোহিঙ্গা এ পারে প্রবেশ করতে গিয়ে বিজিবির হাতে আটক হয়। পরে সে দেশে ফেরত পাঠায় পালংখালী, হোয়াইক্যং ও উনচিপ্রাং বিজিবি। এদিকে রোহিঙ্গাসহ দুষ্কৃতকারীদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে ও নাফ নদে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড সদস্যদের টহল জোরদার এবং যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে প্রস্তুত রয়েছে। বাড়ানো হয়েছে টহলদল। এদিকে টেকনাফের হেয়াইক্যং, হ্নীলা, উলুবনিয়া ও উখিয়ার ঘুমধুম, তুমব্রু সীমান্তে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গতকাল রাত থেকে সীমান্তের কোথাও গুলির শব্দ শোনা যায়নি। ফলে সীমান্তবাসীর মধ্যে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কাটেনি।

হোয়াইক্যং সীমান্তে বসবাসকারী মো. আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, গত শনিবার রাত হতে সীমান্তে গোলাগুলির শব্দ পায়নি। তবে যে কোনো সময় গোলাগুলি হতে পারে। মনে স্বস্তি ফিরলেও আতঙ্কে রয়েছি।

এদিকে উখিয়ার বালুখালি খালে অজ্ঞাত একটি লাশ ভাসছে। এ লাশ দেখতে লোকজন ভিড় হয়েছে। দুপুরের দিকে উখিয়ার বালুখালি খালে এ লাশ জোয়ারের পানিতে ভেসে আসে। বিষয়টি জানিয়েছেন স্থানীয় বালুখালি এলাকার মুদির দোকানদার মিসবাহ উদ্দিন। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সীমান্তের এপার-ওপারে অসংখ্য লাশ ভাসছে।

গতকাল সন্ধ্যায় উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শামীম হোসেন বলেন, বালুখালি ও ইনানী এলাকা থেকে দুইটি লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। সেই সঙ্গে এখন অবধি তাদের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। শনাক্তের চেষ্টা চলছে। তার তথ্য মতে, শনিবারও উখিয়ার রহমতের বিল সীমান্ত এলাকা থেকে আরো একটি লাশ উদ্ধার করা হয়।

তিনি আরো বলেন, অন্যান্য দিনের তুলনায় সীমান্ত পরিস্থিতি শান্ত ছিল। তবে মাঝেমধ্যে ওপার থেকে ফায়ারিংয়ের আওয়াজ ভেসে আসে। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ব্যাপারে তিনি বলেন, বিজিবির পাশাপাশি পুলিশ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে প্রস্তুত রয়েছে। অপরদিকে স্থবির হয়ে পড়েছে টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম। ফলে রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। মিয়ানমারের রাখাইনের মংডু ও আকিয়াবসহ বিভিন্ন নদী বন্দরের সঙ্গে টেকনাফ স্থলবন্দরের বাণিজ্যিক কার্যক্রম চলে। কিন্তু এখন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে টেকনাফ বন্দরের কার্যক্রম প্রায় বন্ধ। টেকনাফ বন্দরে মিয়ানমার থেকে আসে কাঠ, সুপারি, মাছ, আদা, হলুদ, মরিচ, পেঁয়াজ, শুঁটকি, ছোলা, ডাল, চাল, আচার। অপরদিকে টেকনাফ থেকে সেখানে যায় প্লাস্টিকসামগ্রী, তৈরি পোশাক, চিপস, অ্যালুমিনিয়াম সামগ্রী, ওষুধ, প্রসাধনী ও বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী।

টেকনাফ স্থলবন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, মিয়ানমারে সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কারণে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম একপ্রকার স্থবিরই বলা চলে। এখানকার লোকজন আতঙ্কে রয়েছেন। পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম. গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, পরিবেশ শান্ত রয়েছে। তবে সীমান্তে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থেকে গেছে। বিজিবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সীমান্ত টহল বাড়ানোর পাশাপাশি ৩৩০ জন মিয়ানমারের ৩৩০ পুলিশকে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।

সীমান্তে উদ্ধারকৃত মর্টারশেল দুটি নিষ্ক্রিয় করেছে সেনাবাহিনী : নাইক্ষংছড়ি তুমব্রু সীমান্ত থেকে উদ্ধার করা অবিস্ফোরিত দুটি মর্টারশেল নিষ্ক্রিয় করেছে সেনাবাহিনীর বোমা বিস্ফোরক টিমের সদস্যরা। গতকাল রোববার বিকাল ৪টার দিকে ঘুমধুমণ্ডতুমব্রু সড়কের ২০০ গজ দূরে ব্রিজের পাশে মর্টারশেল দুটি নিষ্ক্রিয় করা হয়। এ সময় জনসাধারণের চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়।

বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, গেল দু’দিন আগে তুমব্রু সীমান্তে ৩৯ পিলার সংলগ্ন জমিতে ও তুমব্রু বিওপি সংলগ্ন ব্রিজের উপর অক্ষত অবস্থায় অবিস্ফোরিত দুটি মর্টারশেল উদ্ধার করা হয়। সেটি সাধারণ মানুষের চলাচল পথ বন্ধ সড়কের পাশে নিরাপদ স্থানে রাখেন তুমব্রু বিওপি। রোববার বিকেল চারটা দিকে সেনাবাহিনীর বোমা বিস্ফোরক টিম এসে তুমব্রু সড়কের ব্রিজের পাশে উদ্ধারকৃত মর্টারশেল দুটি নিষ্ক্রিয় করে।

এ ব্যাপারে ঘুমধুম ইউনিয়নের সদস্য শফিকুল ইসলাম সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, উদ্ধারকৃত মর্টারশেল দুটি সেনাবাহিনীর বোমা বিস্ফোরক টিম এসে বিস্ফোরণের মাধ্যমে নিষ্ক্রিয় করে। বিস্ফোরণের সময় একটি বিকট শব্দ হলেও আরেকটির শব্দ শোনা যায়নি।

ঘুমধুম ইউপি চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, সীমান্তে পরিস্থিতি কিছু স্বাভাবিক হলেও মানুষের মধ্যে শংকা কাটেনি এখনো।

গত শনিবার সকালে ২টি অবিস্ফোরিত রকেট লাঞ্চার পাওয়া গেছে। যা লাল পতাকা দিয়ে ঘিরে রেখেছে বিজিবি। এর আগে আরো ২টি রকেট লঞ্চার পাওয়া গিয়েছিল। পরে তা নিষ্ক্রিয় করা হয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত