আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হলো তাবলিগ জামাত আয়োজিত এবারের বিশ্ব ইজতেমা। গতকাল রোববার বেলা ১১টা ১৭ মিনিটে শুরু হয় আখেরি মোনাজাত। নিজামুদ্দিনের অনুসারী ভারতের মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ কান্ধলভী মোনাজাত পরিচালনা করেন। মোনাজাত শেষ হয় বেলা ১১টা ৪৩ মিনিটে। এ সময় টঙ্গীর তুরাগ তীরে আমিন আমিন ধ্বনিতে কম্পিত হয় পুরো ইজতেমা ময়দান। তুরাগ তীরে সমবেত হয়ে লাখ লাখ মুসল্লি দেশ জাতি ও মুসলিম উম্মাহর ঐক্য-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন। আল্লাহর দরবারে দুই হাত তুলে ক্ষমা চেয়ে কান্নার বুক ভাসায় দেশ-বিদেশের লাখো মুসল্লি। গোটা দুনিয়ায় পথভ্রষ্ট মুসলমানের সঠিক পথে চলা এবং তাবলিগের কাজে সবাইকে নিয়োজিত হওয়ার তাওফিক কামনা করে মহান আল্লাহর রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত প্রার্থনা করা হয়। ইহলৌকিক ও পারলৌকিক কল্যাণ কামনায় দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লি স্রষ্টার দরবারে কান্নাকাটি করেন। লাখো কণ্ঠে উচ্চারিত হয় আমিন আমিন।
মোনাজাতে মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ বলেন, হে আল্লাহ সারা দুনিয়ার সব মোমিন-মোমিনাত নারী-পুরুষকে ক্ষমা করে দিন। আমাদের তওবাগুলোকে কবুল করে নিন। দুনিয়ার সব মানুষকে মঙ্গল ও কল্যাণ দান করুন। হে আরশের অধিপতি আমাদের ইসলামের প্রতি ঈমান দৃঢ় করে দিন। আমাদের হকের ওপর থাকার তৌফিক দিন। বাতিলকে ধ্বংস করে দিন। দুনিয়ার সব ফিতনা থেকে আমাদের হেফাজত করুন। সব মানুষের কল্যাণ দান করুন। আমাদের জান্নাত দান করুন আর জাহান্নামের ভয়াবহ শাস্তি থেকে মুক্তি দিন। দীর্ঘ এ মোনাজাতে তিনি বিশ্ব শান্তি ও সম্প্রতির আর্জি জানিয়ে বলেন, হে আমাদের রব আপনি বড় মেহেরবান। আপনি আমাদের প্রতি রহম করুন। আমাদের সব গুনাহ মাফ করে দিন। আপনার ভালোবাসা আর ভয় অন্তরে দিয়ে দিন। আমরা দুর্বল আমাদের সক্ষম করে দ্বীনের কাজে নিন। আমাদের ওপর রাজিখুশি হয়ে যান। সারা দুনিয়ার আলেমদের হেফাজত করুন। দুনিয়ার সব পেরেশানি থেকে আপনার বান্দাদের মুক্তি দিন। হে আমাদের রব এ ইজতেমাকে কবুল করুন। যারা বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছে তাদের সবাইকে মাফ করে দিন। তাদের ওপর রাজি হয়ে যান। ইখলাসের সঙ্গে এবাদত করার তৌফিক দিন। মসজিদগুলোকে আবাদের শক্তি দিয়ে দিন। সাহাবিওয়ালা একীন আর নবীওয়ালা জীবন দিন। আমাদের সব কাজকে সহজ করে দেন। সব কঠিন অসুখ থেকে আমাদের হেফাজত করুন। এর আগে গতকাল বাদ ফজর বয়ান করেন ভারতের মাওলানা মুফতি মাকসুদ। পরে তার বয়ান বাংলা তরজমা করেন মাওলানা আব্দুল্লাহ। এর পরই হেদায়াতের বয়ান ও আখেরি মোনাজাত শুরু হয়। প্রতি বছর গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীরে অনুষ্ঠিত হয় এই বিশ্ব ইজতেমা। দেশের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসুল্লি টঙ্গীর তুরাগ তীরে ইজতেমায় অংশ নেন। এছাড়া সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, কাতার ও আফগানিস্তানসহ বিভিন্ন দেশের হাজার হাজার মুসুল্লি বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নেন। এক ময়দানে থাকাণ্ডখাওয়া এবং রাত্রিযাপনসহ আল্লাহকে রাজি খুশি করাতে আমল করেন এসব মুসল্লিরা। ইজতেমা ময়দানে বসে শুনেন বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় সব মাওলানাদের বয়ান। তাবলিগ জামাত আয়োজন করে এই বিশ্ব ইজতেমার। এটি ৫৭তম বিশ্ব ইজতেমা। দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হয় বিশ্ব ইজতেমা। প্রথম পর্বে শুরায়ে নিজাম অনুসারী মুসল্লি এবং দ্বিতীয় পর্বে নিজামুদ্দিন অনুসারী মুসল্লিরা বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নেন।
গত ১ ফেব্রুয়ারি আম বয়ানের মধ্যদিয়ে শুরু হয় বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। পরে ৪ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতে শেষ হয় প্রথম পর্বের আনুষ্ঠানিকতা। এরপর গত ৮ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় দ্বিতীয় পর্বের আনুষ্ঠানিকতা। আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে গতকাল রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) শেষ হলো এবারের বিশ্ব ইজতেমা। আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে গতকাল সকাল থেকেই গাজীপুরসহ আশপাশ জেলা এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মুসল্লিরা আসতে শুরু করে ইজতেমার ময়দানে। অনেকেই তুরাগ নদীতে নৌকায় বসে বিভিন্ন কলকারখানা ও বাসা বাড়ির ছাদে মহাসড়কের ওপর ফ্লাইওভারসহ বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে দুই হাত তুলে ফরিয়াদ জানান আল্লাহ দরবারে। সকাল থেকেই ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা বাস, ট্রাক, পিকআপ, অটোরিকশা, ট্রেন ও নৌকাসহ বিভিন্ন যানবাহনে এবং পায়ে হেঁটে ইজতেমা ময়দানে আসেন। হেদায়েতের বয়ান শেষে শুরু হয় আখেরি মোনাজাত।
নিজামুদ্দিনের অনুসারী বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের মিডিয়া সমন্বয়কারী মোহাম্মদ সায়েম জানান, দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লির আগমনে ভরে যায় ইজতেমার ময়দান। শান্তিপূর্ণভাবেই আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হলো এবারের বিশ্ব ইজতেমা। বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে অংশ নেয়া সাত মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে।
